করোনা মহামারি

স্কুল বন্ধ থাকায় সাড়ে তিন কোটির বেশি শিক্ষার্থীর উপর নেতিবাচক প্রভাব

প্রকাশ: মার্চ ১৭, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা মহামারির সময় লকডাউন এবং স্কুল বন্ধ থাকার কারণে বাংলাদেশের কোটি ৬৫ লাখ শিক্ষার্থীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাবের মধ্যে রয়েছে শেখার ক্ষতি, ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি, এমনকি শিশুশ্রম বা বাল্যবিবাহের প্রবণতা বেড়ে যাওয়া। ইউনেস্কোর মতে, অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা, সশরীরে ক্লাসের অভাব সম্পূর্ণরূপে পূরণ করতে পারে না। তদুপরি, বিদ্যমানডিজিটাল বিভাজন মহামারির মধ্যে শিক্ষায় বৈষম্যকে আরও প্রকট করেছে।

গার্মেন্ট ওয়ার্কার ডায়েরিজ প্রকল্পের অংশ হিসাবে, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং মাইক্রোফিন্যান্স অপরচুনিটিজ (এমএফও) ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে বাংলাদেশের মূল পাঁচটি শিল্প এলাকায় (চট্টগ্রাম, ঢাকা শহর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, এবং সাভার) কর্মরত পোশাক শ্রমিকদের সম্পর্কে প্রতি মাসে তথ্য সংগ্রহ করছে। সানেম এবং এমএফও যৌথভাবে গত ১৩ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি ২০২২ এর মধ্যে হাজার ২৮০ জন গার্মেন্টস কর্মীর ওপর তাদের পরিবারের শিশুদের শিক্ষার বিষয়ে এই জরিপটি পরিচালনা করে। জরিপে অংশগ্রহণ করা গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যে মধ্যে ৭৬ শতাংশ নারী এবং ২৪ শতাংশ ছিলেন পুরুষ।   

চলমান করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে শিশুরা শিক্ষার ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে সেগুলির ওপর এই জরিপটি আলোকপাত করেছে। অনলাইন ক্লাসে শিশুদের অংশগ্রহণের হার, অংশগ্রহণ করতে বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হওয়া, অনলাইন ক্লাসের কার্যকারিতা এবং শেখার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা ইত্যাদি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে শিক্ষার ওপর করোনা মহামারির প্রভাব আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করেছে এই জরিপটি।

জরিপে অংশগ্রহণকারী গার্মেন্টস কর্মীদের পরিবারগুলির মধ্যে ৫৬ শতাংশ পরিবারে ১৯ বছরের কম বয়সী এক বা একাধিক শিশু রয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণ করা যেসব পরিবারে ১৯ বছরের কম বয়সী এক বা একাধিক শিশু রয়েছে, সেসব পরিবারের মধ্যে ৬১ শতাংশ পরিবারে অন্তত একজন স্কুলগামী শিশু রয়েছে। স্কুলগামী শিশু রয়েছে এমন পরিবারের মধ্যে ১১ শতাংশ জানিয়েছে, তাদের সন্তানদের স্কুল নিয়মিত অনলাইন ক্লাস নিয়েছে, ২৬ শতাংশ এর মতে স্কুল অনলাইন ক্লাস নিলেও তা নিয়মিত নয় এবং ৫৩ শতাংশ জানিয়েছে তাদের সন্তানদের স্কুল কোনও অনলাইন ক্লাস নেয়নি। এই পরিসংখ্যানের মাধ্যমে এটিই ষ্পষ্ট হয় যে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করার মত সক্ষমতা সব স্কুলের নেই।

অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণকারী শিশু রয়েছে এমন ৩১ শতাংশ পরিবারের মতে ক্লাসগুলি কার্যকর নয়। মাত্র ১৮শতাংশ পরিবার এগুলিকে কার্যকর বলে মনে করেছেন এবং ৫২ শতাংশ পরিবার অনলাইন ক্লাসের কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত নন।

স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার সম্পর্কে ধারণা পেতে, জরিপে গার্মেন্টস কর্মীদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে করোনা মহামারির পরে স্কুলে সশরীরে ক্লাস পুনরায় চালু হলে তাদের পরিবারের শিশুরা আবার পড়াশোনা চালিয়ে যাবে কিনা। উদ্বেগজনকভাবে, স্কুলগামী শিশু রয়েছে এমন শতাংশ পরিবার ধারণা করেছে যে তাদের পরিবারের কিছু শিশু বা সব শিশু মহামারির পরে তাদের পড়াশোনা আর চালিয়ে যাবে না। ঝরে পড়ার কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হল তারা এখন পড়াশোনার খরচ বহন করতে অক্ষম অথবা তাদের শিশুরা মহামারির সময় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে পড়ায় তাদের পক্ষে আর পড়াশোনায় ফিরে আসা সম্ভব নয়।

১৭ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন তাদের কারখানায় দিবাযত্ন কেন্দ্র রয়েছে। ৬২ শতাংশ কর্মী বলেছেন যে তাদের কারখানায় শিশুদের জন্য কোনও দিবাযত্নের ব্যবস্থা নেই এবং ২১ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন যে এরকম কোনো সেবা আছে কিনা সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নন। শিশুদের দিবাযত্ন কেন্দ্র রয়েছে এমন গার্মেন্টস কারখানাগুলির মধ্যে ৮৮ শতাংশ কারখানাতে মালিক দিবাযত্ন সেবার খরচ বহন করেন। গার্মেন্টস কারখানায় দিবাযত্ন কেন্দ্রের অনুপস্থিতিতে, গার্মেন্টস কর্মী যখন কাজ করেন তখন ৩১ শতাংশ কর্মীর সন্তানদের দাদা-দাদি বা নানা-নানি দেখাশোনা করেন, ১৯ শতাংশ কর্মীর সন্তানদের পাড়া-প্রতিবেশীরা দেখাশোনা করেন। ১৪ বছর বা তার কম বয়সী শিশু রয়েছে এমন ১২ শতাংশ পরিবারে যখন বাবা-মা কর্মস্থলে থাকে তখন বাচ্চাদের যত্ন নেয়ার জন্য কেউ থাকে না।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫