ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে টানা দুটি টি২০ সিরিজে হারানো বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস ছিল তুঙ্গে। ওই সাফল্য এবারের টি২০ বিশ্বকাপেও বড় স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে দলকে। যদিও বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানে হেরে বসল বাংলাদেশ!
বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে ‘বি’ গ্রুপ ম্যাচে আগে ব্যাটিং করে বাংলাদেশকে ১৪১ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয় আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশ স্কটল্যান্ড। জবাবে ৭ উইকেটে ১৩৪ রান তুলতে সমর্থ হয় বাংলাদেশ। বোলিং, ফিল্ডিং ও ব্যাটিংয়ে ভঙ্গুর মানসিকতা দেখিয়ে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে হার নিয়ে মাঠ ছাড়ল মাহমুদউল্লাহ বাহিনী।
রান তাড়া করতে নেমে ১৮ রানের মধ্যেই সৌম্য সরকার (৫) ও লিটন দাসকে (৫) হারায় বাংলাদেশ। এরপর ইনিংসটা ধীরে ধীরে মেরামত করছিলেন দলের ব্যাটিংয়ের দুই কাণ্ডারি সাকিব আল হাসান (২৮ বলে ২০) ও মুশফিকুর রহিম (৩৬ বলে ৩৮)। যদিও আস্কিং রেট বাড়তে থাকায় চাপে পড়েন দুজন এবং ১২ বলের ব্যবধানে দুজনেরই বিদায় ঘটে (৭৪/৪)।
টপ অর্ডারের চার তারকাকে হারানোর পর একটি পর্যায়ে দলের প্রয়োজন পড়ে ৩৬ বলে ৬২ রান। মাহমুদউল্লাহ (২২ বলে ২৩), আফিফ হোসেন (১২ বলে ১৮) ও মেহেদী হাসান (৫ বলে ১৩*) প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন, তবে শেষ রক্ষা হয়নি। শেষ ওভারে ২৪ রান তোলার চ্যালেঞ্জে পরাজিত হয় বাংলাদেশ।
ব্র্যাড হুইল ২৪ রানে তিনটি ও ক্রিস গ্রিভস ১৯ রানে দুটি উইকেট নিয়ে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করেছেন বাংলাদেশ দলের। অলরাউন্ড পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে ম্যাচসেরা খেলোয়াড় হয়েছেন ক্রিস গ্রিভস।
এটা স্কটিশদের অপ্রত্যাশিত সাফল্য নয়। এর আগে টি২০ ক্রিকেটে একবার মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশকে হারানোর কৃতিত্ব দেখায় ইউরোপের দেশটি। এছাড়া চলতি বিশ্বকাপের আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে তারা জয় তুলে নেয়। সেই আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করেই টি২০ বিশ্বকাপ শুরুর আগের দিনই বাংলাদেশকে হারানোর হুমকি দিয়ে রাখে কাইল কোয়েত্জারের দল। গতকাল বিশ্বকাপের মূল মঞ্চেও অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিল তারা।
অথচ বোলিংয়ের শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছিল বাংলাদেশের। তৃতীয় ওভারেই অধিনায়ক কোয়েত্জারকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন সাইফউদ্দিন। অষ্টম ওভারে মেহেদী হাসানের ঘূর্ণিতে আসে দ্বিতীয় সাফল্য। তিনি লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন ম্যাথু ক্রসকে। বাংলাদেশের জন্য সফলতম এ ওভারের পঞ্চম বলে মেহেদীর শিকারে পরিণত হন জর্জ মুনসে। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে পড়া বলটিতে সুইং খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান তিনি।
মেহেদীর (৩/১৯) ঘূর্ণিঝড় না থামতেই স্কটিশদের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে আসেন সাকিব আল হাসান (২/১৭)। একাদশ ওভারে ৩ বলের ব্যবধানে তিনি ফেরান রিচি বেরিংটন ও মাইকেল লিয়াস্ককে। এর মধ্য দিয়ে লাসিথ মালিঙ্গাকে টপকে আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের গৌরব অর্জন করলেন সাকিব (৮৯ ম্যাচে ১০৮ উইকেট)।
পরের ওভারে ফিরেই আরেকবার আঘাত হানেন মেহেদী, এবার তিনি বোল্ড করেন ক্যালাম ম্যাকলিওডকে। শেষদিকে তাসকিন আহমেদ একটি ও মুস্তাফিজুর রহমান দুটি উইকেট নিলেও রান চেক দিতে পারেননি। ক্রিস গ্রিভস ২৮ বলে ৪৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন। চারটি বাউন্ডারি ও দুই ছক্কায় ইনিংসটি সাজান তিনি। এছাড়া জর্জ মুনসে ২৩ বলে ২৯ ও মার্ক ওয়াট ১৭ বলে ২২ রান করেন।
জয় শেষে উল্লসিত ক্রিস গ্রিভস বলেন, দারুণ একটি ম্যাচ ছিল আমাদের। মনে হয় এটা আমার দিন ছিল। দলের জন্য অবদান রাখতে পেরে আমি আনন্দিত। এ জয়টি আমাদের আত্মবিশ্বাস এনে দিচ্ছে, আমরা এখন যেকোনো দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারব।
বিমর্ষ বাংলাদেশ দলনায়ক মাহমুদউল্লাহ বললেন, উইকেট অনেক ভালো ছিল, ১৪০ রান তো চেজ করাই যেত। তবে মাঝের দিকে আমরা বড় ওভার পাইনি। বোলাররা তাদের কাজটি ঠিকঠাক করলেও ব্যাটিং ইউনিট যথেষ্ট ভালো করিনি। তাদের ব্যাটারদের কৃতিত্ব দিতে হবে (৫৩/৬ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোয়)। দারুণ ফিনিশিং ছিল তাদের। আমাদের এখনো ইতিবাচক থাকতে হবে এবং ভুলগুলো শুধরে নিতে হবে, যাতে এগুলোর পুনরাবৃত্তি না হয়।
গতকাল উদ্বোধনী ম্যাচে পাপুয়া নিউগিনিকে (পিএনজি) ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে শুভসূচনা করে স্বাগতিক ওমান। আল আমরাতে আগে ফিল্ডিং করতে নামা ওমান প্রতিপক্ষকে ১২৯ রানে আটকে দেয়। এরপর রান তাড়া করতে নেমে স্বাগতিকরা ৩৮ বল হাতে রেখেই বিনা উইকেটে প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয়। অনবদ্য এ জয়ে বাংলাদেশকে শক্ত বার্তা দিয়ে রাখল মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। আগামীকাল একই মাঠে ওমানের মুখোমুখি হবেন মাহমুদউল্লাহরা। স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়ায় এখন ওমান ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য বাঁচা-মরার হয়ে দাঁড়াল।