দেশে সবাই স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করবে —প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ: অক্টোবর ২০, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে তার ধর্ম পালন করবে। আমাদের সংবিধানেও সে নির্দেশনা দেয়া আছে। ইসলাম ধর্মও সে কথাই বলে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ভৌগোলিক সীমারেখায় বাংলাদেশ ছোট হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে অনেক বড়। আমি চাই প্রতিটি মানুষের জীবন যেন সুন্দর হয়, উন্নত হয়। প্রতিটি মানুষ যেন অন্ন, বস্ত্র, পায়; উন্নত জীবন পায়। যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল, সেটা যেন আমরা পূরণ করতে পারি।

সময় দেশের আর কোনো শিশুকে যাতে শেখ রাসেলের পরিণতি বরণ করতে না হয়, সেই জন্য এক নিরাপদ বাংলাদেশ গঠনের অঙ্গীকার করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিশ্বকে পারব কিনা আমি জানি না, কিন্তু আমার দেশের মানুষের জন্য আমি একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে যেতে চাই, যেন আমার রাসেলের মতো আর কারো জীবন হারাতে না হয়।

তিনি বলেন, একটি শিশু, তার যে আকাঙ্ক্ষা পূরণ হলো না, অচিরেই তাকে জীবন দিতে হলো, রক্ত দিতে হলো, ঘটনা যেন বাংলাদেশে আর না ঘটে; সেটাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা, সেটাই আমরা চাই।

সরকারপ্রধান বলেন, একটি শিশুর মেধা, জ্ঞান বুদ্ধি যাতে বিকশিত হতে পারে, যাতে বাংলাদেশকে তারা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সে চেষ্টাই আমি করে যাচ্ছি। কারণ এত রক্তক্ষয়, এত কিছু বাংলাদেশে ঘটে গিয়েছে; আর যেন ধরনের ঘটনা না ঘটে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের শিশুরা যাতে আর নির্মমতার শিকার না হয়। কিন্তু এখনো আমরা দেখি সে নির্মমতা। এখনো মাঝে মাঝে দেখি। কিন্তু এটা যাতে না হয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়া বিরোধী দলে থাকতেই তো অগ্নিসন্ত্রাস করে চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। বাবা দেখেছে নিজের চোখের সামনে সন্তান আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছে। তেমন নিষ্ঠুর ঘটনা তো বাংলাদেশে ঘটেছে।

তিনি বলেন, আমি এটুকুই চাইব যে এখানে মানবতার প্রশ্ন যারা তোলে, তারা যেন ঘটনাগুলো ভালোভাবে দেখে যে বাংলাদেশে কী ঘটত? আমরা সরকারে আসার পর থেকে আমাদের প্রচেষ্টা কোনো শিশু রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে না, টোকাই থাকবে না। তাদের যেন একটা ঠিকানা থাকে। তারা যেন একটু ভালোভাবে বসবাস করতে পারে।

সময় ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার রাতকে কারবালার সঙ্গে তুলনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কারবালায়ও কিন্তু নারী-শিশুকে হত্যা করা হয়নি। যাদের জন্য আমার বাবা সারা জীবন সংগ্রাম করলেন, তাদের হাতেই তাকে জীবন দিতে হলো। জীবন দিতে হলো পরিবারের সব সদস্যকে।

শেখ হাসিনা বলেন, সারা বিশ্বে অনেকেই কথা তোলে, মানবাধিকারের কথা তোলে, আমাকে অনেক সময় মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন করে। তখন আমার মনে হয়, আমি জিজ্ঞেস করি, তাদের কী অধিকার আছে আমাকে প্রশ্ন করার? যখন আমার বাবা-মা সবাইকে হত্যা করার পর আমি বিচার চাইতে পারিনি। আমি যখন বাংলাদেশে এলাম, আমি কোনো মামলা করতে পারব না। আমি বিচার চাইতে পারব না। কারণ ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স।

তিনি বলেন, খুনিদের বিচারের হাত থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে এবং তাদের দূতাবাসে বিভিন্ন জায়গায় চাকরি দেয়া হয়েছে। তাদের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। জনগণের ভোট চুরি করে পার্লামেন্ট সদস্য করা হয়েছে। দেশে তাদের নানাভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

কুমিল্লার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ: কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। ভিডিও কনফারেন্সে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠকের পর সচিবালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম কথা জানিয়েছেন।

ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় পূজামণ্ডপে হামলা-ভাংচুর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোয় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে, আগেও বলা হয়েছে; খুব কঠোর ব্যবস্থায় যেতে হবে। যারা জড়িত রয়েছে, তাদের অবশ্যই ধরতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তদন্ত করে যারা এসব ঘটনার সূত্রপাত করল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিষয়ে কুমিল্লার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়মিত ব্রিফ করছেন। সেখানে আমাদের ইন্টেলিজেন্সও কাজ করছে। গতকাল রাতেও আমরা বসেছিলাম। নিশ্চয়ই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজকে (গতকাল) ব্রিফ করবেন। সেজন্য আমি আর এটা নিয়ে বলছি না। কুমিল্লার বিষয়ে আমার ধারণা, খুব কুইকলি একটা ফাইন্ড আউট হবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫