বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

টিউশন ফিতে বড় ছাড় দিয়ে শিক্ষার্থী ধরে রাখার চেষ্টা

প্রকাশ: মে ০৫, ২০২১

সাইফ সুজন

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির অর্থে ভর করে। যদিও কভিড-১৯-এর প্রথম ঢেউয়ের পর পরই পারিবারিক আর্থিক সংকটে টিউশন ফি বকেয়া হয়ে পড়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থীর। অনেক শিক্ষার্থী ফি দিতে না পেরে সেমিস্টার চালিয়ে না নেয়ার সিদ্ধান্ত জানান কর্তৃপক্ষকে। তবে সংকটের মধ্যেও শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। টিউশন ফিতে বড় ছাড় দিয়ে হলেও শিক্ষার্থীদের ধরে রাখার চেষ্টা করছে বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে, তাদের শিক্ষার্থীদের বড় অংশই মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত দরিদ্র পরিবার থেকে আসা। মহামারীর কারণে অনেক শিক্ষার্থীর পরিবারকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। এছাড়া খণ্ডকালীন চাকরি করে পড়ার খরচ মেটাতেনএমন অধিকাংশ শিক্ষার্থীর আয়ের উৎসও বন্ধ। তাই তারা শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর বিভিন্ন হারে ছাড় দিচ্ছে। এছাড়া কিস্তিতে অল্প অল্প করে ফি পরিশোধের সুযোগও দেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এমনকি রিটেক, ইমপ্রুভমেন্ট বিলম্ব ফির মতো জরিমানার খাতগুলোও মওকুফ করে দিয়েছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়।

বিষয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে, সে অনুযায়ী প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ই বিভিন্ন হারে টিউশন ফির ওপর ছাড় দিচ্ছে। ছাড়ের বাইরেও বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। যেমন আগে টিউশন ফি বকেয়া থাকলে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারতেন না শিক্ষার্থীরা, এসব ক্ষেত্রে এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক নমনীয়। আসলে একদিকে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি একদম নেই বললেই চলে। এর সঙ্গে পুরনোরাও যদি সেমিস্টার বিরতি নেয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনাই কঠিন হয়ে পড়বে।

শিক্ষার্থী সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষস্থানীয় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন প্রতিষ্ঠানে। বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, করোনা সংকটের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে টিউশন ফির ওপর সেমিস্টারপ্রতি ২০-২২ কোটি টাকা ছাড় দিচ্ছেন তারা। এছাড়া শিক্ষার্থীর পড়ার খরচ চালিয়ে নেয়ার আর্থিক নিশ্চয়তার জন্য অভিভাবকদের বীমার আওতায় এনেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু বলেন, আমরা চাই, করোনা পরিস্থিতির কারণে একজন শিক্ষার্থীকেও যেন শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ছিটকে পড়তে না হয়। যেসব শিক্ষার্থী আগে থেকে কোনো ছাড় পাচ্ছে না, তাদের টিউশন ফির ওপর ১৫ শতাংশ ছাড় দেয়া হচ্ছে। আর যারা আগে থেকে ছাড় পাচ্ছেন, সেটির সঙ্গে অতিরিক্ত আরো ১০ শতাংশ ছাড় যোগ করা হয়েছে। সবার জন্য দেয়া সাধারণ ছাড়ের বাইরেও বিভিন্ন হারে শিক্ষার্থীর প্রয়োজন অনুযায়ী ওয়েভার দেয়া হচ্ছে। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে শতভাগ টিউশন ফি মওফুক করে দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়ার খরচের নিশ্চয়তায় আমরা আরো একটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। সেটি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বীমার আওতায় আনা হয়েছে। যদি কোনো শিক্ষার্থীর অভিভাবক নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে কিংবা অন্য যেকোনো কারণে মারা যান, তাহলে ওই বীমার আওতায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর পড়ার খরচ চালিয়ে নেয়া হবে। অনেক শিক্ষার্থী সুবিধা পাচ্ছেন। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাইলে এটা অনুসরণ করতে পারে।

করোনাভাইরাসজনিত সংকটের মধ্যে পড়ালেখা চালিয়ে নেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের বিনা সুদের শিক্ষাঋণ সেবা দিচ্ছে বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় আরেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) সেমিস্টারপ্রতি ৫০ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ইউআইইউ স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই শিক্ষার্থীদের পড়ার খরচ চালিয়ে নিতে সুদবিহীন শিক্ষাঋণ দিয়ে আসছে ইউআইইউ। তবে কভিড-১৯ অতিমারীর কারণে শিক্ষাঋণের পরিধি বাড়ানো হয়েছে বহুগুণ। প্রতি সেমিস্টারের শুরুর দিকে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় বিনা সুদের ঋণের আবেদন করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যৌক্তিকতা পর্যালোচনা করে আবেদন অনুমোদন করে ঋণ দেয়। নিয়ম অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা পরবর্তী সেমিস্টারে ঋণ পরিশাধ করেন অথবা পরিশোধ করতে না পারলে আবেদনের মাধ্যমে সময়সীমা বাড়িয়ে নিতে পারেন।

প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক . চৌধুরী মোফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, অনেক শিক্ষার্থীই তাদের সংকটের কথা জানাচ্ছেন। নিজেরা সংকটে থাকলেও আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। প্রতি সেমিস্টারে ৫০ লাখ টাকার বিনা সুদের ঋণ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া মেধার ভিত্তিতে টিউশন ফিতে বড় ছাড় দেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। আসলে করোনা পরিস্থিতিতে এভাবে বেশিদিন চালিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। আমাদের মতে, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার দিকে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন।

করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে টিউশন ফির ওপর সবচেয়ে বেশি ছাড় দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন-পুরনো সব শিক্ষার্থীর জন্য টিউশন ফির ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় গত বছর একটি সেমিস্টারে ১২ শতাংশ আরেকটি সেমিস্টারে ১৫ শতাংশ ছাড় দিয়েছিল। বছর এখন পর্যন্ত টিউশন ফির ওপর কোনো ছাড় ঘোষণা করেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে একটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাঋণের ব্যবস্থা করছে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশালসহ ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর বিভিন্ন হারে ছাড় দিচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিতে ছাড় দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের জরিমানা মওফুক করেছে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক . শহীদ আখতার হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সব শিক্ষার্থীর টিউশন ফি ১০ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগে টিউশন ফি জমা দিতে দেরি হলে কিংবা পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারলে জরিমানা নেয়া হতো, এখন সেটিও নেয়া হচ্ছে না। যেহেতু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র আয়ের উৎস। আয় কমে যাওয়ার কারণে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন কাটতে হচ্ছে। এর পরও আমরা শিক্ষার্থীদের স্বস্তিতে চাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করছি।

দেশে বর্তমানে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১০৭টি। ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট শিক্ষার্থী ছিল লাখ ৪৯ হাজার ১৬০ জন।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫