চার সপ্তাহ ধরেই পুঁজিবাজারে টানা দরপতন চলছে। মাঝে দু-একদিন সূচকে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা গেলেও সার্বিকভাবে নিম্নমুখিতা বিরাজ করছে। গতকালও সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স কমেছে দশমিক ৮২ শতাংশ। পাশাপাশি দৈনিক লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমলেও লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রির প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। এর বিপরীতে শেয়ার কেনার চাপ কম। এতে ধারাবাহিক পতনের মুখে পড়েছে পুঁজিবাজার। পাশাপাশি বেশ কিছু ইস্যুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মধ্যে দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা দেখা যাচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ সাইডলাইনে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। সব মিলিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও ধারাবাহিকভাবে কমছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু হয় পুঁজিবাজারে। যদিও ২ মিনিট পরেই পয়েন্ট হারাতে থাকে সূচক। লেনদেন শুরুর ৫০ মিনিট পর সূচক ঘুরে দাঁড়ায় এবং ১১টা ৫০ মিনিটে ৩০ পয়েন্ট যোগ হয়। অবশ্য এর পর থেকেই শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়তে থাকে, যা লেনদেন শেষ হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ফলে দিনশেষে ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ৫৬ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৮০০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা আগের কার্যদিবসে ছিল ৬ হাজার ৮৫৬ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি বাংলাদেশ (বিএটিবিসি), বেক্সিমকো
ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক ও গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার।
ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিনশেষে প্রায় ৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৩৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে, যা আগের দিন ছিল ১ হাজার ৪৪৪ পয়েন্টে। ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে ১৫ পয়েন্ট কমে গতকাল ২ হাজার ৫৮৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিন শেষে যা ছিল ২ হাজার ৫৯৯ পয়েন্টে।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। এর আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৭৬টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিনশেষে দর বেড়েছে ৫৫টির, কমেছে ২৯৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২৬টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ দখলে নিয়েছে বস্ত্র খাত। ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক খাত। ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল বিবিধ খাত। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি খাতের দখলে ছিল ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। গতকাল একমাত্র তথ্য ও প্রযুক্তি খাত ছাড়া বাকি সব খাতের শেয়ারেই ঋণাত্মক রিটার্ন ছিল।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, জেনেক্স ইনফোসিস, এনআরবিসি ব্যাংক, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, আইএফআইসি ব্যাংক, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, বিএটিবিসি, লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট ও মালেক স্পিনিং মিলস।
সমাপনী দরের ভিত্তিতে গতকাল ডিএসইতে দর বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০ সিকিউরিটিজ ছিল সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স, গোল্ডেন সন, সাফকো স্পিনিং, আমরা নেটওয়ার্ক, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, ই-জেনারেশন, বেঙ্গল উইন্ডসর, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও জেনেক্স ইনফোসিস।
দেশের আরেক পুঁজিবাজার সিএসইতে গতকাল সিএসসিএক্স সূচক দিনের ব্যবধানে ১২৫ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ৯৩৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ১২ হাজার ৬২ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ২৮৩টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৩৮টির, কমেছে ২১৯টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২৬টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে মোট ৩৪ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ২৭ কোটি টাকা।