আপেল বিচির রসায়ন

প্রকাশ: আগস্ট ১০, ২০২১

প্রসূন ঘোষ রায়

ফল খাওয়ার সময় দু-একটা বিচি ভুলে টুপ করে গিলে ফেলেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। ছোটদের জন্য ফলের বিচি গিলে ফেলা তো একেবারে নিত্যদিনের ব্যাপার। আর ভুল করে যেকোনো ফলের বিচি গিলে ফেলার পর যেটা প্রথমে মাথায় আসে তা হলো, আচ্ছা এ বিচি থেকে গাছ হবে না তো পেটের ভেতরে? 

আর গাছ হলে গাছটা কি আমার মাথা ভেদ করে বের হয়ে যাবে? কান, মুখ আর নাকের ফুটো দিয়ে কি গাছের ডালপালা বেরিয়ে আসবে?

এমন সব হাস্যকর আজগুবি ব্যাপার না ঘটলেও অনেক ফলের বিচির মধ্যে রয়েছে বেশ ভয়ংকর কিছু রাসায়নিক দ্রব্য। ঠিক তেমনি একটা ফলের বিচি হলো আপেলের বিচি। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়েছেন, আমাদের নিত্যদিনের পরিচিত ফল আপেলের কথাই বলছি এখন; যার বিচিতে রয়েছে এমিগডালিন (সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইড, প্রতি বিচিতে থাকে শূন্য দশমিক ৪ মিলিগ্রামের কাছাকাছি) নামের এক ভয়ংকর রাসায়নিক দ্রব্য, যেটা শরীরের পানির সঙ্গে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন সায়ানাইড তৈরি করতে পারে। আর আমরা তো সবাই জানি এ হাইড্রোজেন সায়ানাইড কতটুকু ভয়ংকর। তার পরও আবার একটু বলি, এ হাইড্রোজেন সায়ানাইড হলো পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত বিষের মধ্যে সপ্তম ভয়ংকরতম বিষ, যার ভয়াবহতা নির্ভর করে মানুষের শারীরিক ওজনের ওপর। 

এক গ্রামের সাত ভাগের এক ভাগ বা ১৪০ মিলিগ্রাম পরিমাণ হাইড্রোজেন সায়ানাইড একজন সুস্থ স্বাভাবিক (৭০ কেজি ওজনের) পূর্ণবয়স্ক মানুষকে মেরে ফেলতে পারে নিমেষেই। আবার শরীরের ওজন কম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ভয়াবহতাও বাড়তে থাকে আনুপাতিক হারে। যেহেতু শিশুদের ওজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের চেয়ে কম থাকে, আবার যেকোনো ফলের বিচি খেয়ে ফেলার চান্সও থাকে সবচেয়ে বেশি, তাই সায়ানাইড বিষক্রিয়ার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও তাদের থাকে অনেক বেশি। 

মাত্র ২০ মিলিগ্রাম বা এক গ্রামের ৫০ ভাগের এক ভাগ পরিমাণ এ হাইড্রোজেন সায়ানাইড ১০ কেজি ওজনের কোনো শিশুর জীবন কেড়ে নিতে পারে (লেথাল ডোজ কেজিতে ২ মিলিগ্রাম) নিমেষেই।

আপেল বিচিতে এত ভয়ংকর বিষ থাকলেও আশার কথা হলো, এ বিচি না চিবিয়ে পুরোপুরি গিলে খেয়ে ফেললে তার ভেতরে থাকা এমিগডালিন পানির সংস্পর্শে আসতে পারে না। 

তাই কোনো রকম হাইড্রোজেন সায়ানাইডও তৈরি হতে পারে না। তাই ব্লেন্ডার মেশিনে আপেলের জুস বানানোর আগে আপেল কেটে আপেলের বিচিগুলো সরিয়ে রাখাই উত্তম। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে আপেলের বিচিতে থাকা স্বল্প পরিমাণের হাইড্রোজেন সায়ানাইড গ্রহণ করলে শরীরের বিভিন্ন অংশ অবশ হয়ে যেতে পারে ধীরে ধীরে চিরদিনের জন্য।

প্রসূন ঘোষ রায়: পিএইচডি গবেষক (রসায়ন)

সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক, ইউএসএ


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫