পাঠকমত

ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ব্যবস্থা নিন

প্রকাশ: এপ্রিল ২৯, ২০২২

ঈদ সামনে রেখে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকা ছাড়ে। বাড়তি চাপ পড়ে সড়ক ব্যবস্থার ওপর। ঘটে অনেক দুর্ঘটনা। সম্প্রতি বুয়েটের একদল গবেষক তাদের গবেষণায় উল্লেখ করেছেন, এবারের সড়ক ব্যবস্থার অবস্থা আরো খারাপ হবে। ঈদযাত্রা কীভাবে নিরাপদ করা যায়, তা নিয়ে লেখা পাঠিয়েছেন অনেকে। সেখান থেকে নির্বাচিত কিছু লেখা নিয়ে সাজানো হলো আজকের পাঠকমত 

আমাদের দেশ ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য বছরে দুবারের ঈদ (রোজা কোরবানি) খুশির বার্তা বয়ে আনে। প্রতিটি ঈদ উদযাপন করতে গিয়ে ঢাকা মহানগরের অন্তত ৭০ শতাংশ শ্রমজীবী, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে নাড়ির টানে চরম ঝুঁকি নিয়ে সড়ক-রেলপথ-নৌপথে যার যার গন্তব্যে যাত্রা করতে হয়। যাদের নিরাপত্তা বিধান সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। যদিও বিভিন্ন সূত্রমতে, এবারের ঈদযাত্রার নিরাপত্তা বিধানে সরকার প্রয়োজনীয় অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা গেছে। কয়েক দিন পরই বাস্তবে তা কতটুকু সম্ভব হয়েছে এটি পরিলক্ষিত হবে বা তার পরিসংখ্যান প্রকাশিত হবে।

উচ্চপর্যায়ের তদারকি সেল গঠনের মাধ্যমে যাত্রী ভোগান্তি কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সড়ক সেতুমন্ত্রী জনিয়েছেন, ঈদে মানুষের যাত্রা নিরাপদ করতে সরকার আন্তরিক, যাতে মানুষের ভোগান্তি না হয়। বিশেষত গত বছর করোনার ভয়াবহতার ফলে মানুষের ঈদযাত্রার কথা মনে হলে আমাদের আতঙ্কগ্রস্ত হতে হয়। ঘরমুখো মানুষের ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চ-ফেরিতে চলাচল যেন ছিল যুদ্ধের দৃশ্য। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ৫৫-৬০ কিলোমিটার রাস্তায় যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

লঞ্চ-স্টিমার-ফেরি-ট্রেনে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এই অনিয়ম রোধে আমরা পর্যন্ত কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখিনি! করোনাকালে পরপর দুই ঈদে বিশেষত ফেরি লঞ্চ পারাপার এবং ট্রেনে বিপুল যাত্রী বোঝাই করার করুণ দৃশ্য আমাদের চরম ঝুঁকিপূর্ণ দুর্দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়! মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে এটি রোধে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি পর্যাপ্ত নৌ পুলিশ, রেল পুলিশকে দিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ ভীষণ জরুরি। প্রয়োজনে মুহূর্তে ঈদ যাত্রাকালে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিরাপদ যাত্রায় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সাহায্য নেয়া যেতে পারে।  

ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহসহ সব মহাসড়কে গতবার ৫০-৬০ কিলোমিটার রাস্তায় যানজটের ভোগান্তি দেখা গেছে। নৌপথে লঞ্চ-স্টিমারে অতিমুনাফা লাভের আশায় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের প্রবণতা লক্ষ করা গেছে, অনেককে মৃত্যুমুখে পতিত হতে হয়েছে। অব্যবস্থাপনা যেকোনো মূল্যে রোধ করতে হবে। যদিও আকস্মিক দুর্ঘটনার ওপর কারো হাত নেই। এক্ষেত্রে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মতো রেল বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রবণতা রোধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব বাস-লঞ্চ-স্টিমারসহ সব পরিবহনে ভাড়ার তালিকা ঝোলানোর পাশাপাশি তা যথাযথ আদায় হচ্ছে কিনা এটি মনিটরিংয়ের নিশ্চয়তা বিধান করা এবং প্রয়োজনে আইন অমান্যকারীদের শাস্তি বা জরিমানা নিশ্চিত করা।

রেলযাত্রীদের ভোগান্তি রোধে শিডিউল বিপর্যয় বন্ধের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে বড় ধরনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটলে যাত্রীসেবার লক্ষ্যে মোবাইলে এসএমএস পাঠানোর ব্যবস্থা করা উচিত। শিডিউল বিপর্যয় রোধে রেল কর্তৃপক্ষকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। সব যাত্রীর এনআইডি কার্ডের ফটোকপি কর্তৃপক্ষের কাছে প্রদানের ব্যবস্থা রেখে যাত্রী বা তাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকা উচিত। সড়কে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী পরিবহনের চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে, কোনো গাড়ি হঠাৎ রাস্তায় বিকল হলে সেটি রেকার বা ক্রেন দিয়ে দ্রুত সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়া অবৈধ গাড়ি চলাচল বন্ধ ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। ঈদে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে রাস্তার ওপর নির্মিত দোকানপাট বাজার সরিয়ে নিতে হবে। বাজারের কারণে সাভার, টাঙ্গাইল, নবীনগর, চন্দ্রা, কারওয়ান বাজারের যানজট বন্ধ করা অপরিহার্য। জানা গেছে মাওয়া ঘাটে এখন ছয়টি ফেরি যাতায়াত করে। এছাড়া অন্যান্য ফেরি ঘাটের জন্য ডকইয়ার্ডে পড়ে থাকা ফেরিগুলো মেরামত করে হলেও পর্যাপ্ত ফেরির ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে ফিটনেসবিহীন ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।

যথাযথ নীতিমালা না থাকায় দেশের বিভিন্ন রুটে বা বিভিন্ন স্থানে লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা যেসব ফিটনেসবিহীন গাড়ি এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়ি চলাচল করানো হয়, তা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। তা না হলে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত থাকবে, যেটি কারোরই কাম্য নয়।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে রেলযাত্রীদের ভোগান্তি এড়াতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যাত্রী সংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধির কারণে কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ট্রেনসহ ট্রেনের বগির সংখ্যা বাড়াতে হবে। ট্রেনের টিকিটের চোরাচালান কালোবাজারি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে প্রকৃত যাত্রী টিকিট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ভোগান্তিতে না পড়ে। এছাড়া ঈদের চার-পাঁচদিন আগে থেকে শুধু যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে কনটেইনার বা জ্বালানি তেলের পণ্যবাহী ট্রেন সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।

কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ট্রেনসহ বগির সংখ্যা বাড়াতে হবে। বিগত বছরগুলোয় করোনা ভয়াবহ থাকাকালীন যাত্রীরা যেভাবে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছিল, এবার তার প্রতিকারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাস-ট্রেন-লঞ্চ-স্টিমার যাত্রীদের যাতায়াত অবাধ করার লক্ষ্যে উদ্যোগ নিতে হবে; যাতে ঈদযাত্রীরা পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়াপড়শি, মা-বাবা-সন্তানদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের পর আবার নির্বিঘ্নে বা নিরাপদে কর্মস্থলে ফিরে আসতে পারে।

 

হাসান-উজ-জামান: ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫