মুজিব পরদেশীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হাসান মতিউর রহমান

সব গানের কপিরাইট আমার

প্রকাশ: নভেম্বর ১৬, ২০২১

মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ

১৩ নভেম্বর বণিক বার্তার টকিজ পাতায় জনপ্রিয় শিল্পী মুজিব পরদেশীর সাক্ষাত্কার ছাপা হয়। সাক্ষাত্কারে তিনি জনপ্রিয় গীতিকার হাসান মতিউর রহমানের নামে অভিযোগ তোলেন। মুজিব পরদেশী বলেন, আমার গান নিজের বলে দাবি করেন হাসান মতিউর রহমান, এটা খুবই পীড়াদায়ক। সাক্ষাত্কার ছাপার আগে বণিক বার্তার পক্ষ থেকে হাসান মতিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত ছিলেন বলে জানান। গতকাল হাসান মতিউর রহমান কথা বলেন বণিক বার্তার সঙ্গে। শুরুতেই শিল্পী মুজিব পরদেশীর দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেন, আমি বন্দী কারাগারে গানটি বরিশালের আবু নওশেদ ফারুকীকে দিয়ে রেকর্ড করিয়েছিলাম একটা ক্যাসেটে। ১৯৮১ সালে তিনি পাকিস্তান চলে যান। টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে গানটা বাজানো যাচ্ছিল না। শিল্পীও দেশে নেই। তখন আমি মুজিব পরদেশীকে দিয়ে গানটি নতুন করে রেকর্ড করিয়েছি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, গানকে পরদেশী নিজের বলে দাবি করেন। শুধু গানটাই না, কেমন করে পত্র লিখি রেসহ বিভিন্নজনের লেখা বেশকিছু গান পরদেশী সাহেব দাবি করেন, এগুলো তিনি লিখেছেন। এগুলো অযথা। মুজিব পরদেশী গান লেখেননি। তিনি গীতিকার নন। তিনি শিল্পী। তাকে দিয়ে আমি গান করিয়েছি। আমার কাছে সব দলিল আছে।

তিনি আরো বলেন, প্রথম দলিলটা করেছিলাম ১৯৮৭-৮৮ সালের দিকে। এরপর যখন ডিজিটাল কপিরাইট আইন হলো, আমি সবকিছু ঠিকঠাক করে মুজিব পরদেশীর বাসায় গিয়ে দলিল করে নিয়ে এসেছি। আমার সঙ্গে আরো দুজন গিয়েছিলেন। সম্মানী নিয়ে খুশিমনে তাদের দলিলসহ আমার দলিলে স্বাক্ষর করেছেন মুজিব পরদেশী।

তার পরও মুজিব পরদেশীর এমন দাবি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি আরো বলেন, আমি মুজিব পরদেশীকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসি। তিনি একজন শিল্পী। আমি গীতিকার। গুণীদের শ্রদ্ধা করি। আমি গান গাই না, কিন্তু লিখি। টুকটাক সুর করি। আমার কাজ শিল্পীদের নিয়ে। শিল্পীদের ব্যক্তিগতভাবে ভালোবাসি। কিন্তু মুজিব পরদেশী অপবাদ দিয়ে মানুষের সামনে আমাকে হেয় করেন কেন বুঝি না।

পরদেশীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কিনা জানতে চাইলে হাসান মতিউর রহমান বলেন, এসব কথা ওঠার পর আমার মনটা খুব খারাপ হয়েছে। আমি তো ব্যবসা করি। আমি বন্দী কারাগারে ক্যাসেটটা হিট হওয়ার পরে যদি ক্যাসেট বিক্রি করে লাভ করি সেটা কি আমার অপরাধ? কোনো নায়ক বা নায়িকাকে কোনো পরিচালক যদি ১০ হাজার টাকা দিয়ে সিনেমা বানিয়ে ১০ কোটি টাকা ব্যবসা করে এটা কি পরিচালকের অপরাধ? সেই নায়ক বা নায়িকা বরং খুশি হয়ে বলবে, আমার অভিনয় করা ছবিটা সুপারহিট হয়েছে। অথচ ক্যাসেটটা হিট হওয়ার পরে মুজিব পরদেশী আমার বিরুদ্ধে শুধুই অপপ্রচার করেন। আমার সামনে এসে কিন্তু কিছু বলেন না। বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়ান, টাকা দেয় না, পয়সা দেয় না। আমি তাকে ১৯৮৬ সালের বাজারের অবস্থা অনুযায়ী টাকা দিয়েছি। এরপর ক্যাসেটের ব্যবসা চলে গেছে। নতুন করে ডিজিটাল মাধ্যম এসেছে। নতুন আইন হয়েছে। আমি সংগঠক মানুষ, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এখন তাকে টাকা-পয়সা না দিলেও কিছু বলতে পারতেন না। তার পরও ভদ্রতার খাতিরে তার বাসায় গিয়ে ক্যাশ টাকা দিয়ে দলিল করে নিয়ে এসেছি। একেবারে বৈধভাবে দলিল করেছি। তিনি আমাকে প্রতিটি গান দলিল করে দিয়েছেন। আমি এটা নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না।

অডিও প্রতিষ্ঠান চেনা সুরের প্রতিষ্ঠাতা গীতিকার আরো বলেন, মুজিব পরদেশীর কথা শুনে অনেকে বলে, আপনি কিছু বলেন না কেন? আমি বলি পরদেশী ভাই আমার অন্তরের লোক। আমি তাকে অনেক ভালোবাসি। সারা পৃথিবীতে আমরা দুজন একসঙ্গে সুনাম অর্জন করেছি। আমিও তার কাছে ঋণী, তিনিও আমার কাছে ঋণী। এজন্য আমি তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিই না। কিছু বলি না। তিনি একতরফাভাবে এসব বলে বেড়ান। একটা দলিল তো সেই সময়েই করেছিলাম। পরে এগুলো ডিজিটাল দলিলও করিয়েছি। দলিলে কোন গান আমার লেখা, কোনটা অন্য কারো লেখা, কোন গানের গীতিকার কে সব লেখা আছে। কিন্তু গীতিকার হিসেবে মুজিব পরদেশীর কোনো নাম নেই। তিনিই বলেন আমি বন্দী কারাগারে একটা নাটকের গান। তাহলে বলুন, গানটা যদি নাটকেরই হয় তাহলে এটা তার হয় কী করে?

হাজারের অধিক গান লেখা গীতিকার আরো বলেন, আমি বন্দী কারাগারে গানটা বেদের মেয়ে জোছনা সিনেমায় ব্যবহারের জন্য তোজাম্মেল হক বকুল আমার থেকে লিখিত অনুমোদন নিয়েছেন। গানের গীতিকার হিসেবে আমি পুরস্কার পেয়েছি। এসব বলে বেড়ানোর কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু নিই না। কারণ মুজিব পরদেশীকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি।

পল্লীগীতির মৌলিকত্ব নিয়ে তিনি বলেন, মুজিব পরদেশী আমার অল্প কয়টা গান গেয়েছেন। শত শত গান গেয়েছেন এন্ড্রু কিশোর, মমতাজ, আশরাফ উদাস। আমার লেখা গানের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। তিন হাজার গান লিখতে গেলে কোনো কোনো গানের মুখ, অন্তরা কিংবা একটু আধটু মিলে যেতেই পারে। এটা আমি অস্বীকার করছি না। নিয়ে কেউ অভিযোগ করলেও সেটা সংশোধনযোগ্য। তাই বলে পুরো আরেকজনের গান আমার নামে এটা হতেই পারে না।

৩০ বছর ধরে গান লিখছেন জানিয়ে যদি রাত পোহালে শোনা যেত গানের গীতিকার বলেন, ৩০ বছর ধরে গান লিখছি। আজ পর্যন্ত কোনো গীতিকার কিংবা সুরকার বলেননি, গানটা তার। অথচ আমার নামে চালিয়েছি।

হাসান মতিউর রহমান সময়ের জনপ্রিয় একজন গীতিকার, সংগীত পরিচালক প্রযোজক। মন তোরে পারলাম না বুঝাইতে রে, পুকুরেতে পানি নাই, এবার না আসিলে বাড়িতে, আমার আল্লায় করবে তোমার বিচার, যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাইসহ অসংখ্য গানের গীতিকার তিনি। পেয়েছেন দেশ-বিদেশে শতাধিক পুরস্কার সম্মাননা।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫