আবারো ব্যর্থ চীন-ভারত সীমান্ত আলোচনা

প্রকাশ: জানুয়ারি ১৫, ২০২২

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভারত চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে গঠনমূলক আলোচনা হলেও তাতে কোনো ইতিবাচক ফল আসেনি। তবে ভারতের সেনাবাহিনী চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) কমান্ডার পর্যায়ের সংলাপ আরো একবার ব্যর্থ হয়েছে। যদিও উভয় দেশই গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজতে নতুন করে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে।

ভারতের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গত বুধবার লাদাখে অনুষ্ঠিত ভারত-চীন ১৪তম সামরিক সংলাপ ইতিবাচক ফল দিতে ব্যর্থ হলেও দুই দেশই লাদাখ সীমান্ত বিরোধ বিষয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজতে একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, সংলাপ অব্যাহত রাখতে শিগগিরই পরবর্তী রাউন্ড আলোচনা হবে। ভারতীয় পক্ষ স্পষ্টতই কংকা লার পাশে গোগরায় টহল থেকে পিএলএকে সরানোর ব্যাপারে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া দৌলত বেগ পুরনো সেক্টরের ডেপসাং বুলজে এবং ডেমচক সেক্টরের চার্ডিং নুল্লাহ জংশনে টহলবিষয়ক সমস্যাগুলো সমাধানে রাজি করাতে পারেনি।

ভারতের সেনাবাহিনী আপাতদৃষ্টিতে চীনের সেনাবাহিনী কর্তৃক শ্রীজাপ কমপ্লেক্সের পূর্বে প্যাংগং হ্রদের ওপর নির্মিত ব্রিজ ইস্যু উত্থাপন করেছে। এই ব্রিজ নির্মাণের উদ্দেশ্য হলো লাদাখ সীমান্তের ৫৯৭ কিলোমিটার জুড়ে দখলকৃত অকসাই চীন এলাকায় দ্রুত সেনা মোতায়েন সামরিকায়ন। বাস্তবতা হলো চীনের সেনাবাহিনীর নতুন সীমান্ত আইন, দ্রুত সামরিকায়ন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন তাদের হাজার ৪৮৮ কিলোমিটার সীমান্তকে নিয়ন্ত্রণ রেখায় রূপান্তর করেছে।

ভারত চীনের সেনাবাহিনী লাদাখ সীমান্ত জটিলতা বিষয়ে আটকে গেছে। শি জিনপিংয়ের সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের এককভাবে সীমান্ত পরিবর্তন-বিষয়ক নির্দেশনার পর থেকে অবস্থা চলছে। ২০২০ সালের মে মাসে লাদাখ নিয়ন্ত্রণরেখা বিষয়ে ১৯৫৯ কার্টোগ্রাফিক্যাল লাইন কার্যকর করার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে চীন। তার পর থেকে দুই পক্ষই মিসাইল, রকেট, আর্টিলারি, ট্যাংক রেজিমেন্টসহ পুরো তিন ডিভিশন সেনা মোতায়েন করে। এছাড়া বিমানবাহিনীকে স্ট্যান্ডবাই ফোর্স হিসেবে তৈরি রাখা হয়। ২০২০ সালের মে মাসে প্যাংগং হ্রদ, গ্যালওয়ান, গোগরা হট স্পিং এলাকায় শান্তি স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় প্রধান পর্যায়ে সম্পাদিত ১৯৯৩ ১৯৯৬ সালের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ভঙ্গ করে চীন।

একুশ শতকে চীনের নেয়া উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোম্যাসির অংশ হিসেবে এটিকে দেখা হচ্ছে। যদিও মোদি সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং লাদাখ নিয়ন্ত্রণরেখা বিষয়ে জটিলতা নিরসন না করা পর্যন্ত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে হিমাগারে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাউন্ডের সংলাপে চীন চায় বর্তমান অবস্থায় স্থির থাকতে। আর ভারতের পক্ষ থেকে আশা করা হয়েছে, বিরোধপূর্ণ এলাকা থেকে চীন নিজেকে সরিয়ে নেবে।

ভারত সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্র দ্য প্রিন্টকে জানিয়েছে, উত্তেজনা প্রশমনের যে উদ্দেশ্য নিয়ে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়, সে আশা পূরণ হয়নি। সংলাপ যতই অব্যাহত থাকুক ভারত-চীনের উত্তেজনাও অব্যাহত থাকবে। এটা বোঝাপড়ার ওপর নির্ভর করে। জুলাই ২০২০ সালে প্রথম হট স্প্রিং এলাকা থেকে চীন নিজেকে সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছিল।

সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য প্রিন্ট জানিয়েছে, লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার উভয় পাশে পরিকাঠামো নির্মাণের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো পক্ষের জন্যই ২০২০ সালের এপ্রিল-পূর্ব স্থিতাবস্থায় ফিরে যাওয়ার আশা করা অত্যন্ত কঠিন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা গুরুত্বপূর্ণ যে চীনকে বিশ্বাস করা যায় না। উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা জানান, যে অবস্থান থেকে এসে অবকাঠামো নির্মাণ করছে চীনকে সেই পূর্ববর্তী জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। চীন যা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে করেনি। বুধবারের আলোচনার ফোকাস পয়েন্ট ছিল, হট স্প্রিং থেকে চীনের বিযুক্ত হওয়া। এটিকে উত্তরাধিকার সমস্যা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি গত বছরের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত আলোচনার সময় বিতর্কের বিষয় ছিল।

আগের ত্রয়োদশতম আলোচনাটি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল। ওই সময় ভারতের পক্ষ থেকে দৃঢ়ভাবে নিয়ন্ত্রণরেখায় চীনের স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করতে বলা হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছিল, বৈঠকের সময় ভারতের পক্ষ থেকে অবশিষ্ট অঞ্চলগুলোর সমস্যা সমাধানের জন্য গঠনমূলক পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু চীনের পক্ষ থেকে তাতে সম্মতি ছিল না। এমনকি তারা অগ্রগতির জন্য কোনো প্রস্তাবও দেয়নি। অবস্থায় বৈঠক শেষ হলে অবশিষ্ট এলাকার সমস্যাগুলো আর সমাধান হয়নি।

এবারের আলোচনার তারিখ নিশ্চিত করার সময় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন দাবি করেন, সীমান্ত এলাকায় পরিস্থিতি সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভারত পরিস্থিতিকে জরুরি ব্যবস্থাপনা থেকে প্রাত্যহিক ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে নিতে কাজ করবে। জনগণের উদ্দেশে দেয়া বিবৃতিতে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে দৈনিক ভিত্তিক ব্যবস্থাপনার উল্লেখের মাধ্যমে চীন তাদের দখল অবকাঠামো নির্মাণকে গুরুতর ব্যাপার হিসেবে ভাবছে না। এমনকি এসব ইস্যুতে ছাড় দেয়ার মানসিকতাও রাখে না। এটি আগেরবারের আলোচনার সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ।

গত বছর সেপ্টেম্বরে চীনের স্টেট কাউন্সিলর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরকে বলেছিলেন, জরুরি অবস্থায় সাড়া দেয়ার পরিবর্তে চীন ভারতের উচিত বিতর্কিত সীমান্তের স্বাভাবিক ব্যবস্থাপনা।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫