ত্বিন ফলে স্বপ্ন দেখছেন কৃষক মতিউর

প্রকাশ: মার্চ ০৪, ২০২১

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, হিলি

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বিন চাষ করে সাড়া ফেলেছেন কৃষক মতিউর মান্নান। এরই মধ্যে বাগানের সব গাছে ডুমুর আকৃতির অপ্রচলিত ফল ধরেছে। দৃষ্টিনন্দন ফল দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। মরুর ফলটি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় নতুন হলেও চাষাবাদের উপযোগী বলে কৃষিবিদরা মনে করেন। ত্বিন ফল পুষ্টিকর, সুস্বাদু অনেক রোগের মহৌষধ হিসেবে ব্যবহার হয়। পবিত্র কুরআনের আত ত্বিন সূরায় উল্লেখ করা হয়েছে মরুভূমির মিষ্টি ফলের নাম। চারা রোপণের কয়েক মাসের মধ্যে ত্বিন গাছে পর্যাপ্ত ফল আসতে শুরু করায় উজ্জ্বল আগামীর স্বপ্ন দেখছেন কৃষক মতিউর।

এদিকে উত্তরাঞ্চলে প্রথমবারের মতো ডুমুর আকৃতির মরুর ফল দৃষ্টি কেড়েছে স্থানীয়সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের। এমন বাগান করতে অনেকেই কৃষক মতিউর মান্নানের পরামর্শ নিচ্ছেন। তার বাগান করার ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এলাকার অনেক বেকার যুবকের। ত্বিন ফল চাষাবাদে ভালো ফলন পেতে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

ত্বিন ফলচাষী মতিউর মান্নান বলেন, মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দেয়। ফলে অনেকের মতো আমি নিজেও ব্যবসা-বাণিজ্য না থাকায় পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। পরে ছোট বোনের পরামর্শে আমি ত্বিন ফলের বাগান করার সিদ্ধান্ত নিই।

সে অনুযায়ী গত বছরের অক্টোবরে গাজীপুর থেকে পাঁচ জাতের ৯০০ ত্বিন ফলের চারা এনে আমার চার বিঘা পতিত জমিতে রোপণ করি। চারা রোপণের দেড় মাসের মাথায় ত্বিন গাছগুলোয় ফল আসতে শুরু করে। এখন বাগানের যে ৯০০ গাছ রয়েছে, তার সবকটিতেই ফল এসেছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এগুলো পেকে যাবে। এর পর আমি এগুলো বাজারজাত করতে পারব।

পর্যন্ত আমার বাগান করতে গিয়ে ২৩ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। প্রথমে ভয় পেলেও বর্তমানে আমার বাগানের যে অবস্থা তাতে আমি খুব খুশি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আমার যে ব্যয় হয়েছে, তা ফিরতে শুরু করবে।

ফলচাষী মতিউর মান্নান আরো জানান, ত্বিন ফলের বেশ চাহিদা রয়েছে। ঢাকার বাজারে হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি। পাশাপাশি গাছের কলম করতে শুরু করেছি, এতে বাগান আরো দ্রুত সম্প্রসারণ করতে পারব। অনেকেই আসছেন বাগান দেখতে, ধরনের ফলের আবাদ করতে তারাও নিতে পারবেন। ফলটি রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

বাগানে কর্মরত শ্রমিক সিরাজুল ইসলাম সাইদুর রহমান বলেন, মতিউর ভাইয়ের ত্বিন ফলের বাগানে আমরা ১০ জন শ্রমিক কাজ করি। আগে আমরা বেকার ছিলাম, সংসার চালাতে কষ্ট হতো। বর্তমানে বাগানে দেখাশোনা করে যে বেতন পাই, তা দিয়ে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোভাবে চলতে পারছি।

নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উত্তরবঙ্গের মধ্যে প্রথম দিনাজপুরের নবাবগঞ্জেই ত্বিন ফলের চাষ করা হচ্ছে। ত্বিন ফল চাষাবাদে ভালো ফলন পেতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাগান পরিদর্শনসহ মতিউর নামের ওই কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। ত্বিন একটি অপ্রচলিত বিদেশী ফল। এটি অত্যন্ত সুস্বাদু, ঔষধি গুণাবলি সম্পন্ন। ফলটি ভবিষ্যতে যেন বাংলাদেশের সর্বত্র চাষাবাদ হয়, সেজন্য তাকে চারা তৈরির পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যে কেউ চাইলে তার কাছ থেকে চারা নিয়ে ধরনের বাগান করতে পারবেন।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫