কভিড-১৯

মৃত্যু ছাড়িয়েছে সাড়ে ১০ হাজার

প্রকাশ: এপ্রিল ২১, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গতকালও ৯১ জন কভিড-১৯ পজিটিভ রোগী মারা গেছেন। এতে মৃত্যুর সংখ্যা সাড়ে ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তবে গত চারদিন পর দেশে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১০০-এর নিচে নেমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাজার ৫৫৯ জনের শরীরে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত মার্চ থেকে দেশে করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে রোগী শনাক্তে রেকর্ড হয়। সর্বশেষ গত এপ্রিল হাজার ৬২৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল। গত ২৯ মার্চ কভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যায়। এর ১৬ দিন পর ১৪ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়ায় সাত লাখ। প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা নয় হাজার ছাড়ায় গত ৩১ মার্চ। আট হাজার থেকে মৃত্যু নয় হাজার ছাড়াতে সময় লেগেছিল ৬৭ দিন। আর সর্বশেষ এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে।

জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২৬৫টি পরীক্ষাগারে ২৭ হাজার ৫৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫২ লাখ ২১ হাজার ২৭৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। গতকাল পর্যন্ত দেশে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে লাখ ২৭ হাজার ৭৮০ জন এবং মারা গেছেন ১০ হাজার ৫৮৮ জন। সর্বশেষ হাজার ৮১১ জন রোগী সুস্থ হওয়ায় মোট সুস্থতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে লাখ ২৮ হাজার ১১১ জন। সর্বশেষ নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ, মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার দশমিক ৪৫ শতাংশ।

গতকাল মারা যাওয়া ৯১ জনের মধ্যে ৫৮ জন পুরুষ এবং ৩৩ জন নারী। তাদের মধ্যে ৫২ জন সরকারি হাসপাতালে, ৩৬ জন বেসরকারি হাসপাতালে, দুজন বাড়িতে এবং একজন হাসপাতালে আনার পথে মারা গেছেন। বয়স বিবেচনায় তাদের মধ্যে ৫৪ জন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব। বাকিদের মধ্যে ১৮ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, ১১ জনের ৪১ থেকে ৫০ বছর, সাতজনের ৩১ থেকে ৪০ বছর এবং একজনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল। বিভাগভিত্তিক হিসাবে মৃতদের ৬০ জন ঢাকা বিভাগের, ১৭ জন চট্টগ্রামের, তিনজন রাজশাহীর, পাঁচজন খুলনার, চারজন বরিশালের এবং দুজন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। গতকাল পর্যন্ত মারা যাওয়া ১০ হাজার ৫৮৮ জনের মধ্যে হাজার ৮২৭ জন পুরুষ এবং হাজার ৭৬১ জন নারী।

এদিকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। কভিডের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আক্রান্তরা দ্রুত মারা যাচ্ছেন। এর মধ্যে হাসপাতালে মারা যাওয়া রোগীর ৪৮ শতাংশ ভর্তি হয়েছিলেন মাত্র পাঁচদিন আগে।

সংস্থাটি বলছে, গত ২৮ জানুয়ারি থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মৃত রোগীদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তির পাঁচদিনের মধ্যে মারা গেছেন। আর ১৬ শতাংশ মারা গেছেন ভর্তির থেকে ১০ দিনের মধ্যে। মোট মৃতদের মধ্যে ৫২ শতাংশ উপসর্গ শুরুর পাঁচদিনের মাথায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। উপসর্গ শুরুর ১০ দিনের মাথায় হাসপাতালে ভর্তি হন ২৬ শতাংশ এবং ১২ শতাংশ ভর্তি হন উপসর্গ শুরুর ১১ থেকে ১৫ দিনের মাথায়।

প্রাণঘাতী করোনায় গত মার্চে ৬৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে মৃত্যু হয়েছে ৯৪১ জনের। এতে ১৫ দিনের ব্যবধানে মৃত্যুর হার বেড়েছে ৩২ দশমিক শতাংশ। শুধু আগের বছরের এপ্রিলের চেয়ে চলতি বছরের এপ্রিলে ৫০ শতাংশ বেশি মারা যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

বৈশ্বিক মহামারী মানুষের মনোজগৎ পরিবর্তন করেছে উল্লেখ করে আইইডিসিআর বলছে, বাংলাদেশে ২০১৮ সালে প্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক রোগের হার ছিল ১৮ দশমিক শতাংশ। এর মধ্যে বিষণ্নতা ( দশমিক শতাংশ) আর দুশ্চিন্তার ( দশমিক শতাংশ) সমস্যা ছিল। চলমান মহামারীতে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৪৬ শতাংশের মধ্যে বিষণ্নতা আর ৩৩ শতাংশের দুশ্চিন্তার লক্ষণ দেখা গেছে।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে শতাধিক দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লে গত বছরের ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে বাংলাদেশ ৩৩তম এবং মৃতের সংখ্যায় ৩৮তম অবস্থানে রয়েছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫