ডিজনি ওয়ার্ল্ডের কথকতা

প্রকাশ: জানুয়ারি ২৪, ২০২২

বণিক বার্তা ডেস্ক

ডিজনি ওয়ার্ল্ড সম্পর্কে যিনি জানেন, একবার হলেও তিনি এ স্বপ্নরাজ্যে যেতে চাইবেন। প্রতি বছর প্রায় কয়েক কোটি মানুষের পা পড়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় থিম পার্ক ডিজনি ওয়ার্ল্ডে। কিন্তু রাতারাতি আজকের এ অবস্থানে আসেনি এটি, সেজন্য পেরোতে হয়েছে দীর্ঘ পথ। 

ওয়াল্টার এলিয়াস ডিজনি, যিনি ওয়াল্ট ডিজনি নামেই সুপরিচিত। তিনি ছিলেন বিশ্বের প্রথম অ্যানিমেশন প্রোগ্রামার। এরপর তিনি নানা কাজে নিজেকে যুক্ত করেছেন। মার্কিন চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম জনপ্রিয় প্রযোজক, নির্দেশক, কাহিনীকার, নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী ও অ্যানিমেটর ছিলেন তিনি। কিন্তু তার জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি ছিল মিকি মাউস ও ডিজনি ওয়ার্ল্ড স্রষ্টা হিসেবে। ওয়াল্ট ডিজনির ইচ্ছা ছিল পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে আনন্দদায়ক একটা স্থান গড়ে তোলা। আর সে ভাবনা থেকেই তিনি গড়ে তোলেন ডিজনি ওয়ার্ল্ড। 

১৯০১ সালে শিকাগো শহরে জন্মগ্রহণ করেন ডিজনি। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ ছিল তার। ১৮ বছর বয়সে তিনি ইলাস্ট্রেটর হিসেবে চাকরি শুরু করেন। এর দুই বছর পর শুরু হয় তার হলিউড যাত্রা। সেখানে গিয়ে ভাই রয়ের সঙ্গে মিলে গড়ে তোলেন ডিজনি রয় স্টুডিও নামে একটি প্রযোজনা সংস্থা। ১৯২৮ সালে সেখান থেকেই ডিজনি মিকি মাউস চরিত্র সৃষ্টি করেন। প্রথম দিকে মিকি মাউস চরিত্রে কণ্ঠ দিতেন তিনি নিজেই। এ চরিত্রই তাকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।

১৯৪০ সালের শেষ দিকে ওয়াল্ট ডিজনি তার মেয়েদের নিয়ে লস অ্যাঞ্জেলসের গ্রিফিথ পার্কে যান। সেখান থেকে তার ভাবনায় আসে নতুন কিছু বানানোর চিন্তা, যেখানে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্করা যেতে পারবে আর আনন্দঘন মুহূর্ত কাটাতে পারবেন। যদিও সে সময় ডিজনি ওয়ার্ল্ড নিয়ে খুব একটা বিশদ পরিকল্পনা ছিল না তার। 

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৯৫৪ সালের ১৬ জুলাই ডিজনিল্যান্ডের নির্মাণকাজ শুরু হয় ছোট পরিসরেই, এর পরের বছরের ১৭ জুলাই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় সেটি। ডিজনিল্যান্ড নির্মাণে ব্যয় হয় ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ডিজনিল্যান্ডের ব্যাপক সফলতা থেকে ওয়াল্ট ডিজনি পরিকল্পনা করেন ক্যালিফোর্নিয়ার বাইরে আরো বড় পরিসরে ডিজনিল্যান্ডের কাজ করার। 

১৯৬৩ সালে ফ্লোরিডায় ৪৮ বর্গমাইল জমি কেনার পর ১৯৬৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘দ্য ফ্লোরিডা প্রকল্প’ নামে নিজের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন ডিজনি। কিন্তু এর পরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৬৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর মারা যান। তার মৃত্যুর পর তার ভাই এবং ব্যবসায়িক অংশীদার রয় ও ডিজনি ‘ম্যাজিক কিংডম’-এর নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেন। ১৯৭১ সালে ম্যাজিক কিংডম থিম পার্কের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রয় ও ডিজনি ঘোষণা করে, তার ভাই ওয়াল্ট ডিজনির সম্মানে ‘ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ড’ নামেই পরিচিতি পাবে রিসোর্টটি। 

১৯৭১ সালে ডিজনির ম্যাজিক কিংডমের প্রবেশ মূল্য ছিল প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাড়ে ৩ ডলার, আর ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য আড়াই ডলার। ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, বর্তমানে ডিজনিতে প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয় পর্যটকরা কতদিন থাকবেন তার ওপর। তিন বছরের কম বয়সীদের জন্য ডিজনিতে প্রবেশ ফি দিতে হয় না। আর তিন থেকে নয় বছর বয়সীদের প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৪ থেকে ১৫৪ ডলার। আর ১০ বছরের বেশি বয়স্কদের জন্য ১০৯ থেকে ১৫৯ ডলার। এছাড়া বিশেষ দিনের ওপর নির্ভর করেও ডিজনি ওয়ার্ল্ডের প্রবেশমূল্য বাড়ে-কমে। তবে প্রবেশমূল্য বেশি হলেও ডিজনির আবেদন কমে যায়নি মানুষের কাছে। 

ছোটবেলায় যাদের দেখে বড় হওয়া সেসব কাল্পনিক চরিত্রদের একসঙ্গে পাওয়ার একমাত্র স্থান ডিজনি ওয়ার্ল্ড। ছোট-বড় সব বয়সীর জন্য স্বর্গরাজ্য এই থিম পার্ক। সেখানে মিকি মাউস, মিনি মাউস, সিনড্রেলা, এরিয়েলসহ ডিজনির সব জনপ্রিয় চরিত্র আপনার সামনে থাকবে। ডোনাল্ড ডাক, গুফি, এলসাও এমনভাবে মাতিয়ে রাখবে যেন সবাই আপনার বহুদিনের পরিচিত বন্ধু। 

ডিজনি ওয়ার্ল্ডের বড় আকর্ষণ হচ্ছে ‘ম্যাজিক কিংডম’ আর ডিজনিল্যান্ডের অন্যতম আকর্ষণ ‘টয় স্টোরি ল্যান্ড’। অনেকের মতে, ডিজনিতে একদিন থেকে মন ভরে না। তাদের কথা আর ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা মাথায় রেখেই ডিজনিতে রয়েছে বিলাসবহুল রিসোর্ট ও ভিলা। এছাড়া বিলাসবহুল রেস্টুরেন্ট ও শপিং সেন্টারও রয়েছে ডিজনির স্বপ্নের পৃথিবীতে। 

কয়েক দিনের প্যাকেজ নিয়ে অফুরন্ত আনন্দে সময় কাটাতে চাইলে ডিজনির জুড়ি মেলা দায়। পৃথিবীর সেরা আনন্দভাণ্ডারের আর এক নাম ডিজনি ওয়ার্ল্ড। কভিড-১৯-এর ধাক্কায় পুরো বিশ্ব স্থবির হয়ে গেলে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল এ পার্ক। বর্তমানে সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ডিজনির মোহমায়া আবার আমন্ত্রণ করছে সবাইকে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫