চাহিদা অনুযায়ী চামড়া পাচ্ছেন না চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা

প্রকাশ: জুলাই ২৪, ২০২১

দেবব্রত রায়, চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের পরিমাণ প্রতি বছরই কমছে। বছর তিনেক আগেও চাহিদা ছিল প্রায় পাঁচ লাখ পিস। সরবরাহ সংকটে যা এখন কমে সাড়ে তিন লাখে নেমেছে। এর পরও চাহিদা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া আদায় না হওয়ায় পুঁজি সংকটে রয়েছেন অনেক চামড়া ব্যবসায়ী। এবার তাতে যোগ হয়েছে করোনা সংক্রমণের প্রভাব। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বছর কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় সাড়ে তিন লাখ পিস। কিন্তু গত তিনদিনে মাত্র দুই লাখ চামড়া সংগ্রহ করতে পেরেছেন আড়তদাররা। লক্ষ্যমাত্রার বাকি চামড়া সংগ্রহ নিয়ে আশঙ্কায় আছেন নগরীর ব্যবসায়ীরা।

জানা যায়, চট্টগ্রামে একসময় ২০টির বেশি ট্যানারি ছিল। সে সময় চামড়ার রমরমা ব্যবসা ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নগরীর সেই জৌলুস হারিয়েছে। চট্টগ্রামে এখন একটি মাত্র ট্যানারি রয়েছে। রিফ লেদার নামের ট্যানারিটি এবার আড়তদারদের কাছ থেকে এক লাখ পিস চামড়া কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা চট্টগ্রামের মোট সংগ্রহের প্রায় ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ বাকি ৭০ শতাংশ চামড়া বিক্রি করতে হবে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে।

আড়তদাররা জানান, গত তিনদিনে দুই লাখ পিসের কাছাকাছি চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। বাকি চামড়া এখনো আড়তে আসেনি। এজন্য অপেক্ষা করছেন তারা। তবে এবারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা তাদের।

আড়তদারদের ভাষ্য অনুযায়ী, চামড়ার চাহিদা থাকলেও প্রতি বছরই সংগ্রহ কমে আসছে। সর্বশেষ গত বছর সংগ্রহ করা হয়েছিল প্রায় লাখ ৬০ হাজার পিস। যেখানে কয়েক বছর আগেও চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর চামড়ার গড় চাহিদা ছিল পাঁচ লাখ পিসের কাছাকাছি। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী সংগ্রহ না হওয়ায় প্রতি বছরই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনা হচ্ছে। এর পরও লক্ষ্য অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করতে পারছেন না তারা। 

এদিকে চামড়া সংগ্রহের ক্ষেত্রে এবার আড়তদারদের ব্যয় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তারা। মূলত লবণের দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য খরচ বাড়ছে বলে দাবি তাদের। নগরীর আতুরার ডিপোর আড়তদাররা জানান, রমজানের ঈদের পরে লবণের বস্তা (৭৪ কেজি) বিক্রি হয়েছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে। কোরবানির ঈদের আগের দিন যা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা বিক্রি হয়। তবে কোরবানির ঈদের দিন কিনতে হয়েছে ৭০০ টাকায়। সে হিসাবে একদিনের ব্যবধানে লবণের দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা। একটি চামড়া সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় ১০ কেজি লবণ প্রয়োজন। সুতরাং এক বস্তা লবণে সাত থেকে আটটি চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা যায়। অবস্থায় সংরক্ষণ করা চামড়া বিক্রি করে লাভ করতে পারবেন না বলে মনে করছেন তারা। 

জানা গেছে, ট্যানারি মালিকরা তিন থেকে চার বছর আগের পাওনা টাকা না দেয়ায় পুঁজি হারিয়ে ব্যবসা ছেড়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। তিন বছর আগে চট্টগ্রামে সমিতিভুক্ত বাইরে মিলিয়ে ২৫০ আড়তদার ছিলেন। কিন্তু লোকসানে পড়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন শতাধিক আড়তদার।

বছর চাহিদা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা আছে বলে মনে করেন বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে বছর প্রায় চার লাখ পশু কোরবানি দেয়া হয়েছে। ঈদের দিনই চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের আড়তে লবণযুক্ত চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে প্রায় লাখ ২৫ হাজার পিস। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে চলতি বছরের চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে তিন লাখ পিস। চট্টগ্রামের বিভিন স্থানে চামড়াগুলো লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা আছে। সব চামড়া আসার পরে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে কিনা বলতে পারব।

চট্টগ্রামে একমাত্র ট্যানারি রিফ লেদার লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান চামড়া সংগ্রহ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা বছর প্রায় এক লাখ পিস (ছাগল গরু) চামড়া সংগ্রহের লক্ষমাত্রা ঠিক করেছি। আড়তদারদের কাছ থেকে কয়েক দিন পরে চামড়া সংগ্রহ শুরু করব। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, তাতে কোনো গ্রেড উল্লেখ করে দেয়নি। আমরা কোম্পানির গ্রেড অনুযায়ী আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া কিনব।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫