জ্বালানি সংকট থেকে উত্তরণের প্রয়াস

এলএনজি আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রমুখী হচ্ছে চীন

প্রকাশ: অক্টোবর ১৮, ২০২১

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভয়াবহ জ্বালানি সংকটের মধ্যে রয়েছে চীন। গত শুক্রবার কয়লার রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি সংকটকে আরো উস্কে দেয়। এদিকে আসন্ন শীতে জ্বালানি চাহিদা বছরের অন্য সময়ের তুলনায় স্বভাবতই বেশি থাকবে। কিন্তু বাজারে চলমান সংকট চাহিদা পূরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারসাম্যহীন বাজার পরিস্থিতিতে ক্রমেই লাগামছাড়া হচ্ছে দাম। ক্রমবর্ধমান সংকট মোকাবেলায় অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের শরণাপন্ন হচ্ছে চীন। মার্কিন মুলুক থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির পথে অগ্রসর হচ্ছে এশিয়ার বৃহৎ অর্থনীতির দেশটি।

এলএনজির দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ নিশ্চিত করতে চীনের প্রধান জ্বালানি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানিকারকদের আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকা গ্যাসের দাম এবং চীনে বিদ্যুৎ সংকট দেশটির জ্বালানি নিরাপত্তায় উদ্বেগ ঘনীভূত করছে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানি বাড়াবে চীন। দুই দেশের মধ্যে -সংক্রান্ত আলোচনা এরই মধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে।

বেশ কয়েকটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানায়, চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সিনোপ্যাক করপোরেশন চায়না ন্যাশনাল অফশোর অয়েল কোম্পানি (সিএনওওসি), স্থানীয় সরকার সমর্থিত জ্বালানি সরবরাহকারী ঝিজিয়াংসহ অন্তত পাঁচটি কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের রফতানিকারক বিশেষ করে শিনিয়ার এনার্জি এবং ভেনচার গ্লোবালের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে।

আলোচনার চূড়ান্ত ফল হিসেবে দুদেশের মধ্যে শতকোটি ডলারের একটি চুক্তি সম্পাদিত হতে পারে। চুক্তির মাধ্যমে আগামী বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানি বড় পরিসরে বাড়বে বলে প্রত্যাশা বাজারসংশ্লিষ্টদের।

২০১৯ সালের পর থেকে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তপ্ত বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিরাজ করছে। এরপর দেশ দুটির মধ্যে গ্যাস বাণিজ্য শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে আবারো গ্যাস বাণিজ্যে গতি ফিরেছে। চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাণিজ্যে আরো প্রসার ঘটবে।

রয়টার্স জানায়, চলতি বছরের শুরুর দিকেই যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকারীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আলোচনা জোরদার হয়েছে। মূলত বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বিদ্যুৎ উৎপাদক দেশটিতে এক দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ জ্বালানি সংকট দেখা দেয়ায় আলোচনায় মনোযোগ বাড়িয়েছে চীন।

চলতি বছর এশিয়ার দেশগুলোয় প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম পাঁচ গুণেরও বেশি বেড়েছে। ফলে শীতে বিদ্যুৎ সংকট তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেইজিংভিত্তিক একটি শীর্ষ শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোম্পানিগুলো চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে না। এর মধ্যেই লাফিয়ে বাড়ছে দাম। আগস্টে যখন স্পট মার্কেটে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ১৫ ডলার স্পর্শ করে, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি আনা হয়।

বেইজিংভিত্তিক আরেকটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, বাজারে সাম্প্রতিক তীব্র অস্থিতিশীলতার পর অনেক ক্রেতা দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ চুক্তি না করায় আফসোস করেছেন। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই কোম্পানিগুলোর মধ্যে নতুন চুক্তি সম্পাদিত হবে। এরই মধ্যে চীনের শীর্ষ ক্রেতা ইএনএন ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড যুক্তরাষ্ট্রে শিনিয়ার এনার্জির সঙ্গে ১৩ বছর মেয়াদি একটি চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে। ২০১৮ সালের পর এটিই হবে দেশ দুটির মধ্যে বড় ধরনের এলএনজি চুক্তি।

গত বছরও এলএনজি আমদানিতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ছিল জাপান। কিন্তু চলতি বছর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে আমদানিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে চীন। ফলে দেশটি জাপানকে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে আসে। নতুন করে আমদানি বাড়লে বছরও আমদানিতে শীর্ষস্থান ধরে রাখবে চীন। সূত্র রয়টার্স।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫