মৈত্রী

বাংলাদেশ-ভারত অর্থনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর

প্রকাশ: ডিসেম্বর ১৮, ২০২১

ড. ফাহমিদা খাতুন

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গত পাঁচ দশকে এক বহুমাত্রিক পথ পাড়ি দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শক্তি জ্বালানি, যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সংস্কৃতির মতো নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বিস্তৃত। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যকার সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দুটি দেশের সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মোড় পরিবর্তন হয়ে নতুন এক মাত্রা লাভ করেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন উন্নতির কারণে তা সম্ভব হয়েছে।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আলোচনার ক্ষেত্রে পুরনো বিষয়গুলোর সঙ্গে যোগ হচ্ছে সম্পূর্ণ নতুন কিছু বিষয়। অনেক বিষয়ের ধরন অর্থনৈতিক রাজনৈতিক। আবার কোনো কোনোটির বিশেষ ভূরাজনৈতিক তাত্পর্য রয়েছে। কৌশলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অন্তর্নিহিত চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে উপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে উদ্ভূত সুযোগ গ্রহণ করতে হলে পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক থেকে দুটি পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সুবিধা লাভ করতে পারে: () দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মাধ্যমে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রসারিত করা এবং () সুবিধা কাজে লাগিয়ে আঞ্চলিক বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যুক্ত হওয়া। বাংলাদেশ যখন উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে এগোচ্ছে এবং একই সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকেও তার উত্তরণ ঘটছে, সে সময়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। পরিবর্তনের মুহূর্তে বাংলাদেশে তার নীতি কৌশল পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবেচনা করে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে পারে।

দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গত দশকজুড়ে আমরা বিভিন্ন খাতে নানা পদক্ষেপ দেখেছি। এসব খাতের মধ্যে পণ্য, সেবা জ্বালানি বাণিজ্য, বহুমাত্রিক পরিবহন মডেল, আন্তঃসীমান্ত যোগাযোগ, মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বৃদ্ধি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাণিজ্য বলতে এখন আর কেবল পণ্যভিত্তিক ব্যবসা বোঝায় না। সেখানে সেবা জ্বালানি বাণিজ্য একটি বিশেষ জায়গা দখল করেছে। স্বাস্থ্য শিক্ষা থেকে শুরু করে ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা, দক্ষতা বৃদ্ধি প্রযুক্তি স্থানান্তর ইত্যাদি বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যোগাযোগ পরিবহন ব্যবস্থায় সড়ক, রেল উপকূলীয় নৌ-যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে অবাধ বহুমুখী যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল) মোটরযান চুক্তি, নেপাল ভুটানের সঙ্গে ভারতের ট্রানজিট চুক্তি এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ট্রানজিট চুক্তির মধ্য দিয়ে উল্লিখিত চারটি দেশের মধ্যে অবাধ যোগাযোগের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মোংলা, চট্টগ্রাম পায়রা সমুদ্রবন্দরের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ একটি ত্রিপক্ষীয় হাইওয়ে প্রকল্পে যোগ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, যেখানে ভারত অন্যতম প্রধান সদস্য। এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে পূর্ব এশিয়ার সংযোগ স্থাপন সহজ হবে এবং বাংলাদেশের জন্য বিমসটেক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) সুবিধা পাওয়া সহজ হবে। ভারত বাংলাদেশকে তিনটি ঋণ (লাইন অব ক্রেডিট) দিয়েছে, যা বিলিয়ন ডলারের সমতুল্য। অর্থনৈতিক, সামাজিক, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে এটি সহায়তা করছে। ভারতের বেসরকারি খাত বাংলাদেশের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এসইজেড) আসতে আগ্রহী। এর মাধ্যমে পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগ উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে ধরনের ভৌত যোগাযোগকে বিনিয়োগ, বাণিজ্য উন্নয়নের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। সরকারি বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব আন্তঃরাষ্ট্রীয় যৌথ উদ্যোগের বিভিন্ন ক্ষেত্র চিহ্নিত করে তা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন, যাতে তা থেকে উপকৃত হওয়া যায়। সুতরাং বিভিন্ন ধরনের চলমান উদ্যোগের মধ্য দিয়ে কিছু সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন হতে পারে। বাংলাদেশের জন্য একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ভারতের শুল্কমুক্ত বাজার ব্যবস্থায় প্রবেশ করার যে সুযোগ রয়েছে সেটি ব্যবহার করা। সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ভারতে এক বিলিয়ন ডলারের রফতানি সীমা অতিক্রম করতে পেরেছে। কিন্তু এর পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বাংলাদেশের বাজারের প্রতি ভারতের বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করা সম্ভব।

তবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে আলোচনাটি বিস্তৃত করা গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সম্ভাবনা সুযোগের তুলনায় তার বাস্তবায়ন খুব সামান্যই। বিশ্বব্যাংকের হিসাবমতে, বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সম্ভাবনার আর্থিক পরিমাণ প্রায় ১৬ দশমিক বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আসলে হচ্ছে ১০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টি উদ্বেগজনক, বিশেষত ঘাটতির পরিমাণ যেখানে প্রতি বছর বাড়ছে। বাংলাদেশে ভারতের একটি বৃহৎ বিকাশমান বাজার রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সেখান থেকে এখন পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণে লাভবান হতে পারেনি। বৈশ্বিক বাজার থেকে ভারতের আমদানির মোট মূল্যমান প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ভারতে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ মাত্র বিলিয়ন ডলার। বাণিজ্য ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, তার কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হলো।

প্রথমত, বাণিজ্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বাণিজ্য সহজীকরণের অভাব লজিস্টিকস স্বল্পতার কারণে বাণিজ্যের সময়কাল দীর্ঘায়িত হয়। এটি ব্যবসায়ীদের নিরুৎসাহিত করে। গবেষণায় দেখা গেছে কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে ইউরোপ উত্তর আমেরিকার তুলনায় বাংলাদেশের বাণিজ্য খরচ বেশি। আরেকটি সমস্যা হলো, ভারতের পক্ষ থেকে অশুল্ক বাধা থাকার ফলে বাংলাদেশের পণ্য ভারতের বাজারে প্রবেশে বাধা পায়। ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের রফতানির ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি কাউন্টার ভেইলিং শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে এসবের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অশুল্ক বাধা হচ্ছে অপর্যাপ্ত বাণিজ্য সহজীকরণ ব্যবস্থা। এটি অবশ্য উভয় পক্ষের জন্য সত্য।

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের প্রায় অর্ধেকটাই দুই দেশের স্থলবন্দরের মাধ্যমে হয়। সীমান্তের পয়েন্টগুলো মূলত কন্ট্রোল চেক পয়েন্ট। সে কারণে পণ্য কেবলনো ম্যানস ল্যান্ডথেকেই বোঝাই খালাস করা হয়। কারণে বাণিজ্য দীর্ঘায়িত হওয়ার পাশাপাশি খরচ বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে গ্রহণযোগ্য কোনো চুক্তি নেই। ফলে পণ্যগুলো পরীক্ষণ জটিলতায় বন্দরে বহুদিন পড়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে বহুদূরের ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষা করে আনা হয়। কিন্তু এর ফলে অনেক সময় চলে যায়। কারণে বাণিজ্য, পরিবহন বিনিয়োগ সংযোগের মাধ্যমে ত্রিমুখী একীভূত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ফলে উৎপাদন নেটওয়ার্ক উন্নত করে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য অর্থনীতির স্বার্থ রক্ষা সহজ হবে।

বাণিজ্য অর্থনৈতিক বিষয়াদি ছাড়াও অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও কাজ করতে হবে। যেমন পানিসম্পদ খাতে সহযোগিতা পানি বণ্টন ব্যবস্থাপনা এবং রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলাসহ সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে সংকট উত্তরণের উদ্যোগ নিতে হবে। ভূরাজনৈতিক নিরাপত্তার অন্যতম ভিত্তি হলো শান্তি সম্প্রীতি। সীমান্তে নিরাপত্তা সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় দুই দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য নতুন করে কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি এখন অনেক উত্তেজনা সৃষ্টিকারী একটি বিষয়।

ভারত বাংলাদেশকে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (যা আগে ব্রিকস ব্যাংক ছিল) সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের পাশাপাশি এশিয়া ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) সদস্যপদের মাধ্যমে বাংলাদেশ আর্থিক সম্পদের জোগান পেতে পারে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলে ধরনের উৎস থেকে অর্থ জোগাড় করার প্রয়োজন বাড়বে।

দুই দেশের মধ্যে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর সম্পর্কিত চলমান আলোচনা ফলপ্রসূ হলে সহযোগিতার সম্ভাবনা অনেকে বেড়ে যাবে। সুতরাং এখানে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশকিছু ক্ষেত্র রয়েছে। কিন্তু ধরনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সুফল ভোগ করতে হলে দুটি দেশকেই এখনো আরো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এরই মধ্যে আমরা কিছু ইতিবাচকতা লক্ষ করছি। তিনটি বিশেষ ক্ষেত্রবাণিজ্য, বিনিয়োগ যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে। সুযোগগুলোর ব্যাপকতা উপলব্ধি করতে পারলে কেবল বাংলাদেশ ভারতের অর্থনৈতিক সম্পর্কই জোরদার হবে না, বরং একই সঙ্গে দক্ষিণ এশীয় সম্পর্কও শক্তিশালী হবে। কিন্তু সেখানেও বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে দুটি দেশ মোকাবেলা করবে তার ওপর তাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। বাণিজ্য যোগাযোগের দক্ষতা মূলত পরিবহন, বিনিয়োগ লজিস্টিক সংযোগের কার্যকারিতার ওপর নির্ভর করে।

সীমান্তে বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে বেশকিছু নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। স্থলবন্দরের কাস্টম স্টেশনে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং দুই দেশের কাস্টমস ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি বিভিন্ন কাগজপত্রের সংখ্যা কমানো হয়েছে। ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত নেপাল মোটরযান চুক্তির মাধ্যমে পণ্য বহনকারী যানবাহনগুলোকে সীমান্ত ধরে চলাচলের অনুমতি দেয়ার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে খরচ কমানো সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতের পশ্চিমাঞ্চল থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশ তার স্থলভাগ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।

ভারত থেকে গৃহীত ঋণের মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিবহন সীমান্ত পারাপারে উন্নত ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম লাইন অব ক্রেডিট ব্যবহার করে পদ্মা নদীর ওপরে একটি সেতু তৈরি করা হয়েছে। রেল যোগাযোগে সুবিধার পাশাপাশি সেতুর মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সহায়তা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারত থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আমদানি করেছে। এটি জ্বালানি ঘাটতি পূরণের ক্ষেত্রে সহায়ক, কেননা বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা সম্ভব হয় না।

ভারতীয় বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তিনটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) প্রস্তাব করেছে। একটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, একটি কুষ্টিয়ায় এবং অন্যটি বাগেরহাটে মেঘনার পাড়ে। রিলায়েন্স পাওয়ার বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশে তিন হাজার মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং একটি ভাসমান তরল প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানি কেন্দ্র তৈরি করা হবে। উন্নত অবকাঠামো বাণিজ্য সহযোগিতা, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি, কার্যকরী পরিবহন ব্যবস্থা এবং উন্নত মানের জ্বালানি নিরাপত্তা ইত্যাদি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে বলে ধারণা করা যায়।

এক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের সঠিক পন্থা অবলম্বন করতে হবে এবং সংকট সমাধানে দৃঢ় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সীমান্তে একক ব্যবস্থা ইলেকট্রনিক তথ্য বিনিময়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সীমান্তে কাস্টমস অনুমোদনের ক্ষেত্রে দুই দেশের কাস্টমস একই প্লাটফর্ম ব্যবহার করলে তথ্য আদান-প্রদান সহজ হবে এবং পণ্য পরিবহনকারী যানবাহন স্বল্প সময়ে সীমান্ত পারাপারের সুযোগ লাভ করবে।

এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে বিবিআইএন-মোটরযান চুক্তির অধীনে ঝামেলামুক্ত যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করা যাবে। উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রমাণপত্র, ল্যাবরেটরি টেস্টিং, মান নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম প্রযুক্তি ক্ষেত্রে পারস্পরিক স্বীকৃতি প্রদান ইত্যাদি বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অবশ্য জাতীয় মান নির্ধারণী প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা বাড়াতে হবে।

উভয় দেশই বিসিআইএম ইকোনমিক করিডোর প্রকল্পের সদস্য, যেখানে চীন একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। চীনের সঙ্গে উন্নয়ন অবকাঠামো তৈরি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি ভারসাম্যপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগিতাকে গুরুত্ব দেয়। সামনের দিনগুলোয় সহযোগিতা আরো সুদৃঢ় করার মাধ্যমে একটি উইন-উইন বা সবার জন্য উপকারী অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কৌশলগত সম্পর্ক তৈরি হবে, সেটিই বাংলাদেশের কাম্য।

 

. ফাহমিদা খাতুন: অর্থনীতিবিদ; নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫