সাত প্রতিষ্ঠানের গবেষণা

সাধারণ ছুটিতে ঢাকা ছাড়া মানুষ সংক্রমণ ছড়িয়েছে বেশি

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে গত বছর মার্চে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর তা নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েক দফায় লকডাউন বা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। তবে প্রতিবারই দেখা গেছে, ছুটির সুযোগে রাজধানী থেকে দেশের অন্য অঞ্চলে ছুটেছে মানুষ। আর যাতায়াতের ফলে ভাইরাসটি বেশি বিস্তার লাভ করেছে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে। একটি জিনোমিক কনসোর্টিয়ামের আওতায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) আইদেশিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে গবেষণা করে। গতকাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানায় আইসিডিডিআর,বি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রথম কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের মার্চ। এর সংক্রমণ প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকার গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। ২৩ থেকে ২৬ মার্চের মধ্যে সাধারণ মানুষের ঢাকা ত্যাগ করার বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে সার্স-কোভ- জিনগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করেন গবেষকরা। সেখানে দেখা যায়, চারদিনের মধ্যে ঢাকা বহির্মুখী যাতায়াতই মূলত দেশব্যাপী নভেল করোনাভাইরাস বিস্তারের প্রাথমিক কারণ। আইইডিসিআর, আইসিডিডিআর,বি, আইদেশি, বাংলাদেশ সরকারের এটুআই প্রোগ্রাম, যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্যাঙ্গার জিনোমিক ইনস্টিটিউট, হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ ইউনিভার্সিটি অব বাথের বিজ্ঞানীদের যৌথ উদ্যোগে ২০২০ সালের মার্চে গবেষণা শুরু হয়। বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের প্রবেশ, দেশব্যাপী বিস্তৃতি, নভেল করোনাভাইরাস বিস্তার প্রতিরোধে বিভিন্ন সময় লকডাউন জনসাধারণের গতিবিধির ভূমিকার ওপর ভিত্তি করে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

আইসিডিডিআর,বি জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ২০২০ সালের মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত ৩৯১টি নভেল করোনাভাইরাসের জিনোম বিশ্লেষণ করা হয়। প্রথম নভেল করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য উদ্ভব হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে। পরবর্তী সময়ে অভ্যন্তরীণ আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের মাধ্যমে আরো ভাইরাসের অনুপ্রবেশ ঘটে।

এছাড়া ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের এপ্রিলের মধ্যে আরো ৮৫টি সার্স-কোভ- নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এসব নমুনার মধ্যে ৩০টি ছিল লিনিয়েজ বি...২৫ (৩৫%) ভ্যারিয়েন্টের, ১৩টি ছিল আলফা ভ্যারিয়েন্ট (বি..., ১৫%), ৪০টি ছিল বিটা ভ্যারিয়েন্ট (বি..৩৫১,৪৭%), একটি ছিল লিনিয়েজ বি...৩১৫ এবং একটি ছিল লিনিয়েজ বি..৫২৫।

বিষয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, আমাদের কনসোর্টিয়াম বিভিন্ন সময়ে নীতিনির্ধারকদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিতে সহায়তা করছে। এর মধ্যে রয়েছে সীমান্তবর্তী এলাকায় জনসাধারণের চলাচল নিষিদ্ধ করা, পরিবহন এবং যানবাহন চলাচলে সীমাবদ্ধতা আনা, বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন এবং যেসব দেশে উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট ছিল, সেখান থেকে আসা ভ্রমণকারীদের সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা রাখা, সময়মতো লকডাউন সিদ্ধান্ত বা প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক চলাচল সীমাবদ্ধ করা। তিনি জানান, কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে নীতিনির্ধারকদের জন্য কভিড-১৯-এর বিস্তার ঠেকাতে প্রয়োজনীয় প্রমাণভিত্তিক তথ্য সরবরাহ করতে পারবেন তারা।

গবেষণাপত্রটির মূল লেখকদের একজন ডক্টর লরেন কাউলি বলেন, জিনোমিক মোবিলিটির বিভিন্ন ডাটা স্ট্রিম একত্র করে আমরা কীভাবে নভেল করোনাভাইরাস বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তা বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়েছি।  গবেষণাটিতে মহামারী প্রতিরোধে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কার্যকারিতা দেখানো হয়েছে, যা ভবিষ্যতে অন্যান্য মহামারীর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা সম্ভব হবে।

হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ক্যারোলিন বাকি বলেন, মোবিলিটি ডাটা প্রথাগত চলমান সার্ভিলেন্স সিস্টেমের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। ধরনের একটি মিলিত বিশ্লেষণধর্মী গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য একটি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে কতটা মূল্যবান ভূমিকা রাখতে পারে, তা গবেষণায় দেখানো হয়েছে, যা অন্য কোনো উপায়ে অর্জন করা কঠিন। ধরনের গবেষণা শুধু চলমান নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষেত্রেই নয়, ভবিষ্যতের যেকোনো মহামারী প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

আইসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী অন্যতম গবেষক . ফেরদৌসী কাদরী বলেন, পৃথিবীজুড়েই বিভিন্ন দেশে কয়েক মাস পর মিউটেশনের মাধ্যমে নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু ভ্যারিয়েন্ট টিকার কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা করছে দেশের সব মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসতে। টিকাগুলোর কার্যকারিতা বোঝার জন্য আমাদের ধরনের কাজ অব্যাহত রেখে সরকারকে সময়মতো সঠিক তথ্য দিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করতে হবে।

গবেষণাপত্রটি সেপ্টেম্বর জিনোমিকস, সোস্যাল মিডিয়া অ্যান্ড মোবাইল ফোন ডাটা এনাবল ম্যাপিং অব সার্স-কোভ- লিনেজেস টু ইনফর্ম হেলথ পলিসি ইন বাংলাদেশ শিরোনামে নেচার সাময়িকীতে প্রকাশ পায়। গবেষণায় ফেসবুক ডাটা ফর গুড, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি আজিয়াটা লিমিটেড জনসংখ্যা মোবিলিটি তথ্য সরবরাহ করেছে। এছাড়া বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সার্স-কোভ- নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে সহায়তা করেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫