চতুর্থ কৌশলগত সংলাপ

অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের হস্তক্ষেপ চায় না বাংলাদেশ

প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২১

মনজুরুল ইসলাম

সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চতুর্থ কৌশলগত সংলাপ। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সার্বিক আলোচনা হবে। আলোচনায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে লন্ডনকে বিরত রাখার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন অংশীদারিত্ব ইস্যুতেও জোর দেবে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, লন্ডনে অনুষ্ঠেয় সংলাপে অংশ নেবেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পারমানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি ফিলিপ রবার্ট বার্টোন।

উল্লেখ্য, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক বিষয় নিয়ে দুই বছর পরপর বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের মধ্যে কৌশলগত সংলাপ হয়। এর আগে ২০১৯ সালের এপ্রিলে ঢাকায় তৃতীয় কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে রাজনৈতিক সম্পর্ক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন অংশীদারিত্ব, নিরাপত্তা প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বর্তমান বৈশ্বিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। বর্তমানে যুক্তরাজ্য ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ লাল তালিকায় রয়েছে। তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ দেয়ার বিষয়টিও এবারের বৈঠকে তুলে ধরা হবে। সেই সঙ্গে ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন অংশীদারত্বের বিষয়টিতে জোর দেবে বাংলাদেশ।

এছাড়া সূত্রটি জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে লন্ডনকে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে বলা হবে। প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে ২০২০ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে বাংলাদেশ সম্পর্কে পুরো বিশ্বকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারকে তলব করে মন্ত্রণালয়। সে সময় বাংলাদেশ সরকার বা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর অপ্রীতিকর বিবৃতি দেয়া থেকে ব্রিটিশ সরকারকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়। সে বিষয়টিও কৌশলগত বৈঠকে তুলবে বাংলাদেশ। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তিকর অপ্রীতিকর মন্তব্য করা থেকে লন্ডনকে বিরত থাকতে বলা হবে।

ওই কর্মকর্তা আরো জানান, যুক্তরাজ্যের প্রতিবেদনটিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিকে গৃহবন্দি বলে উল্লেখ করা হয়। বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর বলে মনে করে বাংলাদেশ সরকার। প্রতিবেদন প্রকাশ করার আগে ধরনের কোনো বিষয়ে কোনো বিভ্রান্তি থাকলে তা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য ব্রিটিশদের পরামর্শ দেয়া হয়। পাশাপাশি ওই প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর। বাংলাদেশ সরকার বলছে, সেখানে প্রসঙ্গে এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়। এমনকি বাংলাদেশের নিজস্ব আইন অনুযায়ীও এসব শব্দ স্বীকৃত নয়।

এর আগে গত আগস্টে করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের উচ্চঝুঁকিপূর্ণ ৫৯টি দেশকে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের লাল তালিকাভুক্ত করে যুক্তরাজ্য। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদেরও এসব দেশ ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। যদিও এক পর্যায়ে সেই তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটে ভারত, বাহরাইন, কাতার সংযুক্ত আরব আমিরাতের। লাল থেকে বাদামি তালিকায় ঠাঁই পায় তারা।

বাংলাদেশকে লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্তির যুক্তি হিসেবে সে সময় বলা হয়েছিল, পাঁচ সপ্তাহ ধরে দৈনিক করোনা সংক্রমণের হার প্রায় ২৫-৩৩ শতাংশ কভিড-১৯ রোগে দৈনিক মৃত্যুর হার ২০০ জনের ওপরে রয়েছে। এসবই ভ্রমণকারী পর্যটকদের জন্য কভিড পজিটিভ হওয়ার উচ্চসম্ভাবনা নির্দেশ করে, যে কারণে দেশটি লাল তালিকায় স্থান পেয়েছে। এখন সে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বাংলাদেশকে তালিকা থেকে বাদ দেয়নি যুক্তরাজ্য।

এর আগে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য কৌশলগত সংলাপ প্রসঙ্গে গত ৩১ আগস্ট লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশকে যুক্তরাজ্যের ট্রাভেল রেড অ্যালার্ট তালিকা থেকে বের করে আনার বিষয়ে জোর দেয়া হবে। এছাড়া আলোচনা হবে কভিড-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য নতুন অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব, বাংলাদেশী-ব্রিটিশ নাগরিক বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তির কর্মসংস্থানসহ নানা বিষয়ে।

হাইকমিশন আরো জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের সভাপতিত্বে নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। সেখানে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি হিসেবে থাকবে বাংলাদেশ। ওই সম্মেলনের ঠিক আগ মুহূর্তে কৌশলগত সংলাপ বাংলাদেশের বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫