হিলিতে সাড়ে ১২শ হেক্টর জমির ধানে পচন রোগ

প্রকাশ: মার্চ ০৯, ২০২১

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, হিলি

বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা

দিনাজপুরের হিলিতে চলতি বোরো মৌসুমে বাড়তি দামের আশায় জিরা সাইল ধানের আবাদ করেন স্থানীয় কৃষকরা। কিন্তু সে আসায় গুড়ে বালি। সম্প্রতি উপজেলায় আবাদকৃত হাজার ২৫০ হেক্টর জমির ধানগাছে পচন দেখা দিয়েছে। ধানগাছগুলোর পাতা হলুদ হয়ে গোড়া পচে মরে যাচ্ছে। কৃষকরা নানা ওষুধ কীটনাশক প্রয়োগ করেও পচন ঠেকাতে পারছেন না।

অজানা রোগের উপদ্রব কৃষকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। ধানের বাজারে অস্থিতিশীলতা, বাড়তি আমদানি ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্যে কৃষকরা প্রায়ই ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই বেশি লাভের আশায় উপজেলার কৃষকরা এবার উন্নত জাতের জিরা সাইল ধানের আবাদ করেন। কিন্তু ধানগাছে পচন দেখা দেয়ায় ধান ঘরে তুলতে পারবেন কিনা তা নিয়েই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শঙ্কা বাস্তবে রূপ নিলে উপজেলার অনেক কৃষক বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হবেন।

অন্যদিকে জাতের ধান দেশে অনুমোদিত না হওয়ায় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা রোগের প্রতিকার সম্পর্কে সঠিক নির্দেশনা দিতে পারছেন না। তাই তারা ধান চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করছেন।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে জিরা সাইল ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বোয়ালদার খট্টা মাধবপুর ইউনিয়নে পাতা গোড়া পচে ধানগাছ মরে যাওয়ার পরিমাণ বেশি।

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, জিরা সাইল ধান উৎপাদনে বিঘাপ্রতি ব্যয় হয় থেকে সাড়ে , ক্ষেত্র বিশেষে হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ১৭-১৮ মণ ধান উৎপাদিত হয়। প্রতি বিঘা থেকে ফলন অনুপাতে -১০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। কিন্তু চলতি মৌসুমে উৎপাদন ব্যয় উঠিয়ে আনাই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন কৃষকরা।

হিলির চেংগ্রাম গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, গত আমন মৌসুমে জিরা সাইল ধানের দাম বেশ ভালো ছিল। সে কথা মাথায় রেখেই বাড়তি লাভের আশায় এবার তিন বিঘা জমিতে জিরা সাইল ধানের আবাদ করি। কিন্তু সে ধানের গাছে অজানা এক রোগ দেখা দিয়েছে। ধানগাছের পাতা লাল বর্ণের হয়ে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। ধানগাছ বাড়ছে না, শিকড়ও ছড়াচ্ছে না। ফলে দুশ্চিন্তায় আছি।

একই গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবার দুই বিঘা জমিতে জিরা সাইল ধানের আবাদ করেছি। কিন্তু ধান যেমন লাগিয়েছি ঠিক তেমনি রয়েছে, একটুও বাড়েনি। গাছের পাতা লাল হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সার বিক্রেতাদের পরামর্শ নিয়ে জমিতে সার ওষুধ দিচ্ছি। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।

কৃষক সাইদুল হোসেন বলেন, বাধ্য হয়ে জমির যেসব ধান গাছ লাল হয়ে যাচ্ছে এবং মরে যাচ্ছে, সেগুলো শ্রমিকদের দিয়ে উঠিয়ে ফেলছি। লাভ তো দূরের কথা, আমরা যে খরচ করেছি তা উঠবে কিনা সে দুশ্চিন্তায় আছি।

হিলির সাতকুড়ি বাজারের বীজ বিক্রেতা রেজাউল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারো আমরা কৃষকদের মাঝে বীজ সরবরাহ করেছি। তবে এবারের বীজের সমস্যা ছিল। বিষয়টি কৃষি অফিসকে জানিয়েছি। তারা মাঠ পরিদর্শন করে ধানের গাছগুলো দেখে আবহাওয়ার কারণে এটি হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছে। তাদের পরামর্শ মেনে আমরা কৃষকদের ওষুধ দিচ্ছি।

হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা . মমতাজ সুলতানা বলেন, উপজেলায় বেশকিছু অঞ্চলের কৃষক বিক্ষিপ্তভাবে জাতের ধান আবাদ করছেন। ধান রোপণের পর তারা অধিক পরিমাণ আগাছানাশক ব্যবহারের ফলে ধানগাছের পাতা লালচে বর্ণের হয়ে যাচ্ছে। আমরা ধানগাছের নমুনা সংগ্রহ করে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাঠাই। তাদের পরামর্শ মোতাবেক কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। বর্তমানে এসব জমিতে বিঘাপ্রতি পাঁচ কেজি করে ইউরিয়া সার, পাঁচ কেজি পটাশ ছিটানোর কথা বলছি। একই সঙ্গে জমিতে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকে, তাহলে পানি সরিয়ে মাটি নিংড়ে দেয়ার জন্য বলা হচ্ছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫