ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও অনলাইন পরীক্ষায় অনাগ্রহী!

প্রকাশ: জুন ১৪, ২০২১

সাইফ সুজন

৮০ শতাংশই বিপক্ষে

গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে ভিন্নধর্মী একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা পায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি (বিডিইউ) তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সেশনজটমুক্ত উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা। যদিও কার্যক্রম শুরুর তিন বছরে শিক্ষার্থীদের অনলাইন পরীক্ষা পদ্ধতিতে আগ্রহী করতে পারেনি ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। বিডিইউর নিজস্ব একটি জরিপের তথ্য বলছে, সেখানকার ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীই অনলাইনে আয়োজিত পরীক্ষায় অংশ নিতে অনাগ্রহী।

জানা যায়, করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে অনলাইনে দুটি সেমিস্টারের পাঠদান কার্যক্রম শেষ করেছে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে সশরীরে কয়েকটি কোর্সের সেমিস্টার পরীক্ষা নিলেও করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে সেটি স্থগিত করতে হয়। নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় সম্প্রতি অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের মতামত জানতে একটি জরিপ পরিচালনা করে কর্তৃপক্ষ। অধ্যয়নরত ২০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে জরিপে অংশ নেন ১৬৮ জন শিক্ষার্থী।

জরিপের ফলে দেখা যায়, অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে মত দেন মাত্র ৩৩ জন। বাকি ১৩৫ জনই সশরীরে পরীক্ষায় অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। অর্থাৎ তথ্য-প্রযুক্তিকেন্দ্রিক বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীই অনলাইনে পরীক্ষায় বসতে অনাগ্রহী। শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারছে না উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

জরিপের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক . মুনাজ আহমেদ নূর বণিক বার্তাকে বলেন, বিষয়টি এমন নয় যে আমাদের অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার সক্ষমতা নেই। অনলাইনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণের সব ধরনের প্রস্তুতি ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীরা আগ্রহী না হওয়ায় পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা অনলাইনে শিক্ষার্থীদের মতামত সংগ্রহ করি। সেখানে অধিকাংশ শিক্ষার্থী অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার বিপক্ষে মত দেয়। এজন্য আমরা অনলাইনে পরীক্ষা নিইনি।

ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইন পরীক্ষায় অনাগ্রহ কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য . মুনাজ আহমেদ বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে টানা দুটি সেমিস্টারের পাঠদান অনলাইনে সম্পন্ন করেছি। শিক্ষার্থীরা সেখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে। আসলে অনলাইনে টানা ক্লাস করে শিক্ষার্থীরা এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।

অনলাইনে পরীক্ষা নিতে না পেরে সম্প্রতি সশরীরে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। গত শনিবার একাডেমিক কাউন্সিলের সভা করে আগামী আগস্ট থেকে সশরীরে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রসঙ্গে ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের আগ্রহ না থাকায় অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। এখন একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আগস্ট থেকে সশরীরে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

গত বছর করোনা প্রাদুর্ভাবের পর পরই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনের মাধ্যমে পাঠদান এগিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয় ইউজিসি। শুরুর দিকে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি না দিলেও করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটায় এক পর্যায়ে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি দেয় উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা। এক্ষত্রে একাডেমিক কাউন্সিলের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরামর্শ দেয় ইউজিসি। যদিও কমিশনের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পরও অনলাইন পরীক্ষা আয়োজনের উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কেই। বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডেকে জুলাই-আগস্টের দিকে সশরীরে পরীক্ষা গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করছে। যদিও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে সশরীরে এসব পরীক্ষা নেয়া নিয়েও বেশ অনিশ্চয়তা রয়েছে। অন্যদিকে করোনাকালে পুরোদমে অনলাইনভিত্তিক পরীক্ষা নিচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এমনকি করোনার মধ্যেই অনলাইনে সমাবর্তন করে গ্র্যাজুয়েটদের ডিগ্রিও দিয়েছে বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক . দিল আফরোজা বেগম বণিক বার্তাকে বলেন, শুধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় নয়; অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও অনলাইনে পরীক্ষা দিতে চাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আমাদের এমন তথ্যই জানানো হচ্ছে।

বিডিইউ অনুমোদন পায় ২০১৬ সালে। সংসদে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিল উত্থাপন হলে বিষয়ে ব্যাপক আশা প্রকাশ করে ভিন্নধর্মী একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী তত্কালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। যদিও কার্যক্রম শুরুর পর থেকে অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই এগোচ্ছে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ও। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য এবং খুলনা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক . মুহাম্মদ আলমগীর বণিক বার্তাকে বলেন, অনুমোদনের সময় ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনেক বড় স্বপ্নের কথা বলা হয়েছিল। পিএইচডি ছাড়া শিক্ষক দেয়া হবে না; ভিন্ন বেতন কাঠামোসব মিলিয়ে ভিন্নধর্মী একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার কথা শুনেছিলাম। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়টির গত কয়েক বছরের পথচলায় সে ধরনের কার্যক্রম চোখে পড়েনি। অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই গতানুগতিকভাবে চলছে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। এখন যদি ভর্তি কার্যক্রম থেকে শুরু করে পাঠদান পরীক্ষা কার্যক্রম অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চলে, তাহলে সেখানকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভিন্ন কিছু প্রত্যাশা করাও কঠিন।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫