রেমিট্যান্স প্রণোদনা বাড়ানোর প্রস্তাব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

প্রকাশ: জুলাই ২৪, ২০২১

মেসবাহুল হক

৫০০ ডলার পর্যন্ত রেমিট্যান্সে আরো ১% প্রণোদনা

বিদেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার এতে বৈধ পথে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণও বেড়েছে তবে বৈধ পথে আরো বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স আনতে চায় সরকার এজন্য স্বল্প আয়ের প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণ ফি মওকুফ করার কথা ভাবা হচ্ছে তবে ফি কমানোর প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল, তাই প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৫০০ মার্কিন ডলার কিংবা এর চেয়ে কম রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের প্রচলিত শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি অতিরিক্ত আরো শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার প্রস্তাব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

মতামত জানিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক -সংক্রান্ত একটি চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ পর্যালোচনা শেষে সরকারের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনার পর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাবে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রবাসী কল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান-বিষয়ক জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, স্বল্প রেমিট্যান্স পাঠানো অভিবাসী কর্মীদের হুন্ডির পথ থেকে নিরুত্সাহিত করতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ফি মওকুফ করতে হবে এজন্য প্রয়োজনে উচ্চ আয়ের প্রবাসীদের প্রদত্ত সুযোগের সঙ্গে তা সমন্বয় করতে হবে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারী ১০টি ব্যাংক এবং বিভিন্ন দেশে অবস্থিত সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানাধীন ব্যাংকের সঙ্গে সভা করেছে

সভায় ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত মতামত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যালোচনায় দেখা যায়, উচ্চ আয়ের প্রবাসীদের চিহ্নিত করে তাদের প্রদত্ত সুবিধার সঙ্গে স্বল্প রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের প্রদত্ত সুযোগের সমন্বয় করা একটি জটিল দুঃসাধ্য প্রক্রিয়া এছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ৩০০টিরও বেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থার আওতায় কার্যরত রয়েছে এসব এক্সচেঞ্জ হাউজের রেমিট্যান্স ফি দেশভেদে ভিন্ন ফলে বিদেশী এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর রেমিট্যান্স ফি মওকুফ করে হিসাবায়নপূর্বক বাংলাদেশ থেকে তা পাঠানোও ব্যাংকগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তাছাড়া স্বল্প রেমিট্যান্স প্রেরণকারী বলতে কী পরিমাণ রেমিট্যান্স বোঝানো হয়, তা স্পষ্ট করে দেয়া প্রয়োজন

পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্তের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাব হচ্ছে, স্বল্প রেমিট্যান্স প্রেরণকারী চিহ্নিত করতে ৫০০ মার্কিন ডলারকে ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করা যেতে পারে একই সঙ্গে স্বল্প আয়ের প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণ ফি মওকুফ করার পরিবর্তে প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৫০০ মার্কিন ডলার বা এর সমপরিমাণ বা এর কম রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সরকার কর্তৃক বর্তমানে প্রচলিত শতাংশ প্রণোদনার অতিরিক্ত আরো শতাংশ প্রণোদনা সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে

বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের মতামত মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে এখন মন্ত্রণালয় সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, পরবর্তী সময়ে সেটাই কার্যকর হবে তবে শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার ফলে রেমিট্যান্স অনেক বেড়েছে এক্ষেত্রে আরো সুবিধা দেয়া হলে রেমিট্যান্স আরো বাড়বে

স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্তে আরো জানানো হয়, অভিবাসী কর্মীদের রেমিট্যান্স প্রেরণের সুবিধার্থে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে অন্যান্য তফসিলি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স রিসিভ করার ব্যবস্থা নিতে হবে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে ব্যাংকটি জানিয়েছে, তারা এরই মধ্যে রেমিট্যান্স রিসিভ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তাদের নস্ট্রো হিসাব খোলার প্রক্রিয়াও অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ্য, বিদেশের ব্যাংকে দেশের ব্যাংকের হিসাবকে নস্ট্রো হিসাব বলে

এদিকে করোনা মহামারীর মধ্যেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে বড় উল্লম্ফন নিয়ে শেষ হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছর গত ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রায় হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২০-২১ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ১৯৪ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন ফলে পুরো অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার বাংলাদেশী মুদ্রায় যা লাখ ১০ হাজার ৬১০ কোটি টাকার বেশি

এর আগের অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল হাজার ৮২০ কোটি ডলার হিসাবে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৬৫৭ কোটি ডলার বা ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ একক অর্থবছরে এর আগে কখনো এত রেমিট্যান্স আসেনি এক অর্থবছরে এত প্রবৃদ্ধি কখনো হয়নি

এদিকে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্সে প্রণোদনা বাবদ হাজার ৬০ কোটি টাকা রাখা হয়েছিল সর্বশেষ তথ্যমতে, অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই অর্থের অধিকাংশই ব্যয় হয়ে গেছে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে আরো বেশি করে রেমিট্যান্স আনতে চায় সরকার এজন্য চলতি অর্থবছরে বাজেটে রেমিট্যান্স খাতে প্রণোদনার পরিমাণ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করে হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে

মূলত রেমিট্যান্সে ঊর্ধ্বমুখিতার সূচনা হয় গত ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে কারণ সে অর্থবছর থেকেই সরকার সর্বপ্রথম যেকোনো পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে শতাংশ নগদ প্রণোদনা ঘোষণা করে যে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স আসে, তারাই রেমিট্যান্স প্রাপকদের শতাংশ নগদ অর্থ দিয়ে দেয় অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার স্বজন ১০২ টাকা পাচ্ছেন পরে সরকারের পক্ষ থেকে শতাংশ প্রণোদনা ভর্তুকি হিসেবে ব্যাংকগুলোকে দিয়ে দেয়া হয় শুধু সরকারি শতাংশ প্রণোদনাই নয়, বেশ কয়েকটি ব্যাংক শতাংশ প্রণোদনা অতিরিক্ত আরো শতাংশ অর্থ রেমিট্যান্স প্রাপকদের প্রদান করে আসছে


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫