টিকাদান কার্যক্রমে বৈষম্য

বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য পুনরুদ্ধারে বড় হুমকি

প্রকাশ: জুলাই ৩১, ২০২১

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড-১৯ মহামারী থেকে বেরিয়ে আসতে বিশ্বজুড়ে জোর প্রচেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা। নিজেদের নাগরিকদের জন্য টিকা পেতে তৈরি হয়েছে তুমুল প্রতিযোগিতা। উন্নত দেশগুলো এরই মধ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক নাগরিককে টিকার আওতায় আনার পথে রয়েছে। পিছিয়ে আছে উন্নয়নশীল স্বল্পোন্নত দেশগুলো। চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে টিকা না পাওয়ায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দেশগুলোর টিকাদান কার্যক্রম। আর এটি বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)

ডব্লিউটিওর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সংস্থাটি সতর্ক করেছে, ব্যাপকভাবে কভিড-১৯ টিকার সরবরাহ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বাণিজ্য পুনরুদ্ধার বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কভিডের প্রথম ঝড়ে তীব্র পতনের পর ২০২০ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বিশ্ববাণিজ্য উৎপাদন প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত বেড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা শক্তিশালী মুদ্রানীতি এবং কভিডের টিকাদান কার্যক্রম অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে বেশির ভাগ সূচক পণ্যদ্রব্য বাণিজ্যের ধারাবাহিক সম্প্রসারণের বিষয়টি নির্দেশ করে।

এমন ইতিবাচক অগ্রগতি সত্ত্বেও প্রতিবেদনটিতে বৈশ্বিক অর্থনীতি জনস্বাস্থ্যের জন্য কভিড-১৯ মহামারী গুরুতর হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণ কভিডের টিকা উৎপাদন অপর্যাপ্ত রয়ে গেছে এবং টিকাপ্রাপ্তিতে বিশ্বজুড়ে তীব্র বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। মহামারীটি এখন বিশেষত স্বল্প আয়ের উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ দেশগুলো তাদের নাগরিকদের জন্য পর্যাপ্ত টিকা পেতে লড়াই করছে।

ডব্লিউটিওর ট্রেড পলিসি রিভিউ বডির পর্যালোচনা করা প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পর থেকে সংস্থার সদস্যভুক্ত দেশগুলো ৩৮৪টি কভিড-সম্পর্কিত বাণিজ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ অর্থাৎ ২৮৪টি বাণিজ্য সুবিধাজনক ব্যবস্থা এবং ৩৫ শতাংশ বা ১৩৬টি ব্যবস্থা বাণিজ্য সীমাবদ্ধ করতে প্রয়োগ করা হয়েছিল।

সীমাবদ্ধ করা সব ব্যবস্থার মধ্যে ৮৪ শতাংশ ছিল রফতানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করা। অন্যদিকে বাণিজ্য সুবিধাজনক করতে নেয়া ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে ৬০ শতাংশই ছিল আমদানি শুল্ক কর হ্রাস কিংবা বা বাদ দেয়া। ডব্লিউটিওর বেশ কয়েকটি দেশ ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জম (পিপিপি), স্যানিটাইজার, জীবাণুনাশক, চিকিৎসা সরঞ্জাম ওষুধের মতো পণ্যগুলোতে শুল্ক কমিয়ে দেয়। মহামারী মোকাবেলায় সহায়তার জন্য দেশগুলো অক্সিজেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক তুলে দিয়েছে।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মহামারীজনিত ব্যবস্থাগুলো বাতিল করা হচ্ছে। গত মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাণিজ্য সুবিধাজনক ব্যবস্থার প্রায় ২১ শতাংশ এবং সীমাবদ্ধতাগুলোর ৫৪ শতাংশ বাদ দেয়া হয়েছিল। কভিডজনিত সামাজিক অর্থনৈতিক প্রভাব কমিয়ে আনতেও ডব্লিউটিও সদস্য পর্যবেক্ষক দেশগুলো মহামারী-সম্পর্কিত অর্থনৈতিক সহায়তা দেয়া অব্যাহত রেখেছে।

ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে কৃষি, স্বাস্থ্য, উড়োজাহাজ, পরিবহন, পর্যটন, শিক্ষা সংস্কৃতি খাতের ক্ষুদ্র, ছোট মাঝারি ব্যবসাগুলোকে সহায়তায় অর্থনৈতিক আর্থিক ব্যবস্থাসহ প্রণোদনা, ঋণ অনুদান প্যাকেজ অন্তর্ভুক্ত ছিল।

প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক এনগোজি ওকনজো-ইওয়েলা বলেন, প্রতিবেদনটিতে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে সদস্যভুক্ত দেশগুলোর বাণিজ্যনীতি বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষতি কমাতে সহায়তা করেছে। তবে কভিডজনিত কিছু বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে। এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হলো, এগুলো যে স্বচ্ছ ক্ষণস্থায়ী তা নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, একটি স্বচ্ছ প্লাটফর্ম হিসেবে ডব্লিউটিও টিকা উৎপাদন সরবরাহ বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সদস্য দেশগুলোকে সম্মিলিত নেতৃত্ব দিতে, বাজারগুলো উন্মুক্ত রাখতে এবং একটি সফল ফলাফল অর্জনে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫