জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। জোর দেয়া হচ্ছে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারে। চাপ বাড়ছে কয়লা ও জ্বালানি তেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের। এ অবস্থায় বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য জলবায়ু প্রমাণপত্র দাখিলের একটি প্রমিত কাঠামো তৈরির দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারী ও থিংক ট্যাংকগুলো। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা পরিষ্কার ধারণা পাবেন ও বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবেন। সামগ্রিকভাবে জ্বালানি রূপান্তরে প্রাথমিকভাবে বেসরকারি খাত নেতৃত্ব দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রয়টার্স গ্লোবাল মার্কেটস ফোরামকে বিনিয়োগকারীরা জানিয়েছেন, জ্বালানি রূপান্তরে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগগুলো ব্যাংক ও বেসরকারি খাতের মাধ্যমে নেয়া তহবিল, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ঋণ অর্থায়ন ও উন্নত দেশের অর্থায়নের মতো উৎস থেকে আসতে পারে।
আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংস্থার (আইআরইএনএ) মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে জ্বালানি রূপান্তর প্রযুক্তির জন্য প্রায় ১৩১ লাখ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। এর প্রায় ৮০ শতাংশ বেসরকারি খাত থেকে আসবে বলে আশাবাদী আইআরইএনএ। এ বিনিয়োগের মধ্যে ঋণ অর্থায়নের অংশীদারিত্ব ৬০ শতাংশে গিয়ে পৌঁছবে।
নরওয়েভিত্তিক স্বাধীন জ্বালানি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসটা এনার্জির বৈশ্বিক নবায়নযোগ্য বিভাগের প্রধান গেরু ফারুজিও বিশ্বাস করেন, জ্বালানি রূপান্তরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নেতৃত্ব দেবে। তিনি বলেন, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যেভাবে জ্বালানি সঞ্চয়ের সমাধান সরবরাহ করছে এবং প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্যভাবে বিনিয়োগ করছে, তা দেখে আমরা আশাবাদী।
৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলার সম্পদ পরিচালনা করা স্টেট স্ট্রিট গ্লোবাল অ্যাডভাইজরসের ইএসজি ও টেকসই বিনিয়োগ বিভাগের প্রধান কারেন ওং বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন সব বিনিয়োগকারীর জন্য একটি পদ্ধতিগত ঝুঁকি। বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিওগুলোকে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানোর দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা অন্যান্য তহবিলের সঙ্গে কাজ করছেন এবং জলবায়ু সম্পর্কিত লক্ষ্যগুলোকে একীভূত করতে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন।
বার্কলেস প্রাইভেট ব্যাংকের একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, পোর্টফোলিওগুলোর মধ্যে সামাজিক ও পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগের অংশ ২০২৭ সালের মধ্যে ৫৪ শতাংশে উন্নীত হবে। চলতি বছর এ হার ৪১ শতাংশ।
নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বেসরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি সরকারি বিনিয়োগও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিনিয়োগকারীরা বিশ্বাস করেন, সরকারি অর্থায়ন নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলোর ঝুঁকি প্রশমন প্রক্রিয়া তৈরিতে, বিনিয়োগগুলো আরো লাভবান করে তুলতে এবং আরো সুযোগ সৃষ্টি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
স্বাধীন থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের জ্বালানি রূপান্তর বিভাগের প্রধান ফিলিপ গ্যাস বলেন, জাতিসংঘের কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনে সম্মত হওয়া কার্বন নিঃসরণের নতুন নিয়মগুলো কিছু নির্দেশিকা সরবরাহ করে।
গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ কমিয়ে আনা, ভবিষ্যৎ নিঃসরণ এবং কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ নিয়ে একটি মানসম্মত কাঠামোর প্রত্যাশা করেন বিনিয়োগকারীরা। আর এ কাঠামো প্রণয়নের দায়িত্ব নিতে পারে ইন্টারন্যাশনাল সাসটেইনেবিলিটি স্ট্যান্ডার্ডস বোর্ড (আইএসএসবি)।
তবে তারা বলছেন, কোম্পানিগুলো কীভাবে স্থায়িত্ব পরিমাপ করে এবং দাখিল করে তা নিয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আগামী ৩০ বছরে প্রায় ৭০ শতাংশ পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন উদীয়মান বাজারে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্টেট স্ট্রিট গ্লোবাল অ্যাডভাইজরসের কারেন ওং বলেন, আমরা কেবল সক্ষমতা অনুযায়ী পরিমাপ করতে পারি। এজন্য কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানোর ক্ষেত্রে আদর্শ মান সবচেয়ে বড় বাধাগুলোর একটি মোকাবেলায় সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, আরো অনেক কোম্পানি একটি মানসম্মত কাঠামোর বিষয়ে প্রমাণপত্র দাখিল করবে। ফলে বিনিয়োগকারীরা আরো শক্তিশালী ও তুলনামূলক ডাটা পাবেন। এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোয় আরো টেকসই বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়িয়ে দেবে।