বিশ্বজুড়ে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার সাত কারণ

প্রকাশ: জানুয়ারি ২২, ২০২২

বণিক বার্তা ডেস্ক

মহামারীর বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বিশ্ব। বারবার কভিডের প্রাদুর্ভাব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কভিডজনিত বিধিনিষেধে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন কার্যক্রম। অব্যাহত রয়েছে সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতাও। সব মিলিয়ে ক্রমবর্ধমান রয়েছে মূল্যস্ফীতির পারদ। ফলে বিশ্বজুড়েই জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির বিশ্লেষণে উঠে এসেছে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার পেছনের প্রধান সাত কারণ।

ঊর্ধ্বমুখী জ্বালানির দাম

মহামারীর শুরুতে চাহিদা কমে যাওয়ায় পতন হয়েছিল জ্বালানির দামেও। তবে কভিডজনিত বিধিনিষেধে শিথিলের ফলে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দাম। জ্বালানি তেলের দাম সাত বছরের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি গ্যালন পেট্রলের দাম ডলার ৩১ সেন্টে। এক বছর আগেও দাম লাখ ৩৯ সেন্ট ছিল। চিত্র ইউরোপসহ বিশ্বজুড়ে একই। পেট্রলের পাশাপাশি গ্যাসের দামও ঊর্ধ্বমুখী। গত বছর ইউরোপে তীব্র শীত গ্যাসের মজুদ কমিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি এশিয়া থেকে শক্তিশালী চাহিদার কারণে বেড়েছে দাম।

পণ্য ঘাটতি

মহামারীতে দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্যের দামও বেড়েছে। গত বছর লকডাউনের সময় বাড়িতে আটকে থাকায় ভোক্তারা বিপুল পরিমাণ গৃহস্থালি বাড়ি সাজানোর পণ্য কিনেছে। কারণ তারা রেস্তোরাঁ বা ছুটি কাটাতে যেতে পারেননি। অন্যদিকে কভিডজনিত বিধিনিষেধে এশিয়ার মতো নির্মাতা কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিল। এরপর থেকে চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে নির্মাতাদের পণ্য সরবরাহে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্লাস্টিক, কংক্রিট স্টিলের মতো উপকরণের ঘাটতি দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। মাইক্রোচিপের সংকট বিশ্বজুড়ে গাড়ি, কম্পিউটারসহ অন্যান্য গৃহস্থালি সামগ্রীর সহজলভ্যতা কঠিন করে তুলেছে।

পণ্য পরিবহন ব্যয়

বিশ্বজুড়ে পণ্য ছড়িয়ে দেয়া শিপিং কোম্পানিগুলো মহামারীজনিত তীব্র চাহিদার মুখোমুখি হয়েছে। ফলে বেড়ে গেছে পরিবহন ব্যয়। এর মানে হলো, পণ্য পেতে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে খুচরা বিক্রেতাদের। আর সেই উচ্চ দাম গিয়ে পড়ছে ভোক্তাদের ওপর। এশিয়া থেকে ইউরোপে একটি ৪০ ফুট কনটেইনার পাঠাতে বর্তমানে ১৭ হাজার ডলার ব্যয় হচ্ছে। ব্যয় এক বছর আগের তুলনায় ১০ গুণ বেশি। সমুদ্রপথের পাশাপাশি উড়োজাহাজেও বেড়েছে পণ্য পরিবহন ব্যয়। পাশাপাশি ইউরোপে লরিচালকের ঘাটতি এবং যুক্তরাষ্ট্রে বন্দরগুলোয় দীর্ঘ পণ্যজট ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। ডিসেম্বরে পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হতে শুরু করলেও ওমিক্রনের সংক্রমণ আবারো শঙ্কা তৈরি করেছে।

বেতন বৃদ্ধি

মহামারীতে অনেক মানুষ চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে কিংবা পরিবর্তন করেছে। অবস্থায় বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে রেস্তোরাঁ এয়ারলাইনসসহ বিভিন্ন খাত কর্মী ঘাটতিতে পড়েছে। ৫০টি খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানে চালানো জরিপে উঠে এসেছে, ৯৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কর্মী নিয়োগ নিয়ে সমস্যায় পড়েছে। অবস্থায় বেতন বাড়িয়ে নতুন কর্মী আকৃষ্ট এবং পুরনো কর্মী ধরে রাখার চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। পাশাপাশি কর্মী ঘাটতি মোকাবেলায় বড় অংকের বোনাসও দিচ্ছে ম্যাকডোনাল্ডসের মতো অনেক প্রতিষ্ঠান। ফলে বেড়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয়। বৈশ্বিক পোশাক ব্র্যান্ড নেক্সট চলতি বছর ব্যয় বাড়ার পেছনে মজুরি বৃদ্ধিকে দায়ী করেছে।

জলবায়ুর প্রভাব

বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিরূপ আবহাওয়া মূল্যস্ফীতি বাড়াতে অবদান রেখেছে। হ্যারিকেন আইডা নিকোলাস মার্কিন জ্বালানি তেলের অবকাঠামোর ক্ষতি করায় বিশ্বজুড়ে তেল সরবরাহে প্রভাব পড়ে। পাশাপাশি গত বছর টেক্সাসে শীতকালীন প্রচণ্ড ঝড়ে কারখানা বন্ধ থাকায় চিপের ঘাটতি আরো প্রকট হয়েছিল। প্রাক এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক খরার কারণে বিশ্বের বৃহত্তম উৎপাদক ব্রাজিলের কফি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। ফলে বেড়ে যায় দাম।

বাণিজ্য বাধা

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের আলাদা হয়ে যাওয়া এবং পরবর্তী সময়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বাণিজ্যকে ব্যয়বহুল করে তুলেছে। কারণে গত বছরের প্রথমার্ধে ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের আমদানি প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমে গিয়েছিল। অন্যদিকে চীনা পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্কের কারণে দেশটির ভোক্তাদের উচ্চমূল্যে পণ্য কিনতে হচ্ছে। আবার গত বছর চীনা টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ে বলেছিল, প্রতিষ্ঠানটির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেশটির সরবরাহকারী বিশ্বজুড়ে গ্রাহকদের ওপর প্রভাব ফেলেছে।

প্রণোদনা সরবরাহ বন্ধ

কভিডজনিত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো নাগরিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রণোদনা সরবরাহ বন্ধ করে দিচ্ছে। সরকারি সহায়তার কারণে নাগরিকদের জীবনযাত্রা কিছুটা সহজও হয়েছিল। মহামারীতেও বেড়ে যায় জনসাধারণের ব্যয় ঋণের পরিমাণ। তবে বিশ্বজুড়ে প্রণোদনা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। পাশাপাশি বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সুদের হারও। ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বহনে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষরা।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫