পুতিনের দাবি

ইউক্রেনের সামরিক শক্তি প্রায় নিঃশেষ

প্রকাশ: মার্চ ০৬, ২০২২

বণিক বার্তা ডেস্ক

যুদ্ধ শুরুর দুই সপ্তাহেরও কম সময় পর এসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেছেন, ইউক্রেনের সামরিক শক্তি প্রায় নিঃশেষ হয়ে এসেছে। দেশটির সামরিক অবকাঠামো প্রায় ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে রুশ সেনাবাহিনী। রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা অ্যারোফ্লোটের কর্মীদের উদ্দেশে দেয়া এক টেলিভিশন ভাষণে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

রুশ প্রেসিডেন্ট সময় চলমান যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনের আগ্রাসী মনোভাবকেই দায়ী করেন। তিনি দাবি করেন, ইউক্রেনে হামলা শুরুর আগে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে বিবাদ মিটিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি। যুদ্ধ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া তার জন্য বেশ কঠিন ছিল। তার কথায়, পরিস্থিতিই তাকে দেশটিতে সামরিক হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য করেছে।

ডনবাস এলাকায় ইউক্রেনের সামরিক কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে পুতিন বলেন, ওই অঞ্চলে কিয়েভ বাহিনীর হামলায় ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৩-১৪ হাজার মানুষ মারা গেছে। সে বিষয়ে পশ্চিমারা নজর না দিয়ে একমুখী অবস্থান নিচ্ছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক হামলার বিশেষ নির্দেশনা মূলত দেশটির সামরিক কর্মকাণ্ড নািস মনোভাবকে নির্মূল করার জন্য দেয়া হয়। ডনবাস অঞ্চলের মানুষের রুশ ভাষায় কথা বলার নিশ্চয়তা দিতে এবং তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষার্থেই যুদ্ধের প্রয়োজন ছিল। চলমান যুদ্ধের মধ্যে সাধারণ নাগরিকদের উদ্ধারে বিশেষ করিডোর চালুর উদ্যোগ নেয়া হলেও কিয়েভ তার অনুমতি দিচ্ছে না।

এর আগে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দুই শহরে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয় রাশিয়া। গতকাল সকালে মারিওপোল ভলনোভাখায় মানবিক করিডোর চালুর ঘোষণা দিয়েছিল মস্কো। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের দশম দিনে এসে অবরুদ্ধ বোমাবর্ষণে বিধ্বস্ত শহর দুটি থেকে বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নিতেই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। তবে এমন ঘোষণার পরও রুশ বাহিনীর বোমাবর্ষণ অব্যাহত থাকার অভিযোগ তোলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। যদিও রাশিয়ার পক্ষ থেকে বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নিতে ব্যর্থতার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া রাশিয়ার আক্রমণ এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩ লাখ মানুষকে শরণার্থী করেছে। রুশ হামলার ভয়ে পালিয়ে যাওয়া ইউক্রেনীয়দের আশ্রয় দিচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো। তবে এখনো লাখ লাখ বেসামরিক লোকজন শহরগুলোয় অবস্থান করছে। পরিস্থিতি দেশজুড়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি করছে বলে সতর্ক করেছে দাতা সংস্থাগুলো।

গতকাল সকালে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, রুশ সৈন্যরা অবরুদ্ধ করে রাখা মারিওপোল ভলনোভাখা শহরের কাছে মানবিক করিডোর খুলেছে। তবে মারিওপোলের সিটি কাউন্সিল যুদ্ধবিরতি না মেনে শহরটিতে বোমা হামলা অব্যাহত রাখার অভিযোগ তোলে। পাশাপাশি বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়ার কার্যক্রমও স্থগিত রাখা হয়। শহরটির স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাশিয়া যুদ্ধবিরতি মানছে না। এজন্য তারা বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরে যেতে এবং সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আরো তথ্যের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছে।

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারিওপোলে গোলাবর্ষণের অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রাও। শহরের বাসিন্দা আলেকজান্ডার বিবিসিকে বলেছেন, আমি এখন মারিওপোলে আছি। এখানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়নি। আমি রাস্তায় আছি এবং - মিনিট পরপর গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছি। অনেকেই শহর ছাড়ার জন্য গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিল। তবে হামলা শুরুর পর

তারা আবার ফিরে আসছে। পরিস্থিতি আরো বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে বলেও জানান ৪৪ বছর বয়সী প্রকৌশলী।

যদিও হামলা অব্যাহত রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আরআইএর প্রতিবেদন অনুসারে, ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদীদের অভিযুক্ত করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা (ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদী) বেসামরিক নাগরিকদের চলে যেতে বাধা দিচ্ছে।

শুক্রবার রাতে দক্ষিণ-পূর্ব মারিওপোল বন্দরটিতে ভারী বোমাবর্ষণ করা হয়। রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেন ক্রাইমিয়া উপদ্বীপের মধ্যে অবস্থানের কারণে এটি মস্কোর কাছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়াকে নিজেদের দখলে নিয়েছিল রাশিয়া। জরুরি পরিস্থিতিতে সহায়তাকারী সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের একজন কর্মী বলেন, ওই রাতে গোলাগুলি আরো কঠিন কাছাকাছি ছিল। তখনো সেখানে বিদ্যুৎ, পানি মোবাইল ফোনের সংযোগ ছিল না। অঞ্চলটিতে খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে।

ইউক্রেন সরকার জানিয়েছে, মারিওপোল থেকে প্রায় দুই লাখ এবং ভলনোভাখা থেকে ১৫ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল। তবে বার্তা সংস্থা তাস রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, গতকাল শহরটি থেকে কেবল ১৭ জনকে সরিয়ে নেয়া হয়। যদিও কেউই ভলনোভাখা ছেড়ে যায়নি।

এদিকে সীমিত যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা সত্ত্বেও রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনে বিস্তৃত আক্রমণ অব্যাহত থাকবে। হামলার প্রথম থেকেই রাশিয়া দেশটির বেসামরিক লোকদের লক্ষ্যবস্তু করা বা তাদের ওপর আক্রমণের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। দেশটি হামলাকে বিশেষ সামরিক অভিযান বলে অভিহিত করেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগোর কোনাশেনকভ বলেন, রুশ বাহিনী সামরিক অবকাঠামোর ওপর হামলা চালাচ্ছে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দোনেেস্কর বাহিনী মারিওপোলের ঘেরাও আরো কঠিন করছে।

এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনজুড়ে মানবিক বিপর্যয়ের সতর্কবার্তা দিয়েছে ত্রাণ সংস্থাগুলো। গতকাল জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান বলেছেন, এখন পর্যন্ত ১৩ লাখ মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে। আজকের মধ্যে সংখ্যা ১৫ লাখে উন্নীত হতে পারে।

গতকালও তীব্র শীতে প্রায় হিমায়িত অবস্থায় নারী শিশুরা দক্ষিণ-পূর্ব পোল্যান্ডের মেডিকা চেক পয়েন্ট পাড়ি দিয়েছে। ইউক্রেনে প্রবেশ করা একজন লোক ভিড়ের মধ্যে চিত্কার করে বলেন, পুরুষদের ইউক্রেনে ফিরে যেতে হবে এবং যুদ্ধ করতে হবে।

ইউক্রেন বলেছে, রুশ বাহিনী ক্রাইমিয়ার সঙ্গে সংযোগ তৈরি করতে কিয়েভ দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভকে ঘিরে ফেলার প্রচেষ্টায় মনোযোগ দিয়েছে। দীর্ঘ একটি সাঁজোয়া বহর ইউক্রেনের রাজধানীর বাইরে কয়েক দিন ধরে স্তব্ধ হয়ে আছে। গতকাল ব্রিটিশ গোয়েন্দারা বলেছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রুশ বিমান হামলা কামানের গোলাবর্ষণের সামগ্রিক হার আগের দিনের তুলনায় কম ছিল। যদিও রুশ বহরটি ইউক্রেনের দক্ষিণে অগ্রসর হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন নিরাপত্তা মানবিক সহায়তা নিয়ে আলোচনা করতে পোল্যান্ড সফরে গেছেন। সেখানে তার পোলিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫