ব্যাংকের অর্থ ফেরত দেয়ার চাপে আইসিবি

প্রকাশ: মে ১৫, ২০২২

মেহেদী হাসান রাহাত

বিভিন্ন উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছ থেকেই বড় অংকের অর্থ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে বর্তমানে ঋণ আমানত হিসেবে নেয়া অর্থ পরিশোধ করতে গিয়ে বেশ চাপে পড়েছে আইসিবি। অর্থ সংগ্রহের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারে শেয়ারও বিক্রি করতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে।

বছরের ৩১ মার্চ শেষে সরকার বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে আইসিবির নেয়া স্বল্প দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। সময়ে বিভিন্ন ব্যাংক, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেয়া আমানতের পরিমাণ ছিল হাজার ৩১১ কোটি টাকা। এসব ঋণ আমানতের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়মিত সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে।

গত বছরের জুলাই থেকে বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে সরকারের কাছ থেকে নেয়া ধারের ৬০ কোটি, সোনালী ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকার আমানত ৪৯ কোটি টাকার কল মানি ঋণ, সাধারণ বীমা করপোরেশনের ৩৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকার আমানত এবং জনতা ব্যাংকের ১৮৮ কোটি টাকার কল মানি ঋণ পরিশোধ করেছে আইসিবি। সব মিলিয়ে সময়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ৫৩৬ কোটি টাকা ঋণ আমানতের অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে। অন্যদিকে সময়ে অগ্রণী ব্যাংকের কাছ থেকে ৩২ কোটি টাকা কল মানি ঋণ জনতা ব্যাংকের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকা আমানত হিসেবে নিয়েছে আইসিবি।

বছরের মার্চ শেষে আইসিবির কাছে মেয়াদি আমানত বাবদ সবচেয়ে বেশি হাজার ৩০০ কোটি টাকা রেখেছে সোনালী ব্যাংক। এছাড়া ব্যাংকটি ৭৯ কোটি টাকা কল মানি ঋণও দিয়েছে। অগ্রণী ব্যাংক আমানত হিসেবে হাজার ৫০ কোটি কল মানি ঋণ বাবদ আরো ৩২ কোটি টাকা দিয়েছে আইসিবিকে। জনতা ব্যাংকের আমানত হিসেবে ৫৮০ কোটি কল মানি বাবদ ১২ কোটি টাকা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কাছে। এছাড়া বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) ২৮৭ কোটি সাধারণ বীমা করপোরেশনের ২৭১ কোটি টাকার আমানতও গচ্ছিত রয়েছে আইসিবির কাছে।

বছরের ২৭ এপ্রিল সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে ৫৬৫ কোটি টাকা সমন্বয় করার জন্য আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দেয়া হয়। এতে বলা হয়, আইসিবির অনুকূলে ফান্ড প্লেসমেন্ট খাতে পাঁচটি হিসাবে সোনালী ব্যাংকের মোট হাজার ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে এক্ষেত্রে একক গ্রাহক ঋণসীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ রয়েছে ৫৬৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইসিবিতে ফান্ড প্লেসমেন্ট খাতে সোনালী ব্যাংকের বিনিয়োগকে পুঁজিবাজারে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ

হিসেবে চিহ্নিত করে বেশকিছু নির্দেশনাসহ বিনিয়োগ নবায়নের ক্ষেত্রে শর্ত আরোপ করেছে। শর্ত অনুসারে ফান্ড প্লেসমেন্ট খাতে বিনিয়োগ প্রতিবার নবায়নের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত রোল ওভার করা যাবে। সে অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্ত পরিপালনের জন্য বিনিয়োগ নবায়নের আগেই একক গ্রাহক ঋণসীমা অনুসারে অতিরিক্ত বিনিয়োগ ৫৬৫ কোটি টাকা সমন্বয় করার জন্য আইসিবিকে অনুরোধ জানিয়েছে সোনালী ব্যাংক।

অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয়ের জন্য সোনালী ব্যাংকের চিঠি পাওয়ার পর থেকেই বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে আইসিবি। সোনালী ব্যাংক ছাড়াও কর্মসংস্থান ব্যাংক অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সুদসহ কিস্তির অর্থও দিতে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে। সব মিলিয়ে মাসের মধ্যেই প্রায় ৭০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। এরই মধ্যে অর্থ সংগ্রহের জন্য পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রি করেছে আইসিবি। বিশেষ করে -১১ মে সময়ে পুঁজিবাজারের প্রচলিত ব্লক মার্কেটে এসিআই ফর্মুলেশনের প্রায় ৯৩ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার সিংহভাগই আইসিবি বিক্রি করেছে। অন্যদিকে শেয়ারের বড় অংশই কিনে নিয়েছেন পুঁজিবাজারের আলোচিত বিনিয়োগকারী সরকারি কর্মকর্তা সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক মো. আবুল খায়ের হিরু। এছাড়া পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক নিম্নমুখিতার সময়ে আইসিবি শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি করেছে বেশি। কারণে গত সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাখ্যাও তলব করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ব্যাংকের অর্থ পরিশোধের চাপের পাশাপাশি শেয়ার বিক্রি করার কারণে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার বিষয়টি নিয়ে বেশ চাপের মধ্যেই রয়েছে আইসিবি।

বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, সোনালী ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে মাসের মধ্যেই প্রায় ৭০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। শেয়ার বিক্রি অন্যান্য উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করেই তা পরিশোধ করতে হবে। তবে আমরা চেষ্টা করছি পুরো অর্থ একসঙ্গে পরিশোধ না করে ধাপে ধাপে করা যায় কিনা। যদি ব্যাংকগুলো আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয় তাহলে অর্থ পরিশোধের চাপ অনেকটাই লাঘব হবে। কিন্তু ব্যাংকগুলো রাজি না হলে আইসিবিকে বেশ চাপে পড়তে হবে।  


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫