ব্যয় বৃদ্ধি ও কভিডের ডেল্টা ধরনের প্রভাব

সংকোচনের মুখে এশিয়ার শিল্পোৎপাদন

প্রকাশ: আগস্ট ০৩, ২০২১

বণিক বার্তা ডেস্ক

বছরের শুরুতে কভিড-১৯ মহামারীর বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধার হচ্ছিল এশীয় অর্থনীতিগুলো। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পণ্যের তুমুল চাহিদা রফতানিনির্ভর দেশগুলোকে আশা দেখাচ্ছিল। তবে বছরের মাঝামাঝি এসে বাধার মুখে পড়েছে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া। কাঁচামালের ব্যয় বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান কভিডের সংক্রমণের মতো বিষয়গুলো গত মাসে অঞ্চলের উৎপাদন কার্যক্রমে আঘাত হানে।

রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদিও জুলাইয়ে রফতানি পাওয়ারহাউজ খ্যাত জাপান দক্ষিণ কোরিয়ার উৎপাদন কার্যক্রম বেড়েছে। তবে সংস্থাগুলো সরবরাহ চেইন সংক্রান্ত ব্যাঘাত কাঁচামালের ঘাটতিতে ভুগেছে। আর এতে সংস্থাগুলোর ব্যয়ও বেড়ে গেছে।

চাহিদা কমে যাওয়ায় এক বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো জুলাইয়ে চীনের কারখানা কার্যক্রমের প্রবৃদ্ধি দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। অর্থনৈতিক গবেষণা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের সিনিয়র চীনা অর্থনীতিবিদ জুলিয়ান ইভান্স-প্রিচার্ড বলেন, সরবরাহ চেইনে ব্যাঘাত একটি সীমাবদ্ধতা হিসেবে রয়ে গেছে। তবে পিএমআই সূচকে দেখা যায়, চাহিদার পরিমাণও কমছে। পাশাপাশি উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি শিল্প নির্মাণ কার্যক্রমকে সংকুচিত করেছে।

এদিকে পুনরায় সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং কভিডজনিত বিধিনিষেধের কারণে জুলাইয়ে ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম মালয়েশিয়ায় কারখানা কার্যক্রম সংকুচিত হয়েছে। বেসরকারি জরিপের ফলাফলে এমনটা দেখা গেছে।

জরিপগুলোতে বিশ্ব অর্থনীতিতে মহামারীজনিত বাধার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এশিয়ার চলতি বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে। এইচএসবিসির এশিয়ান ইকোনমিক রিসার্চের সহপ্রধান ফ্রেডরিক নিউম্যান বলেন, আগামী মাসগুলোতে কারখানার কার্যক্রম পুনরুদ্ধার হলেও ঝুঁকি থাকবে। কারণ প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্তের প্রভাবগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়।

চীনের মার্কিট ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) জুলাইয়ে ৫০ দশমিক পয়েন্টে নেমে এসেছে। যেখানে জুনে সূচক ছিল ৫১ দশমিক পয়েন্ট। জুলাইয়ের সূচক গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। উৎপাদন কার্যক্রমে ক্রমবর্ধমান ব্যয় বিশ্বের উৎপাদন হাবে ঝুঁকি তৈরি করেছে।

এইউ জিবুন ব্যাংক জাপানের পিএমআই সূচক জুলাইয়ে ৫৩ দশমিক শূন্য পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। সূচক জুনে ৫২ দশমিক পয়েন্ট ছিল। যদিও নির্মাতারা বলেছেন, কাঁচামালের মূল্য ২০০৮ সালের পর সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়েছে।

সম্প্রতি জাপানে কভিডের ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ বাড়ছে। এটি সরকারকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়াতে বাধ্য করেছে। করোনার ধরন দেশটিতে চলা অলিম্পিক গেমসকেও দর্শকশূন্য করতে ভূমিকা রেখেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার পিএমআই সূচক জুলাইয়ে ৫৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছিল। টানা ১০ মাস দেশটির সূচক ৫০ পয়েন্টের উপরে রয়েছে। তবে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশটির উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে।

মহামারীটি এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতিগুলোকে চাপে ফেলেছে। গত মাসে ইন্দোনেশিয়ার পিএমআই ৪০ দশমিক পয়েন্টে নেমে এসেছে। যেখানে জুনেও সূচক ৫৩ দশমিক ছিল। এছাড়া জুলাইয়ের পিএমআই জরিপে ভিয়েতনাম মালয়েশিয়ার উৎপাদন কার্যক্রমও সংকুচিত হয়েছে। তবে এখনো ডেল্টার কবলে থাকা ভারতে বিধিনিষেধ শিথিল করায় কারখানার কার্যক্রম বেড়েছে। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ দেশের বাইরে তীব্র চাহিদা অবদান রেখেছে।

একসময় বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির চালক হিসেবে বিবেচিত হলেও এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতিগুলো কভিডজনিত সংকটগুলোর সঙ্গে লড়াই করছে। পাশাপাশি ধীরগতির টিকাদান কার্যক্রম দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ চাহিদা পর্যটন খাতকে মন্দায় ফেলে দিয়েছে। ফলে দেশগুলো উন্নত দেশগুলোর চেয়ে আরো পিছিয়ে যাচ্ছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫