ইউজিসি

এনএসইউসহ ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সতর্কতা

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১

সাইফ সুজন

অননুমোদিত ক্যাম্পাস প্রোগ্রাম পরিচালনা এবং বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন অনিয়ম অব্যবস্থাপনার কারণে ২০ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) সতর্কতা বার্তায় শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংখ্যায় এগিয়ে থাকা ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) নামও এসেছে। সম্প্রতি বিষয়ে একটি পরামর্শমূলক গণবিজ্ঞপ্তি চূড়ান্ত করেছে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিজ্ঞপ্তিটি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ইউজিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে কমিশন।

ইউজিসি বলছে, আইন নিয়ম-নীতি অনুসরণ না করে বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অননুমোদিত ক্যাম্পাস প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে। কেউ কেউ অনুমোদিত আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। আবার কোনোটিতে বৈধ কোনো উপাচার্য, উপ-উপাচার্য কিংবা ট্রেজারারই নেই। কোথাও আবার দ্বন্দ্ব বা মামলায় জড়িয়েছে খোদ বিওটি সদস্যরাই। তাই ভর্তি হওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়েছে কমিশন। অন্যথায় পরবর্তী সময়ে প্রতারিত হওয়া, আইনগত সমস্যার সম্মুখীন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, প্রোগ্রাম বা সনদ বাতিল হলে কমিশন কোনো দায়ভার নেবে না।

গণবিজ্ঞপ্তিতে সবার আগে নাম রয়েছে ইবাইস ইউনিভার্সিটির। বিশ্ববিদ্যালয়টির বিওটি দুই ভাগে বিভক্ত। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদিত কোনো ঠিকানা নেই। এমনকি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত বৈধ কোনো উপাচার্য, উপ-উপাচার্য কোষাধ্যক্ষও নেই। এরপর আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি বিষয়ে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। এজন্য তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়টিতেও রাষ্ট্রপতির নিয়োগ দেয়া বৈধ কোনো উপাচার্য, উপ-উপাচার্য কোষাধ্যক্ষও নেই।

দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা বিষয়ে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির বিওটি দুই ভাগে বিভক্ত পরস্পরের বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলা রয়েছে। ঠিকানায় গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি কমিশনের পরিদর্শক দল। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয়েও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত বৈধ কোনো উপাচার্য, উপ-উপাচার্য কোষাধ্যক্ষও নেই।

এশিয়ান ইউনিভার্সিটির পাঁচটি বিভাগের সাতটি প্রোগ্রামে চলতি বছরের স্প্রিং সেমিস্টার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে বলেছে ইউজিসি। প্রোগ্রামগুলো হলো বিএ (অনার্স) ইন বাংলা, এমএ ইন বাংলা, এমএসএস ইন ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট, বিএ (অনার্স) ইন ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড সিভিলাইজেশন, এমএ ইন ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড সিভিলাইজেশন, বিএড এমএড। বিশ্ববিদ্যালয়েও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত বৈধ কোনো উপাচার্য, উপ-উপাচার্য কোষাধ্যক্ষও নেই।

ফরিদপুরের টাইমস ইউনিভার্সিটি বিষয়ে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া চারটি প্রোগ্রামে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ভূতাপেক্ষ অনুমোদন চেয়ে আবেদন করলে ইউজিসির পক্ষ থেকে ধরনের সুযোগ নেই বলা হয়। ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে ইউজিসির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, যা চলমান রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির বিষয়ে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

অননুমোদিত ক্যাম্পাস পরিচালনা করায় ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির ক্ষেত্রে সতর্ক করা হয়েছে। আর অননুমোদিত প্রোগ্রাম পরিচালনা করায় নর্থ সাউথ, জেডএইচ সিকদার, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বেশ কয়েকটি ভর্তির ক্ষেত্রে সতর্ক করা হয়েছে।

বিওটির দ্বন্দ্ব আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকায় ব্রিটানিয়া, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল, সাউদার্ন, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইবাইসে ভর্তির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করা হয়েছে। ইউজিসির অনুমোদন না থাকলেও আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে সাউদার্ন গণ বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া সরকারের বন্ধ করে দেয়া কুইন্স দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়েও শিক্ষার্থীদের সতর্ক করা হয়েছে।

উপাচার্য, উপ-উপাচার্য কোষাধ্যক্ষ না থাকা প্রতিষ্ঠান বিষয়ে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্জিত ডিগ্রির সনদে স্বাক্ষরকারী হবেন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য। তাই যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় মাসের বেশি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য, উপউপাচার্য কোষাধ্যক্ষ পদে কোনো ব্যক্তি নিয়োগপ্রাপ্ত নেই সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হওয়ার পরামর্শ ইউজিসির।

আর ভুয়া বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে বলা হয়েছে, বিভিন্ন বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ওয়েবসাইট বা অফিস খুলে তথাকথিত পিএইচডিসহ বিভিন্ন ডিগ্রি দেয়া হচ্ছে, যা কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যদিও অদ্যাবধি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা, ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টারকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেয়া হয়নি। তাই কোনো অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে প্রতারিত না হওয়ার জন্য পরামর্শমূলকভাবে সতর্ক করা হলো।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখ বণিক বার্তাকে বলেন, একজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন। কমিশনের ওয়েবসাইটে নিয়মিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিস্থিতিবিষয়ক তথ্য হালনাগাদ করা হয়। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে সেটি গণবিজ্ঞপ্তি আকারেও প্রকাশ করা হচ্ছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫