পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুতির প্রক্রিয়ায় থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি বেক্সিমকো সিনথেটিকস লিমিটেড বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৫৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার কেনার ঘোষণা দিয়েছে। দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে তালিকাচ্যুতি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এ ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি। উদ্যোক্তা পরিচালক বাদে অন্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রতি শেয়ার ১০ টাকা করে মোট ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৩টি শেয়ার কিনে নেবে বেক্সিমকো সিনথেটিকস।
কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের ৪ জানুয়ারি স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে তালিকাচ্যুতির প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের চুক্তি করে বেক্সিমকো সিনথেটিকস। তালিকাচ্যুতি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সাধারণ, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে থাকা কোম্পানিটির ৬৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ শেয়ার নগদ অর্থে কিনে নেয়া হবে। স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে পরিচালিত এসক্রো ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে প্রতি শেয়ারের বিপরীতে ১০ টাকা নগদে পরিশোধ করা হবে।
বেক্সিমকো সিনথেটিকস প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসার সময় প্রতি শেয়ার ১০ টাকা করে ইস্যু করেছিল। ২০২০ সালে ৮ সেপ্টেম্বর থেকে স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন বন্ধ হওয়ার আগে সর্বশেষ ৮ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল। সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ২ টাকা ৭৮ পয়সা। স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন বন্ধ হওয়ার আগের এক বছরে ভারিত গড় হারে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৪ টাকা ৮০ পয়সা। এর মধ্যে ১০ টাকা হচ্ছে সর্বোচ্চ দর এবং এ দরেই বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শেয়ার কিনে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তালিকাচ্যুতির প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিনিয়োগকারী বাছাইয়ের জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। এ সময়ের মধ্যে যেসব বিনিয়োগকারীর কাছে কোম্পানিটির শেয়ার ছিল তারাই শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন। অবশ্য ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর থেকে স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কোম্পানিটির সব সাধারণ, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশী বিনিয়োগকারীই তাদের কাছে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন।
পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুতির জন্য ২০২০ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কাছে আবেদন করেছিল বেক্সিমকো সিনথেটিকস। কিন্তু তালিকাচ্যুতির সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় এত দিন প্রক্রিয়াটি আটকে ছিল। এরপর বিএসইসির পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য ‘এক্সিট পরিকল্পনা’
করা হয়। এরই মধ্যে তালিকাচ্যুতির আবেদন গ্রহণ করে ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর থেকে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন স্থগিত রাখার জন্য দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর থেকেই দফায় দফায় কোম্পানিটির লেনদেন বন্ধের সময়সীমা বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত বছরের শেষের দিকে পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুতির জন্য আবারো আবেদন করে কোম্পানিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর তালিকাচ্যুতির আবেদন অনুমোদন করে বিএসইসি।
তালিকাচ্যুতির কারণ হিসেবে কোম্পানিটি বলছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ড্রন টেক্সচারড ইয়ার্ন (ডিটিওআই) নামে এক ধরনের পলিয়েস্টার সুতা উৎপাদন ও বিক্রির মধ্যেই কোম্পানির কার্যক্রম কেন্দ্রীভূত ছিল। তখন যেহেতু ডিটিওয়াইয়ের ব্যাপক চাহিদা ছিল ফলে কোম্পানিটিও ভালো মুনাফা অর্জন করে এবং ১৯৯৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে নিয়মিত লভ্যাংশ প্রদান করেছে। ২০১৩ সালের পর থেকে কোম্পানি কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেনি। এরপর থেকেই কোম্পানিটি খুবই কঠিন সময় পার করতে থাকে। ডিটিওয়াই আমদানির ওপর শুল্ক হ্রাসের কারণে বিদেশ থেকে আমদানীকৃত সস্তা ডিটিওয়াই বাজার দখল করে। এতে লোকসানে পড়ে কোম্পানিটি উৎপাদন কার্যক্রম ও কারখানা বন্ধে বাধ্য হয়। আইনানুযায়ী সব দেনা পরিশোধের পর সব শ্রমিক এবং বেশির ভাগ কর্মকর্তা ও স্টাফকে ছাঁটাই করে তারা।