বিদেশে টাকা পাচারকারীদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

প্রকাশ: মার্চ ০১, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশী বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান থেকে গোপনে সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিদেশী ব্যাংকে টাকা পাচারকারীদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা- জানতে চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে পানামা প্যারাডাইস পেপারসে যাদের নাম এসেছে, তাদের বিষয়ে তদন্ত করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা- জানতে চাওয়া হয়েছে।

গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশ দেন। সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান সুবীর নন্দী দাসের করা রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদেশ দেয়া হয়। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে আব্দুল কাইয়ুম খান নিজেই শুনানি করেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। আদালত আগামী ৩০ মার্চ-পরবর্তী শুনানি আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন।

রিট আবেদনে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব, অ্যাটর্নি জেনারেল, অর্থ সচিব, বাণিজ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ১৫ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। সুইস ব্যাংকে থাকা টাকার বিষয়ে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে ওই রিট আবেদন করা হয়।

রুলে অর্থ পাচারের ঘটনাগুলো তদন্তের জন্য কেন একটি আলাদা তদন্ত টিম গঠনের নির্দেশ দেয়া হবে না এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না কিংবা অর্থ ফেরত আনতে প্রয়োজনে নতুন কোনো আইন করতে বলা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

শুনানিকালে দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়, আলোচিত পানামা প্যারাডাইস পেপারসে যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। পর্যন্ত যাদের নাম এসেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন আবদুল আউয়াল মিন্টু মুসা বিন শমসের। এছাড়া সুইস ব্যাংক থেকে টাকা আনার বিষয়ে পররাষ্ট্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইমিগ্রেশন পুলিশ, বিএফআইইউসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া বিএফআইইউকে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে বলা হয়েছে। তারা সেটা করছে।

শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, কারা পাচারকারী তাদের বিষয়ে তথ্য প্রকাশে আইনগত কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ওই তালিকা শুধুই তদন্তের কাজে ব্যবহার করতে পারবে।

রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আরো বলা হয়, আদালত দ্বৈত নাগরিকের বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সংখ্যা কম-বেশি ১৪ হাজার। তবে পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তালিকা পেতে সময় প্রয়োজন।

পরে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, গত বছর ২২ নভেম্বর অর্থ পাচারকারী, দুর্বৃত্তদের বিষয়ে আদালত যে স্বপ্রণোদিত রুল জারি করেছিলেন, রিট আবেদনে একই ধরনের আরজি জানানো হয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে রুল জারির বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়েছিল। কিন্তু আদালত রুল জারি করেছেন। তবে স্বপ্রণোদিত রুল আজকে জারি করা রুলের শুনানি একসঙ্গে হবে। ৩০ মার্চ আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশে অর্থ পাচার রোধে বাংলাদেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন করা হয় ২০১২ সালে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর সেটি সংশোধন করা হয়। সেই আইন অনুযায়ী বৈধ বা অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বা সম্পত্তি নিয়মবহির্ভূতভাবে বিদেশে পাচারকে মানি লন্ডারিং অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অর্থ বা সম্পত্তি পাচার, দেশে বিদ্যমান আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে দেশের বাইরে সম্পত্তি বা অর্থ প্রেরণ বা রক্ষণ বা দেশের বাইরের যে অর্থ সম্পত্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ রয়েছে, যা বাংলাদেশে আনয়নযোগ্য ছিল কিন্তু তা আনা হতে বিরত থাকা বা বিদেশ থেকে প্রকৃত পাওনা দেশে না আনা বা বিদেশে প্রকৃত দেনার অতিরিক্ত পরিশোধ করাও অপরাধ। মানি লন্ডারিং অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন চার বছর এবং সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তকরণ সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুণ মূল্যের সমপরিমাণ বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

অর্থ পাচার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের করা এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট কনভার্টিবল না হওয়ায় আর্থিক অনিয়ম বা দুর্নীতির ক্ষেত্রে সরাসরি ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে অর্থ বিদেশে পাচার করার সুযোগ নেই। তবে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, আমদানি পণ্যের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য পরিশোধ করে, যাকে বলা হয় ওভার ইনভয়েসিং এবং রফতানি মূল্যের চেয়ে কম দেখিয়ে প্রকৃত মূল্য দেশে প্রত্যাবাসিত না করা, যাকে বলা হয় আন্ডার ইনভয়েসিং, আমদানীকৃত পণ্য দেশে না আনা বা কম আনা হুন্ডিসহ বিভিন্ন উপায়ে অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটে থাকে। এছাড়া ক্রস বর্ডার ক্যাশ স্মাগলিংয়ের মাধ্যমেও অর্থ পাচার ঘটে থাকে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫