এএলআরডির আলোচনা সভা

প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও হাওরবান্ধব বাজেট প্রণয়নের দাবি

প্রকাশ: এপ্রিল ২৩, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রান্তিক জনগোষ্ঠী উন্নয়নে এবং হাওর অঞ্চলের উন্নয়নমুখী বাজেট বরাদ্দের দাবিতে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) আয়োজনে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে নৃ-জনগোষ্ঠীসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর জন্য কল্যাণমুখী বাজেটের পাশাপাশি জলবায়ু তহবিল থেকে হাওর অঞ্চলের জন্য আলাদা বরাদ্দের প্রস্তাব দেয়া হয়।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে অংশীদারিত্ব এবং বাজেট ভাবনা শীর্ষক আলোচনা সভায় সিলেট ময়মনসিংহ বিভাগের সহযোগী সংস্থা সুশীল সমাজের প্রতিনিধি নারী-পুরুষ-আদিবাসীরা অংশ নেন। এএলআরডির উপনির্বাহী পরিচালক (ডিইডি) রওশন জাহান মনির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অংশ নেন বেসরকারি সংস্থা ইরার নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম, হাওর পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা, কারিতাস-বাংলাদেশের ময়মনসিংহের আঞ্চলিক পরিচালক অপূর্ব ম্রং, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ময়মনসিংহের সভাপতি মনিরা বেগম।

এতে এএলআরডির পক্ষে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কর্মসূচি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। তিনি তার উপস্থাপনায় ক্ষুদ্র পারিবারিক কৃষক, গ্রামীণ নারী কৃষক, আদিবাসী সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্য খাত উপখাত অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দের জন্য জোর দেন। তাছাড়া ভূমি সংস্কারের নামে উপখাত তৈরি করে নামে বাজেটে বরাদ্দ রাখারও দাবি জানান। সময় দরিদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠীবান্ধব বাজেটের প্রত্যাশা করে খাত অনুযায়ী ২৯টি সুপারিশ তুলে ধরেন রফিকুল ইসলাম।

অপূর্ব ম্রং বলেন, শিক্ষানীতিতে পাঁচটি আদিবাসী ভাষায় শিক্ষাপ্রদানের বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীতে ঘর বিতরণে আদিবাসীদের অন্তর্ভুক্তি একটি ইতিবাচক দিক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা এখনো আদিবাসীদের সঠিক সংখ্যা জানি না। করোনায় আদিবাসী যুব নারীরা কর্মহীন হয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়নি। কোনো প্রণোদনাও পায়নি। একই সঙ্গে বাজেট প্রণয়ন, বাস্তবায়ন মনিটরিংয়ে আদিবাসীদের যুক্ত করার দাবি জানান অপূর্ব ম্রং। সময় ভূমি সংস্কারের অংশে আদিবাসীদের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি, ভূমি কমিশন গঠন বাস্তবায়ন, সমতলের দুর্গম এলাকার আদিবাসীদের শিক্ষার জন্য স্কুলের ব্যবস্থা করা, আদিবাসী যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আদিবাসী সংস্কৃতি উন্নয়ন চর্চার জন্য গবেষণার প্রস্তাব রাখেন।

সিরাজুল ইসলাম হাওর এলাকার সার্বিক সমস্যা তুলে ধরেন। এতে তিনি হাওরের জন্য আলাদা বাজেটের দাবি করেন। বলেন, প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। কৃষিতে যান্ত্রিকতার ফলে নতুন করে বেকারত্ব বাড়ছে। তাদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে। হাওরে প্রচুর খাস জলাশয় রয়েছে, যা এখন কৃষিজমিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার ফলে তা ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এটিকে ভূমি সংস্কারের ভাবনায় যুক্ত করতে হবে এবং তার জন্য বাজেটে ব্যবস্থা রাখতে হবে।

মনিরা বেগম বলেন, দেশের আঞ্চলিক কৃষি, তার বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিবেচনায় নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। তা না হলে ক্ষুদ্র পারিবারিক কৃষক/কৃষি, গ্রামীণ নারী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী প্রকৃত সুফল থেকে বঞ্চিত রয়ে যাবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সঠিক সময় কৃষি লোনসহ কৃষি ভর্তুকি, কার্ড সহায়তা এবং কৃষি প্রণোদনা নিশ্চিত করতে হবে। তার জন্য খাত উপখাত অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দ থাকতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সেবার মান বৃদ্ধিসহ দরিদ্র মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

কাশমির রেজা জেলাভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন বরাদ্দ দেয়ার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে জলবায়ু ফান্ড থেকে হাওরের জন্য আলাদা বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, প্রকৃত মৎস্যজীবীরা টাকার অভাবে হাওর লিজ নিতে পারেন না। তাই তাদের জন্য ঋণ দিতে হবে এবং তার পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে। হাওরে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হবে এবং তার জন্য প্রণোদনা দিতে হবে। হাওরে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি হাওর উন্নয়নে গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন এএলআরডির কিশোর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইচডিআরসের গবেষক গাজী মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী এবং হুমায়ুন কবির, গৌতম চন্দ্র চন্দ, জান্নাতুল মরিয়ম ইমন প্রমুখ।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫