শতকোটি টিকার প্রতিশ্রুতিতে শেষ হলো জি৭ সম্মেলন

প্রকাশ: জুন ১৪, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী এক বছরে দরিদ্র দেশগুলোকে অতিরিক্ত ১০০ কোটি ডোজ করোনা টিকা প্রদানের প্রতিশ্রুতিতে শেষ হলো জি৭ সম্মেলন। বৈশ্বিক মহামারীর ইতি ঘটানো এবং বিশ্বের ধনাঢ্য দেশগুলোর জোটের সহযোগিতার ভিত মজবুত করারও অঙ্গীকার করা হয়। নতুন করে টিকার অঙ্গীকারের প্রভাব খুবই সীমিত থাকবে, কারণ এতে আগের প্রতিশ্রুত টিকাও রয়েছে। তবে টিকা নিয়ে দরিদ্র দেশগুলো বর্তমানে যেভাবে হিমশিম খাচ্ছে তাতে কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচার ফুরসত মিলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর ব্লুমবার্গ রয়টার্স।

এবারের জি৭ সম্মেলনে করোনা মহামারী থেকে উত্তরণের ওপরই সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে। মহামারীর শুরুতে ২০০ কোটি করোনা টিকার অঙ্গীকার করেছিল জি৭। এবারের সম্মেলনে এক বছরের মধ্যে ১০০ কোটি টিকা সরবরাহের অঙ্গীকার করেছে তারা। এছাড়া করোনার উৎস অনুসন্ধানে সময়োচিত, স্বচ্ছ, বিশেষজ্ঞ নেতৃত্বাধীন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা পরিচালিত হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জি৭ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছেন জো বাইডেন। ওয়াশিংটন আলোচনার টেবিলে ফিরে এসেছে দাবি করে তিনি বলেন, বৈশ্বিক হুমকি মোকাবেলার একমাত্র পথ হচ্ছে একসঙ্গে কাজ করা। অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের পিছুটান জি৭ নেতা দেশগুলোর নাগরিকদের কাছে ব্যাপকভাবে অনুভূত হয়েছে।

তিনি দাবি করেন, বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার কাজে ফিরে এসেছে আমেরিকা। বিশ্বব্যাপী টিকা সরবরাহ নিশ্চিত, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার তত্পরতা চালানো, জ্বালানি অবকাঠামো নির্মাণ থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে জি৭ নেতাদের সঙ্গে কাজ করে যাবে ওয়াশিংটন।

গত শুক্রবারেই টিকা নিয়ে পরিকল্পনা জানাচ্ছিলেন জি৭ নেতারা। এর আগের দিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি উদ্যোগে ৫০ কোটি ডোজ ফাইজার বায়োএনটেক টিকা অনুদানের অঙ্গীকার করা হয়। জি৭ জোটের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র টিকা সরবরাহ করবে। দরিদ্র দেশগুলোর জন্য প্রতিশ্রুত ১০০ কোটি টিকার বাকিগুলো থাকবে ডব্লিউএইচও অনুমোদিত কোভ্যাক্স। বিশ্লেষকরা বলছেন, জি৭ নেতারা নতুন করে টিকা অনুদান বাড়ানোর কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি, আগের প্রতিশ্রুতিরই পুনরাবৃত্তি করেছেন। বর্তমানে দরিদ্র দেশগুলোতে যেখানে ৫০০-৬০০ কোটি টিকা লাগবে সেখানে জি৭-এর প্রতিশ্রুতি নেহাতই নগণ্য। এছাড়া টিকাগুলো কেমন সময়ের ব্যবধানে দেয়া হবে তাও স্পষ্ট করা হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ে টিকা সরবরাহ না হলে পুরো টিকা কার্যক্রম ব্যাহত হবে। এছাড়া কোভ্যাক্সের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। বিশ্বব্যাপী মাত্র কোটি ৩০ লাখ টিকা সরবরাহে সক্ষম হয়েছে কোভ্যাক্স। ধনী দেশগুলো নিজেদের জনসংখ্যার কয়েক গুণ টিকা মজুদ করায় সরবরাহ নিশ্চিতে হিমশিম খাচ্ছে কোভ্যাক্স।

টিকা বিতরণ অবকাঠামো নির্মাণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য হাজার ২০০ কোটি ডলারের লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) দেয়ার প্রতিশ্রুতি করেছিল বিশ্বব্যাংক। কিন্তু দেশগুলোর সরকার মাত্র ৩০০ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছে। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ওয়ান ক্যাম্পেইনের নির্বাহী পরিচালক এডউইন ইখুরিয়া বলেন, নিম্ন আয়ের দেশগুলো তাদের ঋণের বোঝা বাড়াতে নারাজ। এজন্য বিশ্বব্যাংক উদারহস্তে বসে থাকলেও ঋণ গ্রহণ করছে না তারা।

এখন প্রতিশ্রুত টিকা দ্রুত চালান এবং দরিদ্র উন্নয়নশীল দেশগুলোর হাতে পৌঁছে দেয়ার কথা বলছেন বিশ্লেষকরা। মেডিসিনস স্যানস ফ্রন্টিয়ারের জ্যেষ্ঠ টিকা উপদেষ্টা ক্যাট এল্ডার বলেন, কীভাবে ধনী দেশগুলো দ্রুততার সঙ্গে তাদের টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং কীভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে তাতে আকাশপাতাল বৈষম্য নজরে পড়বে। মহামারী থেকে উত্তরণে এখন দ্রুততার সঙ্গে তাদের হাতে টিকা পৌঁছা দরকার।

ডব্লিউএইচওর প্রাক্কলন, ভাইরাস মোকাবেলায় অন্তত হাজার ১০০ কোটি ডোজ টিকা লাগবে। সেক্ষেত্রে শীর্ষ ধনী দেশগুলোর মাত্র ১০০ কোটি টিকার প্রতিশ্রুতি খুবই অপ্রতুল। জি৭ নেতাদের নৈতিক ব্যর্থতাকে ক্ষমার অযোগ্য মনে করেন সমালোচকরা।

যুক্তরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলবর্তী শহর কর্নওয়ালে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী সম্মেলনে রাশিয়া চীনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত অবস্থানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি র্যানসমওয়্যার সাইবার হামলায় রাশিয়াভিত্তিক বিভিন্ন গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা এবং এতে মস্কোর ভূমিকার নিন্দা জানানো হয়। হংকং জিনজিয়াংয়ে চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা যেতে পারে, নিয়েও নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তবে জোরপূর্বক শ্রম নিয়ে বেইজিংয়ের নাম উল্লেখ করা থেকে বিরত ছিল জি৭। এমনকি সম্মেলন-পরবর্তী সম্মেলনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ আশ্বস্ত করেন, চীনবিরোধী কোনো ক্লাব নয় জি৭। এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণমুক্ত পরিবহন অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কেও তেমন উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়নি।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫