চলতি টি২০ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের কাছে প্রথম ম্যাচে হেরে বাংলাদেশ দলের পরবর্তী রাউন্ডে উত্তরণ নিয়েই চরম শঙ্কা তৈরি হয়। তবে টানা দুই জয়ে সব উত্কণ্ঠা উড়িয়ে দিয়ে দাপটে সুপার ১২ রাউন্ডে জায়গা করে নিল বাংলাদেশ। গতকাল ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউগিনিকে ৮৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ১২ রাউন্ডের টিকিট নিশ্চিত করেছে টাইগাররা। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দুর্দান্ত পারফর্ম করে দলকে নিরাপদে পৌঁছে দেন।
বাংলাদেশ কাল মাঠে নেমেছিল নেট রানরেটের কথা মাথায় রেখে। কেননা শেষ মুহূর্তে দলের ভাগ্য নির্ধারণ হতে পারত এ নেট রানরেটে। যদিও পিএনজির বিপক্ষে বিশাল জয়ে বাংলাদেশের নেট রানরেট ১.৭৩৩ হয়ে পড়ায় সব অনিশ্চয়তা দূর হয়ে যায়। এতে ওমান-স্কটল্যান্ড ম্যাচ হয়ে পড়ে ‘নকআউট’। দুটি দলের পক্ষেই নেট রানরেটে বাংলাদেশকে টপকানো সম্ভব ছিল না। এ ম্যাচে ওমানকে (১২২) ৮ উইকেটে হারিয়ে ‘বি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সুপার ১২ রাউন্ডে উঠেছে স্কটল্যান্ড (১২৩/২)। বাংলাদেশ ‘বি’ গ্রুপ রানার্সআপ হিসেবে সুপার ১২ পর্বে ‘গ্রুপ ১’-এ খেলবে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ‘এ’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন দলের সঙ্গে। অন্যদিকে স্কটল্যান্ড ‘গ্রুপ ২’-এ খেলবে ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান ও ‘এ’ গ্রুপ রানার্সআপ দলের সঙ্গে।
২৪ অক্টোবর সুপার ১২ পর্বে বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ ‘এ’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকা। ‘এ’ গ্রুপের নিষ্পত্তি ঘটবে আজ। এদিকে আগামীকাল অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে সুপার ১২ রাউন্ডের লড়াই।
গতকাল টস জিতে আগে ব্যাটিং নেয়া বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ১৮১ রানের সৌধ গড়ে। জবাবে পাপুয়া নিউগিনি ১৯.৩ ওভারে ৯৭ রানে গুটিয়ে যায়। সাকিবের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে পাপুয়া নিউগিনিকে বড় ব্যবধানে হারাতে সমর্থ হয় বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে ৪৬ রান করার পর ঘূর্ণি বলের জাদুতে মাত্র ৯ রান দিয়ে তুলে নেন চারটি উইকেট। ম্যাচসেরার পুরস্কারও পেয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এ অলরাউন্ডার। ওমানের বিপক্ষেও তিনি ম্যাচসেরা হন।
সাকিব ছাড়াও দুর্দান্ত বোলিং করেছেন তাসকিন আহমেদ (২/১২), মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন (২/২১) ও মেহেদী হাসান (১/২০)। বাংলাদেশের বোলারদের অনবদ্য বোলিংয়ের মুখে একটি পর্যায়ে পিএনজি ২৯ রানে হারায় ৭ উইকেট। তাতে টি২০ বিশ্বকাপের ইতিহাসে নেদারল্যান্ডসের ৩৯ রানের সর্বনিম্ন স্কোরটা পড়ে হুমকির মুখে। যদিও কিপলিন দোরিগার হার না মানা ৪৬ রানে ভর করে শেষ পর্যন্ত ৯৭ রানে অলআউট হয় দ্বীপদেশটি।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বোর্ডে কোনো রান ওঠার আগেই আগের ম্যাচের সর্বোচ্চ স্কোরার নাইম শেখকে হারায় বাংলাদেশ। যদিও এ ধাক্কা সামলে শেষ পর্যন্ত বোর্ডে বড় সংগ্রহ জড়ো করতে সমর্থ হয় বাংলাদেশ। ভিতটা গড়ে দেন সাকিব ও লিটন দাস। দুজনের দৃঢ়তায় ৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪৫/১, যা এ পর্যায়ে সর্বশেষ আট ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশের সেরা সংগ্রহ। লিটন ২৩ বলে ২৯ রান করে ফিরে গেলেও সাকিব ছুটছিলেন।
লড়াকু ইনিংসে বেশ ক’টি সিঙ্গেলকে ডাবলে রূপ দেন সাকিব। ৩৭ বলে ৪৬ রানের ইনিংসে ছক্কা মেরেছেন তিনটি। এছাড়া অনবদ্য খেলেছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তিন বাউন্ডারি ও তিন ছক্কায় ২৮ বলে ৫০ রান করেন দলনায়ক। শেষদিকে আফিফ হোসেন ১৪ বলে ২১ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৬ বলে ১৯ রান করে দলের সংগ্রহটা বড় করতে সাহায্য করেছেন। পিএনজির কাবুয়া মোরেয়া, ড্যামিয়েন রাভু ও আসাদ ভালা দুটি করে উইকেট নেন।
বিরাট স্বস্তির এ জয় শেষে মাহমুদউল্লাহর আনন্দ চাপা থাকল না। তিনি বলেন, আমি মনে করি এ জয়টি খুব দরকার ছিল। ব্যাটিং ও বোলিংয়ে প্রথম ছয় ওভার নিয়ে আমরা চিন্তিত ছিলাম। আমরা ভালো সূচনা পেলে পরে সেটিকে কাজে লাগাতে পারি। এ জায়গাটিতে আমাদের উন্নতি করতে হবে।
ম্যাচসেরা সাকিব পুরস্কার হাতে নিয়ে বলেন, যত ম্যাচ খেলছি ততই আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। অবশ্যই প্রথম ম্যাচটি আমাদের জন্য একটি ধাক্কা ছিল। তবে হ্যাঁ, টি২০ ক্রিকেটে যেদিন যে দল সেরা সেদিন তারাই জয়লাভ করে। এখন চাপ নেই, আমরা নির্ভার হয়ে খেলতে পারব।
বাংলাদেশকে সুপার ১২ রাউন্ডে নেয়ার পথে দারুণ এক কীর্তি ছুঁয়েছেন সাকিব। টি২০ বিশ্বকাপে যুগ্মভাবে তিনি সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলার। ৩৯ উইকেট শিকার করে কালই তিনি ছুঁয়ে ফেলেছেন পাকিস্তানের সাবেক অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদিকে, যিনি সর্বশেষ টি২০ বিশ্বকাপ খেলেছেন ২০১৬ সালে।
এছাড়া টি২০ বিশ্বকাপের মাত্র দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে সাকিব একই ম্যাচে চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংস খেলার পাশাপাশি চারটি উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েছেন। ২০০৯ সালে লর্ডসে ভারতের বিপক্ষে চার উইকেট নেয়ার পাশাপাশি হার না মানা ৬৬ রান করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডোয়াইন ব্রাভো।
সাকিবের অবশ্য জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে এমন কীর্তি আছে। আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে একই ম্যাচে চার উইকেট ও চল্লিশোর্ধ্ব রানের কীর্তি সাকিবের তিনটি থাকলেও অন্য কারো একটির বেশি নেই।
দলীয় ও ব্যক্তিগত অর্জন মিলে কাল আল আমরাতে অবিস্মরণীয় এক দিন কাটল সাকিবের।