বিপাকে কোরিয়ান ইপিজেড ও এসপিপিএল

চট্টগ্রামে গ্রাহক নিয়ে দ্বন্দ্বে পিডিবি-পল্লী বিদ্যুৎ

প্রকাশ: অক্টোবর ১৭, ২০২১

আবু তাহের

চট্টগ্রামে শিল্প এলাকায় গ্রাহক সংযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই মুখোমুখি অবস্থানে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) বিশেষ করে চট্টগ্রামের শিল্প এলাকায় অবস্থিত কোরিয়ান ইপিজেড সুপার পেট্রোকেমিক্যাল লিমিটেডে (এসপিপিএল) বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছে। বিষয়টি আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির জন্য সংস্থা দুটিকে নির্দেশনা দেয়া হলেও আজ অবধি কোনো সুরাহা হয়নি। এদিকে দীর্ঘদিন মামলা চলমান থাকায় বিপাকে পড়েছে ভুক্তভোগী কেইপিজেড এসপিপিএল।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত বেসরকারি রফতানি প্রক্রিয়াজাত এলাকা কেইপিজেড এবং জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার এসপিপিএল। ২০১১ সাল থেকে প্রতিষ্ঠান দুটি পিডিবির বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে শিল্প পরিচালনা করছে। তবে শুরু থেকেই সংশ্লিষ্ট এলাকাটিকে নিজের আওতাভুক্ত বলে দাবি করে আসছে বিআরইবি। নিজ আওতাধীন এলাকায় পিডিবির গ্রাহক সংযোগ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগও জানিয়েছে সংস্থাটি। বিষয়টি সুরাহার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ সংস্থা দুটিকে নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করলেও সুফল মেলেনি।

ভুক্তভোগী কোরিয়ান ইপিজেড এসপিপিএলের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে বিষয়টি সমাধানের জন্য ২০১৩ ২০১৪ সালে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করা হয়েছে। নিয়ে গত মাসের শেষদিকে বিষয়টি আদালতের বাইরে মীমাংসার জন্য বিআরইবিকে চিঠি দেয় পিডিবি। তবে চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

বিষয়ে বিআরইবির বক্তব্য হলো আনোয়ারা উপজেলা মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে। সে হিসেবে ওই এলাকা চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি--এর আওতাধীন ভৌগোলিক এলাকা। আইন অনুযায়ী, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে সব ধরনের ভৌগোলিক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগের এখতিয়ার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির। ফলে ওই এলাকায় লাইন স্থাপন করে গ্রাহক সংযোগ দেয়ার এখতিয়ার পিডিবির নেই।

চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি--এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার আবু বকর সিদ্দিকী বণিক বার্তাকে বলেন, আইন নির্ধারিত ভৌগোলিক সীমানা অনুযায়ী ওই এলাকাটি পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন। জায়গাটি মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে। ফলে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার অধিকার রয়েছে বিআরইবির। এর আগে ওই এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সংযোগ ছিল। মাঝে সেখানে পিডিবি সংযোগ দিয়েছে।

বিআরইবির আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দাবি, কোরিয়ান ইপিজেড এলাকার আশপাশে পিডিবির কোনো সংযোগ নেই। বেশির ভাগ সংযোগ বিআরইবির। মূলত কোরিয়ান ইপিজেড বিদ্যুতের বড় গ্রাহক। বিদ্যুতের লোড চাহিদা বেশি থাকায় সুযোগটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে পিডিবি।

তবে পিডিবি বলছে, কোরিয়ান ইপিজেড এসপিপিএল সংস্থাটির চট্টগ্রাম বিতরণ দক্ষিণ অঞ্চলের আওতাভুক্ত। একই সঙ্গে ইপিজেড এসপিপিএল যে জায়গায় অবস্থিত, সেটি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের কর্ণফুলী থানার এরিয়া। কোরিয়ান ইপিজেড অধিকৃত বড় উঠান, বৈরাগ, চরলক্ষ্যা, জুলধা ইউনিয়ন কর্ণফুলীর থানার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আইন অনুযায়ী এলাকাটিতে বিদ্যুৎ সংযোগের এখতিয়ার পিডিবির রয়েছে। এসপিপিএলের পরিশোধনাগারটি জুলধা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সেখানে পিডিবি বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে।

সংস্থাটির দাবি, কোরিয়ান ইপিজেড এসপিপিএলকে বিআরইবির কাছে হস্তান্তর করা হলে পিডিবি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উল্লিখিত দুই গ্রাহকের ব্যবহারকৃত লোডের বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি মূল্য টাকা ৯০ পয়সা। অন্যদিকে, একই লোডের বিদ্যুৎ আরইবি ভর্তুকি দিয়ে টাকা ৩৬ পয়সা বিক্রি করে। দুই গ্রাহককে বিআরইবির কাছে হস্তান্তর করা হলে পিডিবির প্রতি মাসে লোকসান হবে আড়াই কোটি টাকা। বছর শেষে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩০ কোটি টাকায়। সম্প্রতি কোরিয়ান ইপিজেড মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে। সরকারি নীতিমালা মেনে নেট মিটারিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিষয়ে পিডিবি কোরিয়ান ইপিজেডের মধ্যে চুক্তিও হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কোরিয়ান ইপিজেড এসপিপিএল প্রতি মাসে মোটা অংকের মূল্যের বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। কারণে গ্রাহক দুটিকে নিয়ে রীতিমতো টানাপড়েন তৈরি হয়েছে বিতরণ কোম্পানি দুটির। সংযোগ নিয়ে পিডিবি-বিআরইবির দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বে বিপাকে পড়েছে গ্রাহক প্রতিষ্ঠান দুটি। তবে বিদ্যুতের মূল্য বেশি হলে গ্রাহক প্রতিষ্ঠান দুটি চাইছে শেষ পর্যন্ত পিডিবির সংযোগই থাকুক। বিআরইবির হাতে হস্তান্তর করা হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রতিষ্ঠান দুটি।

বিষয়ে এসপিপিএলের পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, শিল্প চালাতে হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রয়োজন। সে হিসেবে আমরা বর্তমানে পিডিবির যে সংযোগটি ব্যবহার করছি, সেটি রেখে দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। কারণ পিডিবির বিদ্যুৎ নিরবচ্ছিন্ন নির্ভরযোগ্য। বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে আরইবির চেয়ে পিডিবির সেবা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি উন্নত। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না হলে উৎপাদন ব্যাহত হয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।

বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবির সদস্য (বিতরণ) শামসুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, নব্বই দশকের সময় থেকে আনোয়ারায় পিডিবি বিদ্যুৎ সংযোগ শুরু করে। মূলত শিল্প এলাকা হওয়ায় সেখানে পিডিবি পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকাটিতে পিডিবির সার কারখানা, সিমেন্ট, স্টিল মিল, আবাসিকসহ বহু বাণিজ্যিক সংযোগ রয়েছে। তাছাড়া পিডিবি যখন ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে, তখন আরইবির কোনো সংযোগ ছিল না। পিডিবির আওতাভুক্ত বলেই সেখানে গ্রাহক সংযোগ দেয়া হয়েছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫