এ মাসের ৩ তারিখে বলিউড তারকা আমির খান ও কিরণ রাওয়ের বিবাহ বিচ্ছেদের খবরে তাদের ভক্ত, দর্শকরা চমকে উঠেছিলেন। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোয় কয়েক দিন বিশেষ মনোযোগ পেয়েছে এ খবর। নিজেরা বেশ গুছিয়েই এ বিচ্ছেদের খবর প্রকাশ করেছেন আমির ও কিরণ। নিজেদের যৌথ বিবৃতিও মানুষকে পড়িয়েছেন। সবাই জেনেছেন শান্তিপূর্ণ ও সচেতনভাবেই আলাদা হয়েছেন তারা। জানিয়েছেন সন্তানদের দেখাশোনাও তারা একসঙ্গে করবেন। অবশ্য তাদের বেশ আগে থেকেই বলিউডে এই ধীর-স্থির, সচেতন বিচ্ছেদের রীতি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। হূতিক রোশন-সুজানা খান, ফারহান আখতার-অধুনা ভবানি, রণবীর শোরে-কংকনা সেনশর্মা ভেবেচিন্তে, গুছিয়ে তাদের বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন।
১৩ বছরের বৈবাহিক সম্পর্কের ইতি টানার পরও হূতিক ও সুজানা তাদের ছেলেদের জন্য সুযোগ পেলেই একত্র হন। এমনকি ভারতে লকডাউনের সময় সন্তানদের যেন বাইরে যেতে না হয়, তাই সুজানা হূতিকের বাসায় উঠেছিলেন। তাই কো-প্যারেন্টিংয়েও আমির কিংবা কিরণ নতুন কোনো রীতি প্রতিষ্ঠা করেননি। রণবীর শোরে ও কংকনা সেনশর্মাও যৌথভাবে তাদের সন্তানদের দেখাশোনা করেন। বিচ্ছেদে যৌথ বিবৃতি দিয়েছিলেন ফারহান ও অধুনাও।
বলিউডে বিবাহ বিচ্ছেদের এ রকম নিখুঁত ঘটনাগুলোর পেছনে প্রায়ই আড়ালে থাকে সেগুলোর আর্থিক দিকটি। অবশ্য সেলিব্রেটিদের এ দিকটি মোটেই সাদামাটা নয়। এখানে বলিউডের কয়েকটি সেলিব্রেটি দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদের আর্থিক লেনদেনের হিসাব তুলে ধরা হলো।
২০১৪ সালে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেন কারিশমা কাপুর ও সঞ্জয় কাপুর। এরপর ২০১৬ সালে বলিউডের এ তারকা দম্পতির আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়। এ বিচ্ছেদের আইনি প্রক্রিয়ায় যুক্ত একজন আইনজীবী বলেছিলেন, সঞ্জয়ের বাবার বাড়িটি কারিশমার নামে করে
দেয়া হয়েছিল। অন্যদিকে সঞ্জয়কে সন্তানদের জন্য ১৪ কোটি রুপির বন্ড কিনতে হয়েছিল, যার মাসিক মুনাফা ছিল প্রায় ১০ লাখ রুপি।
বলিউডের আরেক তারকা দম্পতি সাইফ আলী খান ও অমৃতা সিং আলাদা হয়েছিলেন উভয়ের সম্মতিতেই। পরবর্তী সময়ে সাইফ প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘অমৃতাকে ৫ কোটি রুপি দেয়ার কথা ছিল, যার মধ্যে আড়াই কোটি এরই মধ্যে দিয়ে দিয়েছি। এছাড়া আমার ছেলের ১৮ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত আমি মাসে এক লাখ রুপি করে দিচ্ছি। আমি তো আর শাহরুখ খান নই। আমার অত টাকা নেই। আমি অমৃতাকে কথা দিয়েছিলাম বাকি টাকাও পরিশোধ করার এবং আমি তা করব, তা আমার মৃত্যু হলেও।’ মুখ্য বিষয় না হলেও বিচ্ছেদের সঙ্গে আর্থিক ব্যাপারটি ঘনিষ্ঠভাবেই জড়িয়ে থাকে। সেটা ঠিকঠাক মতো পালিত না হলেই বেরিয়ে আসে নানা কথা। তবে সাইফ যেমনটা করেছেন, বিষয়গুলো তারকারা নিজেদের মধ্যেই শান্তিপূর্ণভাবে সেরে নিতে চান। ম্রুনালিনি দেশমুখ ভারতের অনেক সেলেব্রেটিদের বিবাহ বিচ্ছেদের আইনি প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন। হূতিক রোশন ও সুজানা খানের বিচ্ছেদে হূতিকের আইনজীবী ছিলেন তিনি। তার মতে, তারকারা বিচ্ছেদের অর্থনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে আদালতে গেলে তা তাদের টাকা, সময়, আবেগ সবকিছুর জন্যই ক্ষতিকর হয়। নানাভাবে বিব্রতও হতে হয়। তাই তারা বোঝেন এসব বিষয় নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করে নেয়াই ভালো।
ফারহান আখতার ও অধুনা ভবানির বিচ্ছেদ হয় ২০১৬ সালে। শোনা যায় ফারহান অধুনাকে এককালীন অংকের অর্থ পরিশোধ করেছিলেন। সঙ্গে মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় ১০ হাজার বর্গফুটের বাংলোটিও পান অধুনা।
টাকার অংক বিবেচনায় বলিউডে এ-যাবৎ সবচেয়ে আলোচিত বিচ্ছেদ ছিল হূতিক রোশন ও সুজানা খানের। ২০০০ সালে বিয়ে করেছিলেন এ যুগল। শোনা যায় ২০১৪ সালে বিচ্ছেদের সময় সুজানা ৪০০ কোটি রুপি দাবি করেছিলেন হূতিকের কাছে এবং গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী শেষমেশ হূতিক সুজানাকে ৩৮০ কোটি রুপি পরিশোধ করেছেন। অবশ্য হূতিক টুইটারে এ খবর গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তবে ভারতীয় গণমাধ্যমে এখনো ৩৮০ কোটি রুপির খবরটিই টিকে আছে।
সঞ্জয় দত্তের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন রিয়া পিল্লাই। বিচ্ছেদের পর সঞ্জয় স্ত্রীকে দিয়েছিলেন সাগরমুখী একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ও গাড়ি। এছাড়া মাসে মাসে অনেক দিন আর্থিক দায় পরিশোধ করতে হয়েছে সঞ্জয়কে।
বলিউড ও দক্ষিণের ইন্ডাস্ট্রির আলোচিত নাম প্রভু দেবা। প্রথম স্ত্রী রামলাথের সঙ্গে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয় ২০১১ সালে। রামলাথ পেয়েছিলেন ২০-২৫ কোটি রুপির সম্পত্তি ও একটি গাড়ি।
অবশ্য আমির খানের দুবার বিবাহ বিচ্ছেদের আর্থিক বিষয়াদির কোনো খবর বাজারে আসেনি। মি. পারফেকশনিস্ট এক্ষেত্রেও দেখিয়েছেন তার দক্ষতা।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া