সংসদে প্রধানমন্ত্রী

বিএনপিকে লবিস্ট ফার্মে দেয়া অর্থের হিসাব দিতে হবে

প্রকাশ: জানুয়ারি ২৮, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থ পাচার করে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করতে লবিস্ট ফার্মে বিনিয়োগ করা কোটি কোটি ডলারের হিসাব বিএনপিকে দিতে হবে বলে সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল জাতীয় সংসদে শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিনে সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি লাখ লাখ ডলার লুট করেছে, কোটি কোটি ডলার তারা বিনিয়োগ করেছে। অর্থ তারা কোত্থেকে পেল এটা তো বৈদেশিক মুদ্রা। বৈদেশিক মুদ্রা তারা কোত্থেকে পেয়েছে, কীভাবে খরচ করেছে, কীভাবে তারা লবিস্ট রেখেছে, সেই লবিস্ট কিসের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর জন্য, নির্বাচন বানচাল করার জন্য, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য, জঙ্গিদের রক্ষার জন্য, জাতির পিতার হত্যাকারীদের রক্ষার জন্য, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সেটাকে বাধা দেয়ার জন্য। কোনো ভালো কাজের জন্য নয়।

তিনি বলেন, অসত্য তথ্য দিয়ে বিএনপি সবাইকে বিভ্রান্ত করে। অর্থ কোত্থেকে এসেছে, অর্থ কীভাবে বিদেশে গেল তার ব্যাখ্যা দিতে হবে।

নির্বাচন সামনে রেখে লবিস্টের অর্থের হিসাব দিতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ থেকে ক্ষমতায় থেকে জনগণের টাকা লুট করে, পাচার করে, সেই টাকা দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চক্রান্ত চলছে। যাদের দেশপ্রেম নেই, জনগণের প্রতি যাদের দায় নেই, জনগণের মঙ্গল চায় না, তারাই বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থামাতে চায়।

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে, আস্থা আছে, ওইসব কথায় তারা বিভ্রান্ত হয় না। র্যাবের সাবেক বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে দেশটির কড়া সমালোচনা করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, আমাদের র্যাবের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমেরিকা স্যাংকশন দিয়েছে। যদি বলি কাদের ওপর এখন আমাদের বর্তমান আইজিপি তখন র্যাবের ডিজি ছিলেন। হলি আর্টিজানে যখন সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে, মানুষ হত্যা করে, নৃশংস দৃশ্য। পুলিশের দুজন অফিসার সেখানে ছুটে গেলে তাদের গুলি করে মেরে ফেলে। এরপর আমরা পদক্ষেপ নিই। সে সময় আমেরিকার যিনি রাষ্ট্রদূত ছিলেন তিনি টুইট করেছিলেন, হলি আর্টিজানের সন্ত্রাসী হামলা বাংলাদেশ একা সমাধান করতে পারবে না। রোজার দিন ছিল। সারা রাত আমরা কাজ করেছি। সাহরির সময় পর্যন্ত আমি বৈঠক করি। সবাইকে নিয়ে মিটিং করি। কী করা হবে, কীভাবে অপারেশন চালানো হবে। পরদিন সকাল ৯টার মধ্যে জিম্মিদের উদ্ধার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সফলতার সঙ্গে তাদের আক্রমণ মোকাবেলা করি। এর পরই আমেরিকার অ্যাম্বাসেডর টুইট সরিয়ে ফেলে। আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমন করেছি; যেটা বিএনপির সৃষ্টি। যাদের তারা (যুক্তরাষ্ট্র) স্যাংকশন দিল তাদের অধিকাংশ সন্ত্রাস দমনে ভূমিকা রেখেছিল। তাহলে এরা কেন আমেরিকার কাছে এত খারাপ হলো সবচেয়ে ভালো ভালো অফিসার যারা। আমি আমেরিকাকে দোষ দিই না। ঘরের ইঁদুর বাঁধ কাটলে কাকে দোষ দেব?

৭৫-পরবর্তী দেশে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল নির্বাচনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার জবাবও দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশন ইলেকশনএটাই তো প্রমাণ করে দেয় আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু হতে পারে এবং হয়। মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষা করা আমাদের কাজ, কেড়ে নেয়া নয়।

নির্বাচন কমিশন গঠনে পাস হওয়া বিল অধিবেশনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিলে ২২টি সংশোধনী বিরোধী দলের কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির সংশোধনী, বিএনপির সংশোধনী, জাসদের সংশোধনী, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সংশোধনীসবার সংশোধনী গ্রহণ করেছি। তাতে বিল আর সরকারি বিল না, এটা বিরোধী দলের তৈরি করা বিল হয়ে গেছে। একটা বিলে যদি ২২টি সংশোধনী গ্রহণ করা হয়, এটা অধিকাংশই তো হয়ে গেল বিরোধী দলের।

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার পর কারান্তরীণ দিনগুলোর কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সময় দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার বিষয়ে নিজের ভাবনার কথাও তুলে ধরেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি চিন্তা করেছিলাম, দেশটাকে আমি এভাবে পিছিয়ে যেতে দেব না।

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক বাধা, অনেক বিপত্তি, অনেক গুলি, অনেক গ্রেনেড অনেক কিছুই, অনেক অপপ্রচারআমি কখনো ওসব নিয়ে চিন্তা করিনি। আমি জানি, ন্যায় সত্য পথে থাকলে, একটা লক্ষ্য স্থির করে চললে, সে লক্ষ্য অর্জন করতে পারব। সেই লক্ষ্য আমরা অর্জন করতে পেরেছি।

করোনা মহামারীর কারণে অর্থনীতি কিছুটা পিছিয়ে গেছে বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা। তার মধ্যে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। এমনকি আমেরিকার মতো দেশে আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। কিন্তু আমি বলতে পারি, বাংলাদেশে কেউ দারিদ্র্যসীমার নিচে যায়নি করোনাকালে। বরং দারিদ্র্যের হার বিএনপি আমলের ৪০ ভাগ থেকে ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। আমি বিশ্বাস করি আমরা আরো কমাতে পারব।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫