বিবিএস কেবলসের পরিচালকদের জরিমানা মওকূফ করেছে বিএসইসি

প্রকাশ: মে ৩১, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইনসাইডার টেডিং ও মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ না করার কারণে গত বছর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি বিবিএস কেবলস লিমিটেডের পরিচালক ও তাদের নিকটাত্মীয়দের বড় অংকের জরিমানা করেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিশনের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন কোম্পানিটির পরিচালকেরা। আপিলে কোম্পানির ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে করা জরিমানা সম্প্রতি মওকূফ করেছে বিএসইসি।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বিবিএস কেবলসের শেয়ারের অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের কারণ চিহ্নিত করতে ২০১৭ সালের ২২ আগষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে ইনসাইডার টেডিংয়ের বিষয়টি উঠে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনফোর্সমেন্ট শুনানি শেষে বিএসইসির ৭৩৫তম কমিশন সভায় বিবিএস কেবলসের পরিচালক ও তাদের নিকটাত্মীয়দের ৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে বিবিএস কেবলসের তত্কালীন চেয়ারম্যানের স্ত্রী খাদিজা তাহেরাকে ৩ কোটি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু নোমান হাওলাদারকে ১ কোটি, তার ভাই আবু নাইম হ্ওালাদারকে ১০ লাখ, তার আত্মীয় ফরহাদ হোসেনকে ৩০ লাখ এবং বিবিএস কেবলসের মনোনীত পরিচালক সৈয়দ ফেরদৌস রায়হান কিরমানিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। এর বাইরে বিবিএস কেবলসের শেয়ার কারসাজির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় সেসময় কবির আহমেদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসকে ২৫ লাখ, ব্রোকারেজ হাউজ প্রুডেনশিয়াল ক্যাপিটালকে ৫৫ লাখ টাকা, আব্দুল কাইয়ুম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটকে এক কোটি ৮০ লাখ, মো. নজরুল ইসলাম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটকে ২৫ লাখ, সৈয়দ আনিসুর রহমানকে ২৫ লাখ ও হাসান জামিলকে ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। এছাড়া যথাসময়ে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ না করার কারণে বিবিএস কেবলসের প্রত্যেক পরিচালকে (স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যতিত) ১০ লাখ টাকা করে মোট ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে কমিশন।

বিএসইসির এসব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেন বিবিএস কেবলসের পরিচালকেরা। আপিলে তারা ইনসাইডার ট্রেডিং ও মূল সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ না করার বিষয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের বিষয়ে বিবিএস কেবলসের পক্ষ থেকে কমিশনকে জানানো হয় যে, পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট আইন-কানুন সম্পর্কে তাদের সম্যক ধারণা না থাকায় তারা মনে করেছিলেন যে শুধুমাত্র কোম্পানির পরিচালকদের ক্ষেত্রে শেয়ার কেনা-বেচায় বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু তাদের নিকটাত্মীয়দের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো বিধি নিষেধ নেই। এ কারণে কোম্পানিটির পরিচালকদের নিকটাত্মীয়রা সেসময় কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন করেছিলেন। ফলে অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য তারা কমিশনের কাছে জরিমানা মওকূফের আবেদন করেন। যেহেতু কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে এর পরিচালক ও তাদের নিকটাত্মীয়রা সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করেছেন সেহেতু তাদেরকে পুরোপুরি দায়মুক্তি না দিলেও তাদের বক্তব্য বিবেচনায় নিয়ে ইতিপূর্বে করা ৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা জরিমানার ৬৫ শতাংশ মওকূফ করে কমিশন। এরইমধ্যে এ অর্থ পরিশোধ করে দিয়েছেন কোম্পানিটির পরিচালক ও তাদের নিকটাত্মীয়রা।

অন্যদিকে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ না করার বিষয়ে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে কমিশনের কাছে উপস্থাপিত ব্যাখ্যা অনুসারে, যে ধরনের তথ্য প্রকাশ না করার কারণে তাদের জরিমানা করা হয়েছে সেটি আদতে মূল্য সংবেদশীল তথ্যের আওতায় পড়ে না। কোম্পানি তার স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিয়মিতই পণ্য কেনার কার্যাদেশ পেয়ে থাকে। কিন্তু এটিকেই মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হিসেবে গণ্য করে প্রকাশ না করার দায়ে তাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে। এমনকি এ ধরনের তথ্য এরপর থেকে নিয়মিতই স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে পাঠাতে থাকে কোম্পানি। কিন্তু এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে  কোম্পানিকে জানানো হয় যে, এ ধরনের তথ্য মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের আওতায় পড়ে না। ফলে তাদেরকে স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে এ ধরনের তথ্য না পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে ডিএসই। কোম্পানিটির এ বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয়ে ইতিপূর্বে কোম্পানিটির প্রত্যেক পরিচালকের(স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যতিত) ১০ লাখ টাকা করে মোট ৫০ লাখ টাকার জরিমানা মওকূফের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

জানতে চাইলে বিবিএস কেবলসের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবু নোমান হাওলাদার বণিক বার্তাকে বলেন, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ না করা এবং ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের অভিযোগে বিএসইসি আমাদের জরিমানা করেছিল। এরমধ্যে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ না করার বিষয়ে আমাদের ব্যাখ্যা কমিশন গ্রহণ করেছে। এজন্য ইতিপূর্বে কোম্পানির পাঁচ পরিচালকের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা মওকূফ করেছে কমিশন। অন্যদিকে ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের অভিযোগের বিষয়ে আমরা কমিশনকে জানিয়েছে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধানের বিষয়ে সম্যক ধারণা না থাকায় পরিচালকদের নিকটাত্মীয়রা ভুলবশত কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করেছেন। এ বিষয়ে কমিশন আমাদের বক্তব্য গ্রহণ করলেও যেহেতু সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন হয়েছে সে কারণে এর আগে করা জরিমানার ৬৫ শতাংশ মওকূফ করেছে। আমরাও এরইমধ্যে  জরিমানার অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি করেছি।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫