প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় যোগ দিয়ে ছয় দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। এ প্রস্তাবে বিশ্বব্যাপী ধনী-দরিদ্রের মধ্যে ‘ভ্যাকসিন বিভাজন’ দূর করার পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে বৈষম্য মোকাবেলায় দৃষ্টান্ত স্থাপনের কথা বলেছেন তিনি। ‘জাতিসংঘের সাধারণ এজেন্ডা: সমতা ও অন্তর্ভুক্তি অর্জনের পদক্ষেপ’ শীর্ষক এক প্রাক-রেকর্ডকৃত বক্তব্যে তিনি বলেন, সময়ের সবচেয়ে জরুরি আহ্বান হচ্ছে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ভ্যাকসিন বিভাজন দূর করা। খবর বাসস।
এ সময় তিনি বলেন, দারিদ্র্য, ক্ষুধা, লিঙ্গ সমতা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো এসডিজি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর সঙ্গে বৈষম্য দূরীকরণের গভীর সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখন একটি নতুন দৃষ্টান্ত প্রয়োজন, যা বৈষম্যকে সামগ্রিকভাবে মোকাবেলা করবে।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য শেখ হাসিনা স্পেন, সিয়েরালিয়ন ও কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট এবং সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি অর্জনের বিষয়টি জাতিসংঘের অভিন্ন আলোচ্যসূচিতে গুরুত্ব দেয়ায় আমি এর প্রশংসা করছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে সব নাগরিকের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তার প্রথম ভাষণে বলেছিলেন, ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক স্বাস্থ্য ও কল্যাণের জন্য জীবনযাত্রার পর্যাপ্ত মানের অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্বটি আন্তর্জাতিকভাবে সবার ওপরেই বর্তায়। এ দৃষ্টিভঙ্গি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক।
তিনি বলেন, এ চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা এসডিজি বাস্তবায়ন এবং কভিড থেকে পুনরুদ্ধারে ‘সামগ্রিক সমাজের’ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছি, যাতে কেউ পিছিয়ে না পড়ে। আমরা সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশকে আমাদের প্রচেষ্টার কেন্দ্রে রেখেছি। এর মধ্যে রয়েছে নারী, অতিদরিদ্র, জাতিগত সংখ্যালঘু, প্রতিবন্ধী ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী।
তিনি আরো বলেন, কোনো দেশই একা এ সংকট মোকাবেলা করতে পারে না। বৈশ্বিক পর্যায়ে আমাদের সাহসী ও দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন। অধিকতর সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব গড়ে তুলতে জাতিসংঘের ৭৫তম ঘোষণাপত্রের প্রতিশ্রুতি পূরণে আমাদের বহুপক্ষীয় সহযোগিতা প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা তার প্রস্তাবে বলেন, আমাদের অবশ্যই সবচেয়ে দুর্বল দেশগুলোর বিশেষ অর্থায়নের চাহিদাগুলো সমাধান করতে হবে। এ তালিকায় এলডিসিভুক্ত ও জলবায়ুর ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোও রয়েছে।
এছাড়া অভিবাসী ও ভাসমান মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির অবসান অত্যন্ত জরুরি বলে প্রধানমন্ত্রী তার প্রস্তাবে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে ক্রমবিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়া চলমান ডিজিটাল যুগে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে কঠোরভাবে ডিজিটাল বিভাজন দূর করার ওপরও জোর দেন তিনি।