ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া ৫০ কোটি টাকা

অর্ধেক চামড়াই সংগ্রহ করতে পারেননি সিলেটের ব্যবসায়ীরা

প্রকাশ: জুলাই ২৪, ২০২১

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, সিলেট

দরপতন আর ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পড়ে থাকায় এবার চামড়া নিয়ে শুরু থেকেই অনাগ্রহী ছিলেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা। ফলে পুঁজির অভাবে এবার কোরবানি হওয়া পশুর চামড়া অর্ধেকও সংগ্রহ করতে পারেননি তারা। আবার সংগৃহীত চামড়ার দাম পাওয়া নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।

সিলেট জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে গেছে, বছর ঈদে সিলেট জেলায় প্রায় দুই লাখ বিভাগে প্রায় চার লাখ পশু কোরবানি দেয়া হয়েছে। চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার সিলেট জেলা থেকে প্রায় ৭০ হাজার চামড়া সংগ্রহ করতে পেরেছেন তারা। বাকিগুলো মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নিয়ে গেছেন। কিছু চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে বলেও ধারণা তাদের। কিছু চামড়া পাচার হয়ে যেতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পুলিশ বলছে, এবার কোনো চামড়া পাচার হয়নি। সীমান্ত এলাকায় পুলিশের কঠোর নজরদারি ছিল।

গতকাল সিলেট নগরের ঝালোপাড়া এলাকার চামড়া আড়তে গিয়ে দেখা যায়, লবণ বিছিয়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাতে ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। চামড়া ব্যবসায়ী ফরিদ আহমদ বলেন, এবার পাঁচশর মতো চামড়া সংগ্রহ করেছি। তবে চামড়ার নায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছি। লবণের দামও অনেক বেড়েছে। ফলে প্রক্রিয়াজাতের খরচ বেড়ে গেছে।

সিলেট শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শামীম আহমদ বলেন, এবার সিলেটের ব্যবসায়ীরা ৭০ হাজারের মতো চামড়া সংগ্রহ করেছেন। পুঁজি সংকটে বাকি চামড়া সংগ্রহ করতে পারেননি। বকিগুলো মৌসুমি ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করেছেন। কিছু সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারও হয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, দাম কমে যাওয়া, লকডাউন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, পরিবহন সমস্যা, ট্যানারি মালিকদের বকেয়া পরিশোধে গড়িমসিসহ নানা জটিলতার কারণে চামড়া ব্যবসায় এখন আর আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের।

ট্যানারি মালিকদের কাছে সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীদের প্রায় ৫০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে জানিয়ে বলেন, টাকা আটকে থাকায় ব্যবসায়ীদের কাছে লগ্নি করার মতো যথেষ্ট টাকা নেই। ফলে অর্ধেকের বেশি চামড়াই তারা সংগ্রহ করতে পারেননি। চামড়ার দরপতনের কারণেও ব্যবসায়ীরা এখন চামড়া সংগ্রহে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে চামড়া যাতে নষ্ট না হয়, তাই সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে এবার বিনা খরচে চামড়া প্রক্রিয়াকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। লক্ষ্যে দক্ষিণ সুরমার পারাইচকে ঈদের দিন বিকাল থেকে খোলা হয়েছে অস্থায়ী চামড়া প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র।

সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফুর রহমান বলেন, গত বছরও দাম না পেয়ে অনেকে চামড়া ফেলে দিয়েছেন। এছাড়া নগরের যেখানে-সেখানে প্রক্রিয়াজাত ছাড়াই চামড়া বিক্রি করতে দেখা গেছে। এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়।

তিনি বলেন, চমড়া নষ্ট হওয়া কমাতে এবং নগরের পরিবেশ রক্ষায় সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নির্দেশে বিনামূল্যে চামড়া প্রক্রিয়াকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশন। জন্য পারাইচকে প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যে কেউ চামড়া নিয়ে এলে এখানে সিটি করপোরেশনের খরচে প্রক্রিয়াজাত করে দেয়া হচ্ছে।

এবার কোনো চামড়া পাচার হয়নি জানিয়ে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, চামড়ার পাচার ঠেকাতে এবার পুলিশ কঠোর অবস্থানে ছিল। বিশেষত সীমান্ত এলাকায় কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে। ফলে এবার কোনো চামড়া পাচার হয়নি।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫