গত সপ্তাহের নিম্নমুখিতা কাটিয়ে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে দেশের পুঁজিবাজার। সপ্তাহ শেষে ১ দশমিক ৪ শতাংশ পয়েন্ট যোগ হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্সে। পাশাপাশি টাকার অংকে দৈনিক গড় লেনদেনও বেড়েছে এক্সচেঞ্জটিতে। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সপ্তাহ শেষে সূচক ও লেনদেন বেড়েছে। গত সপ্তাহে ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক খাতের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি দেখা গেছে।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক খাতের হিসাব বছর ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে। এ কারণে এসব খাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে বাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়াতে মার্জিন ঋণ নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। ফলে বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৯৬ পয়েন্ট। বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ৭ হাজার ৯২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে ডিএসইএক্স, আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৬ হাজার ৯৯৬ পয়েন্টে।
ডিএসইএক্সের পাশাপাশি গত সপ্তাহে ১৪ পয়েন্ট বেড়েছে ব্লু চিপ সূচক ডিএস-৩০। দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়ে সপ্তাহ শেষে ২ হাজার ৬৯৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে সূচকটি, আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ২ হাজার ৬৮১ পয়েন্টে। অন্যদিকে পাঁচ কার্যদিবসে ৩ পয়েন্ট বেড়েছে শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস। বৃহস্পতিবার ১ হাজার ৪৮০ পয়েন্টে অবস্থান করছিল সূচকটি, আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ১ হাজার ৪৭৭ পয়েন্টে।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেন আগের সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ বেড়েছে। গত সপ্তাহে স্টক এক্সচেঞ্জটিতে প্রতি কার্যদিবসে গড়ে ১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়, আগের সপ্তাহে যা ছিল ১ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে এক্সচেঞ্জটিতে মোট ৬ হাজার ৯৯২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৫ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। ডিএসইতে গত সপ্তাহে বেশির ভাগ শেয়ারের দর কমেছে। লেনদেন হওয়া ৩৮৪টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে সপ্তাহ শেষে দর বেড়েছে ১৭৩টির, কমেছে ১৯১টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৬টির বাজারদর।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেনের ২৫ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে ছিল ব্যাংক খাত। মোট লেনদেনের ১২ দশমিক ৪ শতাংশ দখলে নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত। এছাড়া ১২ দশমিক ৩ শতাংশ দখলে নিয়ে বিবিধ খাত তৃতীয়, ১১ দশমিক ৩ শতাংশ নিয়ে বস্ত্র খাত চতুর্থ আর ৫ শতাংশ দখলে নিয়ে প্রকৌশল খাত পঞ্চম অবস্থানে ছিল।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০ সিকিউরিটিজ ছিল যথাক্রমে বেক্সিমকো লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ওরিয়ন ফার্মা, এনআরবিসি ব্যাংক, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফরচুন সুজ, জেনেক্স ইনফোসিস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ও লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড।
সমাপনী দরের ভিত্তিতে ডিএসইতে গত সপ্তাহে দর বৃদ্ধির শীর্ষ কোম্পানিগুলো ছিল সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়ন ইনফিউশন, ব্র্যাক ব্যাংক, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ওয়ান ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এবি ব্যাংক ও জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড।
এদিকে গত সপ্তাহে ডিএসইতে দর কমার দিক দিয়ে শীর্ষ কোম্পানির তালিকায় ছিল ন্যাশনাল ফিড মিল, প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস, সায়হাম কটন মিলস, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, প্যাসিফিক ডেনিমস, ফু-ওয়াং ফুড, সাফকো স্পিনিংস মিলস, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং ও দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড।