নারায়ণগঞ্জে ৪ শ্রমিক হত্যা: ২ আসামির মৃত্যুদণ্ড, ৯ জনের যাবজ্জীবন

প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বক্তাবলীতে চার বাল্কহেড শ্রমিক হাত-পা বেঁধে গলাকেটে হত্যা মামলায় দুই আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও নয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

আজ রবিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৭ আদালতের বিচারক মোসাম্মৎ সাবিনা ইয়াসমিন সাত আসামির উপস্থিতিতে এই আদেশ দেন। এছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের প্রত্যেককে নগদ ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো এক বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাল্কহেডের দুই ফিডারম্যান (ইঞ্জিনমিস্ত্রী) তাজুল ইসলাম ও মহিউদ্দিন। মামলায় ১২ আসামির মধ্যে চারজন এখনো পলাতক রয়েছেন এবং একজন ইতিপূর্বে মারা গেছেন। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- চান মিয়া, দুলাল মিয়া, মজিবর, শফিকুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান,  আরিফ, জলিল (পলাতক), সাইফুল ইসলাম (পলাতক) ও ইব্রাহীম (পলাতক)।

মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান জানান, ২০০৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর শাহপরাণ নামের বাল্কহেড সিলেট থেকে পাথর বোঝাই করে মুন্সীগঞ্জে একটি সিমেন্ট কারখানায় যায়। সেখানে পাথর খালাসের করে ২১ সেপ্টেম্বর বাল্কহেডটি ফেরার পথে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বক্তাবলী এলাকায় ধলেশ্বরী নদীতে ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে থেমে যায়। পরে বাল্কহেডটি মেরামত করার জন্য এর চালক দুই ফিডারম্যান তাজুল ইসলাম ও মহিউদ্দিনকে ফোন করে ডেকে আনেন। মেরামত শেষে বাল্কহেডটি সচল হলে দুই ফিডারম্যান সেটি পরীক্ষা করার কথা বলে রাতে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ডাকাতদের যোগসাজশে বক্তাবলীর চরে নিয়ে থামিয়ে দেয়। ওইদিন রাতের কোন এক সময় দুই ফিডারম্যান সহযোগিদের সাথে নিয়ে চালক নাসির মিয়া, কর্মচারি মঙ্গল, ফয়সাল ও হান্নানকে হাত পা বেঁধে গলা কেটে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। পরে মেঘনা নদী থেকে হাত পা বাঁধা ও গলাকাটা অবস্থায় নাসির এবং মঙ্গলের মরদেহ উদ্ধার হলেও ফয়সাল ও হান্নান নামের অপর দুই শ্রমিক নিখোঁজ থাকেন। পরে বাল্কহেডটি বক্তাবলীর চর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পুলিশ জব্দ করে।  

এ ঘটনার পরদিন ২০০৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বাল্কহেডটির মালিক এরশাদ মিয়া ফতুল্লা থানায় বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে পুলিশ দুই ফিডারম্যান তাজুল ইসলাম ও মহিউদ্দিনসহ সাত আসামিকে গ্রেফতার করে। পরে আসামিরা হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে ও দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করে। মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা ফতুল্লা থানার উপ-পরিদর্শক বদরুল আলম আসামিদের জবানবন্দির ভিত্তিতে ২০০৯ সালের ২৬ মার্চ ১২ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান জানান, আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ময়নাতদন্তকারী ডাক্তারসহ মোট ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রদান করেন। আদালত যুক্তিতর্ক ও ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এই রায় প্রদান করেন। তিনি রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, উচ্চ আদালতের মাধ্যমে রায় কার্যকর দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান।

অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কার্তিক চন্দ্র দাস রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আসামিরা ন্যায় বিচার পায়নি। আমরা ন্যায়বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করবো। তিনি বলেন, আদালত আসামিদের ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দির উপর নির্ভর করে এই রায় প্রদান করেছেন। আশা করি উচ্চ আদালতে আমরা ন্যায় বিচার পাবো।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫