ভ্রাম্যমাণ বৈদ্যুতিক জেনারেটর তৈরি করতে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছে জেনারেল মোটরস (জিএম)। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিদ্যুচ্চালিত যানবাহনের চার্জিং স্টেশন ও সেনাবাহিনীদের ক্যাম্পের জন্য বৈদ্যুতিক জেনারেটর তৈরি করবে মার্কিন গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। ঘোষণা অনুযায়ী, এ প্রকল্পগুলোয় জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ব্যবহূত হবে। বাজার গবেষকদের ধারণা, এর মাধ্যমে হাইড্রোজেন জ্বালানি কোষের বাজার বিস্তৃত করতে চাইছে প্রতিষ্ঠানটি। খবর এপি।
এক ঘোষণায় জিএম জানায়, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে বড় বড় বাণিজ্যিক ভবনে এ জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। অটোমোবাইল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের লিনডন শহরের ইয়ুটাহে রিনিউয়েবল ইনোভেশনসের জন্য জ্বালানি কোষ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। জ্বালানি কোষ বিদ্যুৎ ব্যবস্থার মাধ্যমে জেনারেটর ও র্যাপিড চার্জিং স্টেশন তৈরি করতে সক্ষম হবে সংস্থাটি।
সম্প্রতি জেনারেল মোটরস হাইড্রোজেন ব্যবসা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক চার্লি ফ্রিজ বলেন, পেট্রলচালিত জেনারেটর থেকে জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন অনেক কম শব্দ করে। পাশাপাশি এটির উপজাত শুধু পানি। তবে এখনই দামের বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। আগামী বছর থেকেই এর উৎপাদন শুরু হবে। হাইড্রোজেনচালিত জেনারেটর দিয়ে শুরুতে পুলিশ স্টেশনে বিদ্যুৎ সরবরাহের পাশাপাশি শিল্প-কারখানা ও কনসার্টে বিদ্যুৎ সঞ্চালনেও ব্যবহূত হবে।
চার্লি ফ্রিজ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান শহরে ব্রাউন্সটাউন টাউনশিপে একটি কেন্দ্রে হাইড্রোজেন জ্বালানি কোষ তৈরি করবে জেনারেল মোটরস। পরে তা থেকে জেনারেটর ইউনিট তৈরি করবে রিনিউয়েবল ইনোভেশনস।
প্রায় দুই দশক ধরে হাইড্রোজেন জ্বালানি কোষ নিয়ে গবেষণা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের কারনেজি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ক অধ্যাপক শন লিস্টার। তিনি বলেন, জেনারেল মোটরস ছাড়াও হাইড্রোজেন চালিত জেনারেটর তৈরির দিকে ঝুঁকছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাজ্যে অবস্থিত এএফসি এনার্জিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে নিরীক্ষা ও বিক্রয় পর্ব শুরু করে দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি গাড়িতেও জ্বালানি হিসেবে বিদ্যুৎ ব্যবহার হওয়ায় আগামীতে চাহিদা বাড়বে এ ধরনের জেনারেটরের। এছাড়া হাইড্রোজেন সুবিধা হলো দীর্ঘ সময়ের জন্য সঞ্চয় করে রেখে পরে ব্যবহার করা যায়।
বিশ্বের প্রায় ১২০ কোটি যানবাহনের বেশির ভাগেই জ্বালানি হিসেবে পেট্রল ও ডিজেল ব্যবহার করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মহাবিশ্বে হাইড্রোজেনের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। পরিবেশের জন্য হাইড্রোজেন ক্ষতিকরও না। তাই সম্প্রতি বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির সঙ্গে জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেনের কদর বাড়ছে। ট্রাক ও বাণিজ্যিক যানবাহন উৎপাদকরা হাইড্রোজেন জ্বালানি কোষ ব্যবহারে আগ্রহ প্রকশ করেছে। এছাড়া উড়োজাহাজ, রেলগাড়ি ও অন্যান্য যাত্রীবাহী গাড়ির উৎপাদকরাও হাইড্রোজেন জ্বালানি ব্যবহারে আগ্রহী। তবে হাইড্রোজেন তৈরি করার প্রক্রিয়ায় কখনো কখনো বাযুদূষণ হয়। এ বিষয়ে চার্লি ফ্রিজ বলেন, পরিবেশবান্ধব উপায়েই হাইড্রোজেন তৈরি করবে জেনারেল মোটরস।
তিনি জানান, বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি চার্জিং স্টেশন একবারেই চারটি গাড়ি চার্জ করতে পারবে। এছাড়া শব্দ কম হওয়ায় ও তাপের প্রয়োজনীয়তা কম হওয়ায় সেনাবাহিনীদের ক্যাম্পে হাইড্রোজেনচালিত জেনারেটর বেশ উপযোগী হবে।