মার্ক জাকারবার্গ ও টিম কুকের সম্পর্কের অবনতি হয় যেভাবে

প্রকাশ: মে ০৪, ২০২১

বণিক বার্তা ডেস্ক

২০১৯ সালের জুলাই মাসে আইডাহোর সান ভ্যালিতে টেক এবং মিডিয়া জায়ান্টদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অ্যাপলের টিম কুক এবং ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নে আলোচনায় বসেন।

বছরের পর বছর দুই প্রতিষ্ঠানের প্রধান বার্ষিক সম্মেলনে দেখা করতেন। যার আয়োজন করত ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক অ্যালেন অ্যান্ড করপোরেটেড। কিন্তু এবার ডাটা সুরক্ষা-সংক্রান্ত একটি কেলেংকারিতে ফেঁসে যায় ফেসবুক। আইনপ্রণেতা থেকে শুরু করে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নিয়ন্ত্রক এক্সিকিউটিভ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন তারা। মূলত তাদের না জানিয়ে ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা নামের একটি ভোটার তথ্য সংগ্রহ ফার্মকে পাঁচ কোটি ব্যবহারকারীর তথ্য ব্যবহারের সুযোগ দেয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়। ২০১৯ সালের সেই সম্মেলনে জাকারবার্গ কুকের কাছে সমস্যা থেকে উত্তরণে তার গৃহীত পদক্ষেপ কী হতো সে সম্পর্কে জানতে চান বলে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সূত্রে জানা গেছে।

সে সময় কুক ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন, ফেসবুকের উচিত তার কোর অ্যাপের বাইরে মানুষের যেসব তথ্য সংগ্রহে আছে সেগুলো মুছে ফেলা।

কুকের এমন উত্তরে জাকারবার্গ চমকে গিয়েছিলেন বলে সূত্রে জানা গেছে। ফেসবুক মূলত ব্যবহারকারীদের তথ্য ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইনে তাদের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আয় করে থাকে। ফেসবুককে তথ্য সংগ্রহ বন্ধের আহ্বান জানানোর মাধ্যমে মূলত কুক জাকারবার্গকে এটাই বোঝাচ্ছিলেন যে তার ফেসবুক ব্যবসা এখন অচল। তবে জাকারবার্গ কুকের উপদেশ গ্রহণ করেননি।

এর প্রায় দুই বছর পর জাকারবার্গ এবং কুকের মধ্যে প্রতিযোগিতা যুদ্ধে রূপ নেয়। সম্প্রতি অ্যাপল আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন প্রাইভেসি ফিচার আনার ঘোষণা দিয়েছে। যেখানে ব্যবহারকারীরা ফেসবুকের মতো অ্যাপস তাদের তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে অনুসরণ করতে পারবে কিনা তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

ডিজিটাল অ্যাডভারটাইজিংয়ে অন্যতম একটি গোপন বিষয় হলো এখানে ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠান মানুষের অনলাইন চর্চা অনলাইন বিচরণের ওপর নজর রাখে। বিশেষ করে যখন মানুষ স্মার্টফোনের মাধ্যমে স্পটিফাই বা অ্যামাজনের মতো সাইটে প্রবেশ করে। তথ্য বিজ্ঞাপন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের টার্গেট অডিয়েন্স বা কাস্টমার খুঁজে পেতে এবং সে অনুযায়ী বিজ্ঞাপন বানাতে সাহায্য করে। তবে এখন মানুষ অনলাইন ট্র্যাকিংয়ের পক্ষে নয়, যা মূলত অনলাইন অ্যাডভার্টাইজিংয়ের পাশাপাশি ফেসবুকের হাজার কোটি ডলারের ব্যবসায় আঘাত করবে।

কুক মূলত অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে তার ব্যবহারকারীদের প্রিমিয়াম পর্যায়ে নিরাপদ সুরক্ষিত ইন্টারনেট সেবা প্রদানে বিশ্বাসী। যার ফলে অ্যাপল এখনো নিরাপদ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অন্যদিকে জাকারবার্গের ফেসবুকের মতো ওপেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদান করে শীর্ষস্থানে রয়েছেন। এদিক থেকেই তাদের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। দুই প্রধান একে অপরের সঙ্গে হাতাহাতিতেও জড়িয়েছিলেন। ২০১৭ সালে ফেসবুক অ্যাপলের প্রতিদ্বন্দ্বীদের অর্থায়নে চালিত ওয়াশিংটন ভিত্তিক একটি পলিটিক্যাল ফার্ম কুকের বিরুদ্ধে বেনামি লেখা প্রকাশ করতে থাকে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক থাকায় কুককে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর চরিত্রে বসিয়ে মিথ্যে ক্যাম্পেইনও করে প্রতিষ্ঠানটি।

২০১৮ সালে এমএসএনবিসি ফেসবুকের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যেসব সমস্যা রয়েছে, জাকারবার্গের জায়গায় থাকলে তিনি কী ব্যবস্থা নিতেনএমন প্রশ্নের জবাবে কুক বলেছিলেন, আমি হলে এমন পরিস্থিতিতে থাকতাম না।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫