বঙ্গবন্ধু মোংলা-ঘষিয়াখালী ক্যানাল

মাটি ফেলার স্থান সংকটে ব্যাহত হচ্ছে খননকাজ

প্রকাশ: জানুয়ারি ২৬, ২০২২

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, বাগেরহাট

মাটি রাখার জায়গা সংকটের কারণে বঙ্গবন্ধু মোংলা-ঘষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ ক্যানালের খননকাজ ব্যাহত হচ্ছে। পর্যাপ্ত জমি না থাকা স্রোতের কারণে দৈনিক ১৩ ঘণ্টার পরিবর্তে মাত্র - ঘণ্টা চলছে খননকাজ। মাটি সরিয়ে নেয়া মালিকানা জমি অধিগ্রহণ করে ড্রেজিং ব্যবস্থা সচল না রাখলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে খননকাজ। এতে বিরূপ প্রভাব পড়বে মোংলা বন্দরে জাহাজ আগমন নির্গমনে। যার প্রভাব পড়বে মোংলা বন্দর অঞ্চলের অর্থনীতির ওপর। তবে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল মতিন।

এদিকে খনন করা মাটি ক্যানালের দুই পাশে ফেলার কারণে মাটির উঁচু স্তূপ তৈরি হয়েছে। ফলে স্থানীয় বসবাসকারীদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পাশাপাশি ঝড়-বাতাসে কাদামাটি বালি ঢুকে স্থানীয় অনেক রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে স্থানীয়দের। জনবসতিপূর্ণ এলাকা বাদ রেখে জমি অধিগ্রহণ করে খননকৃত মাটি ফেলার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানায়, বালি পড়ে আমাদের ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এখানে থাকতে খুব কষ্ট হয়। সারা বছর এখানে নদী খনন চলে। খনন করে উত্তোলিত বালি আমাদের ঘরবাড়ির পাশেই রাখা হয়। কিছুদিন আগে টানা বৃষ্টিতে বালি আটকে রাখার বাঁধ ভেঙে যায়। এতে গ্রামের ঘর-বাড়ি, মাছের খামার সব বালিতে তলিয়ে যায়। জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তারা শুধু দেখে যান আর আশ্বাস দেন। কিন্তু আমাদের অবস্থার পরিবর্তন হয় না। আমরা চাই বালি যেন অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে আমাদের ভোগান্তি দূর করা হয়।

মোংলা-ঘষিয়াখালী ক্যানাল রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব এমএ সবুর রানা বলেন, সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ড্রেজিং করছে। আবার কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ক্যানালের দুই পাড়ে নিজেদের স্থাপনা তৈরির জন্য জমি দখল করে রেখেছে। ফলে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ মাটি ফেলার জায়গা পাচ্ছে না। খননকাজ যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য সরকারের জরুরি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। তবে খননকাজ অব্যাহত না রাখা হলে মোংলাবন্দর সুন্দরবনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে দাবি করেন ক্যানাল রক্ষা কমিটির নেতা।

ড্রেজিং প্রতিষ্ঠানের সাইট ইঞ্জিনিয়ার গোপীনাথ দাস বলেন, আমাদের প্রতিদিন ১৬-১৮ ঘণ্টা ড্রেজার চালানোর সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু স্রোত বেশি থাকায় এবং প্রতিনিয়ত বড় ধরনের নৌযান চলাচলের কারণে - ঘণ্টার বেশি ড্রেজিং সম্ভব হয় না।

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী (পুর), মো. আনিছুজ্জামান বলেন, মোংলা-ঘষিয়াখালী ক্যানালের ড্রেজিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত স্যালিটেশনের কারণে ক্যানাল ভরাট হচ্ছে। পাঁচ-ছয় বছর ধরে আমরা ড্রেজিং করছি। ফলে নদীর আশপাশে আর কোনো খালি জায়গা নেই। এছাড়া রাস্তাঘাট না থাকায় ইচ্ছা করলেই যানবাহনের মাধ্যমে মাটি অন্যত্র নেয়া যাচ্ছে না। এর পরও আমরা দুই-তিনটি ডাইকের মাটি সরিয়েছি। এতে সাময়িকভাবে ড্রেজিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখা যাচ্ছে। কিন্তু  আমাদের দ্রুত বৃহৎ পরিকল্পনা প্রয়োজন। কারণ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান অনেক জায়গা দখল করে নিচ্ছে। ক্রমাগত জমি কমে যাচ্ছে। ফলে ড্রেজিং করা চ্যালেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে বলে জানান প্রকৌশলী। 

নাব্য সংকটে বন্ধ হয়ে যাওয়া মোংলা-ঘষিয়াখালী ক্যানালটি ২০১৪ সালের জুলাইয়ে পুনঃখনন কাজ শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ। পরের বছর মে নৌযান চলাচলের জন্য ক্যানালটি খুলে দেয়া হয়। তবে ক্যানালের নাব্য ঠিক রাখতে ড্রেজিং কাজ অব্যাহত থাকে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫