ভারতের গ্রাম অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে কভিডের উচ্চ সংক্রমণ

প্রকাশ: মে ০৭, ২০২১

বণিক বার্তা অনলাইন

আরো শনাক্ত ও মৃত্যুর আশঙ্কা

চলমান কভিড-১৯ সংক্রণের কারণে গতকাল সর্বোচ্চ শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড দেখেছে ভারত। একইসঙ্গে সংক্রমণের এমন উচ্চহার শহরের পাশাপাশি দেশটির গ্রাম অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে। ফলে দেশটির কভিড সংক্রমণ ও মৃত্যু হার আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। খবর রয়টার্স

এর আগে, বুধবারের এক সরকারি পূর্বাভাসেও স্বাস্থ্যখাতে এমন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়, হাসপাতালগুলোতে শয্যা ও মেডিকেল অক্সিজেনের ভয়াবহ সংকট দেথা যাবে। যদিও সরকারি পূর্বাভাসের এমন আশঙ্কার বাস্তব চিত্র দেখা গেছে অনেক রাজ্যেই।  ভারতের মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন শহরে হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যার অভাবে রোগীদের গাছের নিচে কম্বল বিছিয়ে চিকিসা সেবা দেয়া হচ্ছে।

গত ২৪ ঘণ্টা দেশটিতে ৪ লাখ ১৪ হাজার ১৮৮ জন লোকের শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ৯১৫ জনের। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী,  দেশটিতে মোট সংক্রমণ পৌঁছেছে দুই কোটি ১০ লাখে মৃত্যু হয়েছে দুই লাখ ৩০ হাজার ১৬৮ জনের।

একইসময়ে নয়া দিল্লি এবং অন্যান্য অনেক শহরেও সংক্রমণ ও মৃত্যু হার বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি ও শনাক্তকরণ সুবিধার অভাবে এমন ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের ঘটনা দেশটির প্রায় ৭০ শতাংশ তথা ১৩০ কোটি মানুষের বসবাসস্থল হিসেবে গ্রামাঞ্চলগুলোর জন্য উচ্চঝুঁকি বহন করছে।  

এমন নাজুক পরিস্থিতিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কর্তৃক কভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ভ্যাকসিনের পেটেন্ট উন্মুক্ত করার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পেটেন্ট উন্মুক্ত করার ফলে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম আরো বিস্তৃতি লাভ করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে কয়েক মাস সময় অতিবাহিত হতে পারে।

বিশ্বের অন্যতম ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী দেশ হিসেবে খ্যাতি রয়েছে ভারতের। তা সত্ত্বেও নিজেদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ভ্যাকসিন উপাদন করতে বেগ পেতে হচ্ছে দেশটিকে। দেশটির দুটি ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান দুই মাসের বেশি সময় নিচ্ছে তাদের মাসিক উপাদন লক্ষ্যমাত্রকে ৭-৮ কোটি ডোজ থেকে ১১ কোটির বেশি ডোজে উন্নিত করার জন্য। এখন পর্যন্ত মোট ১৫ কোটি ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন উপাদন করেছে ভারতীয় ভ্যাকসিন প্রস্তুককারক প্রতিষ্ঠানগুলো।

বৃহস্পতিবার র্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানান, ভ্যাকসিপাদন বৃদ্ধিতে যা করা প্রয়োজন, সে ব্যবস্থাই গ্রহণ করতে হবে। এইকসঙ্গে ভ্যাকসিন উপাদনের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের আর কোনো খাতে ব্যবহার করা যাবে না

বিগত কিছু দিনে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সমাবেশের জেরে দেশটিতে কভিডের দ্বিতীয় ধাপে দ্রুত সংক্রমণ বাড়ছে। এ জন্য যথেষ্ট সমালোচিত হয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। এসব সমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশটিতে কভিডের উচ্চসংক্রমণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে ধারনা সংশ্লিষ্টদের। কভিডের এমন উচ্চহার হ্রাস করতে দেশটির বেশ কিছু রাজ্য কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এমন কঠোর লকডাউন জারি করতে বেশ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সংক্রমণ হার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার দেশটির দক্ষিণাঞ্চরের রাজ্য কেরালা সরকার রোববার থেকে নয়দিন রাজ্যে জনগণের চলাচলের পর কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে।

এদিকে করোনায় মৃত্যু হার বেড়ে যাওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরেই দেশটির শ্মশানগুলোতে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। দিল্লির শ্মশানগুলোর মেঝে ও তাকগুলো মাটি দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। শ্মশানের যত্রতত্র ছাইভর্তি ইস্পাতের কন্টেইনার পড়ে আছে যেগুলো কভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের দেহ পুড়ানোর ফলে তৈরি হয়েছে।

শ্মশানের ব্যবস্থাপক পঙ্কজ শার্মা বলেন, আমাদের জায়গা ভর্তি হয়ে গেছে। আমাদের কাছে আর নতুন করে ছাই সংরক্ষণ করার মতো কোনো জায়গা নেই।

অন্যদিকে সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকায় দিল্লিতে অ্যাম্বুলেন্স সংকট তৈরি হয়েছে। যে কারণে কর্তৃপক্ষ শহরের তিন চাকার অনেক যানবাহনকে বর্তমানে কভিড আক্রান্ত রোগীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করছে।

 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫