সাম্প্রদায়িক সহিংসতা

ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে সরকারের নানা উদ্যোগ

প্রকাশ: অক্টোবর ২২, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের উপর সহিংসতার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, নিরাপত্তা নিশ্চিত ও তাদের আস্থা বৃদ্ধিতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০ হাজার ৬১৯ জনকে অভিযুক্ত করে ১০২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫৮৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারেও অভিযান চলছে।

এরইমধ্যে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর তৈরি করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নগদ সহায়তা, খাদ্য, কাপড়, অন্যান্য নিত্য পণ্যসহ গৃহ নির্মাণ সামগ্রী দেয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে দেশজুড়ে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। ৩৭টি জেলা ও তিন মহানগরীতে মোট ১১৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ, র‌্যাব এবং সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী ইউনিটগুলোকে সতর্ক থাকতে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা রোধে সহায়তার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরইমধ্যে সহিংসতার প্রতিবাদে সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমাবেশ করেছে দলটি। দলের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, শিগগির আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেররে নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় টিম দেশের বিভিন্ন এলাকা সফর করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা, সংসদ সদস্য এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এদিকে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এবং জেলার জনপ্রতিনিধিদের সর্তক থাকার ও নিজ নিজ এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তি বজায় রাখতে যথাযথভাবে দায়িত্বপালনের নির্দেশ দিয়েছে। আগামী রোববার এ বিষয়ে একটি ভার্চুয়াল সভা করবে মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ইতোমধ্যে কুমিল্লায় যেখানে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ এসেছে সে এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

এছাড়া গত কয়েকদিনে প্রধান প্রধান ধর্মের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। শান্তি বজায় রাখতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুবাতাস ছড়িয়ে দিতে ধর্মীয় নেতা ও ইমাম নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মু. আ. আউয়াল হাওলাদার।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শিশু খাদ্য, গো-খাদ্যের পাশাপাশি নগদ ১০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দিয়েছেন।

দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারগুলোকে মানবিক সহায়তা হিসেবে ঘর নির্মাণে ১০০ বান্ডেল টিন, নগদ চার লাখ ৪৫ হাজার টাকা এবং এক হাজার ২০০ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছে বলে জানান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসিন।

রংপুর জেলা প্রশাসনও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নয় লাখ টাকার নগদ অর্থ ও ১০০ বান্ডেল টিন দিয়েছে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি তাৎক্ষণিকভাবে গৃহহীনদের আশ্রয়ের জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তাবু স্থাপন করেছে।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং প্রতিটি পরিবারকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা ও ২০ কেজি চাল সহায়তা দিয়েছেন। এছাড়া জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনসহ আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা রংপুরের পীরগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

সম্প্রতি কুমিল্লায় কোরআন অবমাননার অভিযোগ ওঠার পর সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালানো হয়।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫