ফোর্সেস গোল-২০৩০

২৫ হাজার কোটি টাকায় ১৬টি যুদ্ধবিমান কেনার উদ্যোগ

প্রকাশ: মার্চ ১৩, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের ভূরাজনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রণয়ন করা হয়েছে ফোর্সেস গোল-২০৩০। শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতের তাগিদে গৃহীত পরিকল্পনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে আরো শক্তিশালী করে তোলার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এজন্য বলা হয়েছে বিমান বাহিনীতে মাল্টি রোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট (এমআরসিএ) বা নানামুখী ভূমিকা পালনে সক্ষম যুদ্ধবিমান সংবলিত একাধিক স্কোয়াড্রন গড়ে তোলার কথা। ভূমি সমুদ্রে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদানে সক্ষম অত্যাধুনিক এসব যুদ্ধবিমান কেনার জন্য এরই মধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ধরনের ১৬টি যুদ্ধবিমান ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদনও দিয়েছে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ।

যুদ্ধবিমানগুলো কিনতে মোট ব্যয় হবে ২৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম বছরেই এককালীন পরিশোধের জন্য প্রয়োজন হবে হাজার ৩০০ কোটি টাকার। অর্থ পরিশোধের বিষয়টি আসন্ন বাজেটে (২০২১-২২ অর্থবছর) অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে বিমান বাহিনীর সদর দপ্তর। -সংক্রান্ত প্রস্তাবের একটি অনুলিপি অর্থ সচিবকেও পাঠানো হয়েছে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলায় কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি ভূমি সমুদ্রে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদানে সক্ষম অত্যাধুনিক এমআরসিএ যুদ্ধবিমান কেনা প্রয়োজন। প্রতিবেশী দেশে এগুলোর সমসাময়িক আরো আধুনিকমানের যুদ্ধবিমান রয়েছে। ফোর্সেস গোল-২০৩০-এর আলোকে বিমান বাহিনীতে একাধিক এমআরসিএ স্কোয়াড্রন স্থাপনের বিষয়ে দিকনির্দেশনা রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ১৯৯৯ সালে বিমান বাহিনীর বহরে একটি এমআরসিএ (মিগ-২৯ জঙ্গি বিমান) স্কোয়াড্রন যুক্ত হয়, যা বর্তমানে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আরেকটি এমআরসিএ স্কোয়াড্রন স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জঙ্গিবিমান ক্রয়ের বিষয়টি বর্তমানে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে বিবেচনাধীন রয়েছে।

১৬টি উড়োজাহাজের প্রক্রিয়াধীন দরপত্রের কার্যক্রম এবং বিভিন্ন দেশের সরকারের দেয়া প্রস্তাব পর্যালোচনার ভিত্তিতে বিমান বাহিনী বলছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্রয়প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে জিটুজি পদ্ধতিতে। এমআরসিএ ক্রয়ের চুক্তি করতে হলে প্রথম বছর এককালীন পরিশোধের (ডাউন পেমেন্ট) জন্য আগামী অর্থবছরেই মোট মূল্যের ২৫ শতাংশ বা হাজার ৩০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। টাকা বিমান বাহিনীর নিয়মিত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত না করে থোক আকারে রিজার্ভ রাখা প্রয়োজন। বাকি টাকা -১০ বছরের মধ্যে পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। অথবা বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রকল্প আকারে অন্তর্ভুক্ত করে প্রথম বছরে এককালীন পরিশোধের জন্য টাকার সংস্থান করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রেও চুক্তি অনুযায়ী বাকি -১০ বছরে পরিশোধের ব্যবস্থা রাখার প্রয়োজন হবে।

বিষয়ে বিমান বাহিনীর প্রস্তাবে বলা হয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এরই মধ্যে ১৬টি অত্যাধুনিক মানের ওয়েস্টার্ন অরিজিন (পশ্চিমা দেশে নির্মিত) এমআরসিএ ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। বর্তমানে ক্রয় কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রস্তাবিত এসব আকাশযান ক্রয় বেশ ব্যয়বহুল বিষয়। কারণে বাহিনীর নিয়মিত বাজেট থেকে এগুলো কেনা হলে পরবর্তী সময়ে মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে বিমান বাহিনীর পরিচালন বাজেটের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর ফলে কিস্তি পরিশোধ, পরিচালন রক্ষণাবেক্ষণসব ক্ষেত্রেই ঘাটতি থেকে যাবে।

প্রস্তাবের ভাষ্য অনুযায়ী, একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তথা সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নও অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। দেশের সার্বভৌম নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তাবিত যুদ্ধবিমানগুলো কেনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তাই বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করেও ক্রয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা যেতে পারে।

বিষয়টি আগামী অর্থবছরের মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর ওপর অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সভায় উপস্থাপনের জন্যও অনুরোধ জানিয়েছে বিমান বাহিনী। বিষয়ে কথা বলার জন্য অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে অর্থ বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, বর্তমানে আগামী বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যদি ধরনের প্রস্তাব আসে, তাহলে বিষয়টিতে যেহেতু জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যু জড়িত তাই এটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে।

প্রস্তাবে বিমান বাহিনীর বর্তমান সক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পেশাদারিত্ব দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বহির্বিশ্বেও সমাদৃত। অর্জনে অর্থ প্রতিরক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অবদান অনস্বীকার্য। ফোর্সেস গোল-২০৩০ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিমান বাহিনীর ভাণ্ডারে জঙ্গি বিমানসহ প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এছাড়া রয়েছে সর্বাধুনিক মডেলের পরিবহন পরিবহন প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ, বিভিন্ন ধরনের হেলিকপ্টার, উন্নত প্রযুক্তির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, আবহাওয়া রাডার, স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, ভারী মাঝারি মানের মিসাইল গোলাবারুদ সামগ্রী। এগুলোর অন্তর্ভুক্তি বিমান বাহিনীকে আরো শক্তিশালী বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সক্ষম করে তুলেছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫