কভিড-১৯

বাড়ছে রোগী ভর্তি প্রস্তুতির পরামর্শ

প্রকাশ: জানুয়ারি ২২, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা। সেই সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। চলতি মাসের শুরুতে যে সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তা বর্তমানে দ্বিগুণ হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে সংকটাপন্ন হওয়ার সংখ্যা কম। ভাইরাস রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে সংক্রমিত হলে রোগীর অবস্থা তেমন গুরুতর হচ্ছে না। তবে রোগী বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে শিগগিরই প্রাতিষ্ঠানিক স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। সে কারণে সব ধরনের প্রস্তুতি রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

সরকারের করোনাবিষয়ক তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দৈনিক রোগী শনাক্তের হার মাসের শুরুতে শতাংশ থাকলেও এখন তা ২৮ শতাংশের ওপরে উঠেছে। জানুয়ারির প্রথম দিন দেশের সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল সাড়ে আট হাজার। গতকাল তা ১০ গুণ বেড়ে দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা হয়েছে ৭০ হাজারের বেশি।

তবে বর্তমানে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মারাত্মক উপসর্গ না থাকায় তাদের বড় একটি অংশকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে না। তার পরও হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির হার বেড়েছে। চলতি মাসের শুরুতে যেখানে হাসপাতালের শয্যার শতাংশে কভিড রোগী ভর্তি ছিলেন, সেখানে এখন ১৫ শতাংশ শয্যা পূর্ণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে ১৩৬টি সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে কভিড রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এসব হাসপাতালে সাড়ে ১৩ হাজার সাধারণ শয্যা কভিড-১৯ রোগীদের জন্য নির্ধারিত। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১১ হাজার ৬৪১টি খালি ছিল। মোট হাজার ৮৫১টি শয্যায় রোগী ভর্তি ছিলেন। চলতি মাসের প্রথম দিন সংখ্যা ছিল ৭২৭টি। একইভাবে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যাগুলোতেও রোগীর হার বেড়েছে। মাসের শুরুতে ১১ শতাংশ আইসিইউ শয্যায় রোগী ভর্তি থাকলেও গতকাল ১৮ শতাংশ শয্যা পূর্ণ ছিল। পাশাপাশি হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটেও (এইচডিইউ) সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

রোগী শনাক্তের হারের মতো দ্রুতগতিতে হাসপাতালে রোগী ভর্তি না বাড়লেও অবস্থার অবনতি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা . মুশতাক হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, দৈনিক ৫০ হাজার রোগী শনাক্ত হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। এখন ক্রমবর্ধমান হারে রোগী শনাক্ত বাড়ছে। হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়বে। ভিড় বাড়লে প্রকৃতপক্ষে হাসপাতালের চিকিৎসা প্রয়োজন এমন রোগীরা শয্যা পাবেন না। তখনই সংকট তৈরি হবে। সে কারণে আইসোলেশন কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার ওপর জোর দিলেন বিশেষজ্ঞ। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়েও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেন তিনি।

হাসপাতালে রোগী ভর্তি কম থাকার স্বস্তি বেশিদিন স্থায়ী হবে না বলে আশঙ্কা করছেন সরকার গঠিত করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, শনাক্ত বেশি হলে হাসপাতালে রোগী বাড়বেই। গত বছর ১০ হাজার রোগী শনাক্ত হওয়ায় অনেক বেশি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। সংকট দেখা দিয়েছিল। বছর তেমনটি হচ্ছে না। ওমিক্রনে সংক্রমিত হলে রোগীর অবস্থা গুরুতর হয় না। তবে এতে বয়স্ক শিশুদের শারীরিক পরিস্থিতি সংকটাপন্ন হয়ে যায়। এখন আমাদের প্রস্তুতি রাখতে হবে।

হাসপাতালে ভর্তি সংকটের বিষয়টি ওমিক্রনের গতিবিধির ওপর নির্ভর করে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র লাইন ডিরেক্টর (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বণিক বার্তাকে বলেন, এখন হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা কম। আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে শয্যা এখনো রয়েছে। তবে রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে গেলে চাপ বাড়বে। আমরা সতর্ক অবস্থানে থেকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতির বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫