কবি শঙ্খ ঘোষের বিদায়

প্রকাশ: এপ্রিল ২২, ২০২১

ফিচার প্রতিবেদক

প্রয়াত হয়েছেন বাংলা ভাষার অন্যতম কবি শঙ্খ ঘোষ। শক্তি, সুনীল, উত্পল, বিনয় গিয়েছেন আগেই। এবার চলে গেলেন বাবরের প্রার্থনা কবিও। করোনাকালে মৃত্যু যেন প্রতিদিনের এক অনিবার্য স্বাভাবিক সহজ সংবাদ হয়ে উঠছে। কবি শঙ্খ এক কবিতায় লিখেছিলেন, সহজ কথা ঠিক ততটা সহজ নয় কবির চলে যাওয়াটাও তার ভক্তদের জন্য মেনে নেয়া সহজ নয় নিশ্চয়ই।

বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। এরপর শেষ আঘাতটা হানে করোনা। ১৪ এপ্রিল জানা যায়, তিনি কভিড পজিটিভ। শুরুতে বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তারপর মঙ্গলবার অবস্থার অবনতি হলে কবিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন দেয়া হয় ভেন্টিলেটর। কিন্তু কাজ হয়নি চিকিৎসকদের কোনো চেষ্টাতেই। গতকাল বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি শঙ্খ ঘোষ। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোক জানান বাংলা ভাষার অন্যতম কবির মৃত্যুতে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কবির শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু কবি যেহেতু গান স্যালুট পছন্দ করতেন না তাই আনুষ্ঠানিকতা থেকে রীতি বাদ রাখা হয়।

পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বেদনার্ত চিত্তে শঙ্খ ঘোষের মৃত্যুতে মন্তব্য করেছেন, অত্যন্ত ভারাক্রান্ত বোধ করছি। এই কৃষ্ণগহ্বর সহ্য করতে পারছি না। বহুদিন ধরে দেখছি মানুষটিকে। যুবক বয়স থেকে চিনি, শান্ত, স্থিতধী, কখনো মেজাজ গরম করতেন না। হাসির কথা শুনলেই খিলখিল করে হেসে উঠতেন। তবে নিজে বরাবরই কম কথা বলতেন। এত পুরস্কার পেয়েছেন, কিন্তু কখনো অহংকার তাকে স্পর্শ করেনি। শঙ্খদাকে শুধু কবি বললে ব্যাপারটা একপেশে হয়ে যায়। তিনি আসলে সাহিত্যের অভিভাবক। সত্যিকারের অভিভাবক সবাই হতে পারে না। একবার দেখলাম, জুনিয়র এক কবির কবিতা সংশোধন করছেন। এত বড় মাপের কবির কি এটা কাজ? কী দরকার তার? কিন্তু ওই যে! দায়িত্ববোধ আর স্নেহ।

কবি জয় গোস্বামী বলেছেন, আমার কী হারাল তা আমিই জানি। আর বাংলা সাহিত্যজগৎ কী হারাল তা যত দিন যাবে ততই বুঝবে সবাই।

দিনগুলি রাতগুলি, বাবরের প্রার্থনা, মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে, গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ শঙ্খ ঘোষের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। ১৯৭৭ সালে বাবরের প্রার্থনা কাব্যগ্রন্থটির জন্য তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার সাহিত্য অকাদেমি পান। ১৯৯৯ সালে কন্নড় ভাষা থেকে বাংলায় রক্তকল্যাণ নাটকটি অনুবাদ করে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান তিনি। এছাড়া পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার, সরস্বতী সম্মান, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার। ২০১১ সালে তিনি ভারতের মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা পদ্মভূষণে সম্মানিত হন।

শঙ্খ ঘোষের প্রকৃত নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। তার জন্ম বাংলাদেশের চাঁদপুরে, ১৯৩২ সালে। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলা ভাষা সাহিত্যে স্নাতক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। অধ্যাপনাই ছিল তার পেশা। পড়িয়েছেন কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজ, সিটি কলেজ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরবর্তীকালে শিক্ষকতা করেছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, সিমলার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫