‘পেন্সিলে আঁকা পরী’ না নির্মাণের সিদ্ধান্ত অমিতাভের

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১

ফিচার প্রতিবেদক

হুমায়ূন আহমেদের পেন্সিলে আঁকা পরী থেকে চলচ্চিত্র বানানোর জন্য ৬০ লাখ টাকা সরকারি অনুদান পেয়েছিলেন অমিতাভ রেজা। প্রথম কিস্তি ১৮ লাখ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে এরই মধ্যে জমা পড়েছে অমিতাভের অ্যাকাউন্টে। আগে থেকেই প্রস্তুত কাস্টিং, লোকেশনসহ প্রায় সবকিছু। কিন্তু হঠাৎ করেই জানালেন, চলচ্চিত্রটি আর তিনি বানাচ্ছেন না। নানা ধরনের শর্তের কারণে চলচ্চিত্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন অমিতাভ রেজা। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া অনুদানের টাকাও ফেরত দিচ্ছেন। সরকারের অনুদান কমিটিকে জানিয়েছেন তার সিদ্ধান্ত।

এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না অনুদান শাখায়। উল্টো অনুদানের টাকা নিয়ে বছরের পর বছর ছবি না বানানোর রীতি রয়েছে। নির্মাতা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন পেন্সিলে আঁঁকা পরী ছবিটি নির্মাণের জন্য তার ১০ বছরের প্রস্তুতির কথা। তিন বছর ধরে এর চিত্রনাট্য করেছেন রঞ্জন রব্বানীকে সঙ্গে রেখে। তারও আগে দুই দফা সরাসরি হুমায়ূন আহমেদের কাছ থেকে ছবিটি নির্মাণের জন্য অনুমোদন নিয়েছেন। এরপর পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে একাধিকবার ছবি নির্মাণের বিষয়ে পজিটিভ আলাপ হয়েছে। অবশেষে অনুদান প্রাপ্তি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কেন পিছিয়ে গেলেন অমিতাভ?

অভিতাভ রেজা বলেছেন, ছবি নির্মাণের জন্য প্রথম স্যারের কাছ থেকে অনুমতি নেন নির্মাতা আবু সাইয়ীদ ভাই। একসঙ্গে দুটি। এর মধ্যে নিরন্তর তিনি নির্মাণ করেছেন। তখনই আমি সাইয়ীদ ভাইয়ের কাছ থেকে পেন্সিলে আঁকা পরী নির্মাণের অনুমোদন নিই এবং আমি আবার স্যারের কাছেও যাই। তিনি চোখ বন্ধ করে আমাকে অনুমোদন দেন। শুধু তাই নয়, স্যার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আগে যখন দেখা করতে যাই, তখনো তাগাদা দিচ্ছিলেন, ছবিটা বানাও না কেন? তখন আয়নাবাজির জন্য সুযোগ করতে পারিনি। এরপর স্যার মারা গেলেন। স্বাভাবিক নিয়মেই আমি সিনেমার বিষয়টি স্যারের পরিবারের অন্য সদস্যদেরও জানাই। তারা পজিটিভ ছিলেন। তাছাড়া ছবিটি অনুদান নিয়ে বানাব, তেমন একটা বাসনাও ছিল আমার মধ্যে। সেটি পেলামও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বপ্নের ছবিটি আমি বানাতে পারছি না। এটাই হলো চরম বাস্তবতা।

জানা যায়, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তার সাহিত্য সৃজনশীল সব বিষয় দেখভাল করার জন্য গঠন করা হয়েছে একটি ট্রাস্টি বোর্ড। ট্রাস্টি বোর্ডে হুমায়ূন পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। পেন্সিলে আঁকা পরী ছবিটি অনুদান পাওয়ার পর ট্রাস্টি বোর্ডের চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে গেলে বেশকিছু নতুন শর্ত সামনে আসে অমিতাভ রেজার। শর্তগুলো মেনে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে চান না অমিতাভ। তার মতে, আমি কিন্তু মোটেও শর্তগুলোর বিরোধিতা করছি না। হুমায়ূন আহমেদ স্যারের কর্মের সঠিক সুরক্ষা দেয়ার জন্যই নিশ্চয়ই নিয়মগুলো করা হয়েছে। তবে সেটি পালন করে চলচ্চিত্র বানানো মোটেও সম্ভব নয়। এভাবে ছবি বানাতে গেলে যে পরিমাণ টাকা লাগবে, ওই পরিমাণ টাকা দিয়ে আমি সিনেমা বানাতে চাই না।

এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অনুদান কমিটির সঙ্গেও বসেছেন অমিতাভ রেজা। কমিটির সদস্যরা বারবার তাকে অনুরোধ করেছেন সবার সঙ্গে আবার বসে একটা সুরাহা করে ছবিটি নির্মাণের। কিন্তু অমিতাভ মনে করছেন, ছবিটি নির্মাণ হলে না হবে অনুদানের টাকাগুলোর সঠিক ব্যবহার, না হবে স্যারের গল্পটির যোগ্য উপস্থাপন। তার ভাষায়, সরকারি টাকা মানে জনগণের টাকা। তো সেই টাকাগুলো নিয়ে আমি জনগণের সম্পদ নষ্ট করতে চাই না। আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি, ছবিটি শেষ পর্যন্ত বানাতে পারব না ট্রাস্টি বোর্ডের শর্তগুলো পূরণ করতে গেলে। তার চেয়ে সরকারের টাকাটা ফেরত দেয়াই উত্তম।

অমিতাভ রেজা পাঁচ-সাত বছর ধরে চলচ্চিত্রের গল্প স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ করে আসছিলেন। কয়েকটি শর্তের কারণে চলচ্চিত্রটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসাটা তার জন্য ভীষণ বেদনাদায়ক। তার ভাষায়, একটি চলচ্চিত্রের সঙ্গে একজন নির্মাতার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। একবার প্রেমের সম্পর্ক ছুটে গেলে আর ফিরে আসে না। আমি তো এতদিন ছবিটি নিয়ে ভাবছি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, সবকিছু যতটা সুন্দর যথাযথ সম্মানের মধ্য দিয়ে করার, করেছি। এর পরও হয়নি। সরকারের টাকা যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকটা ভেবে টাকা ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নিই।

অমিতাভ রেজা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তার প্রথম ওয়েব ফিল্ম মুন্সিগিরি নিয়ে। পূর্ণিমা-চঞ্চল চৌধুরী-শবনম ফারিয়া অভিনীত ছবিটি ওটিটি প্লাটফর্মে উন্মুক্ত হচ্ছে শিগগিরই। এদিকে নির্মাতার মুক্তি প্রতীক্ষিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র রিকশা গার্ল নিয়ে যাচ্ছেন উত্তর আমেরিকায়। থেকে ১৭ অক্টোবর মিল ভ্যালি চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হবে ছবিটি। যেখানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকছেন অমিতাভ রেজা নিজেও। ফিরেই দেবেন নতুন নির্মাণের ঘোষণা। নাটক বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজা প্রথম চলচ্চিত্র আয়নাবাজি বানিয়েই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। সামনে আসছে তার ইংরেজি ভাষার ছবি রিকশা গার্ল।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫