বেজাকে পরিবেশ অধিদপ্তরের চিঠি

ইজেডের অনুমতির আগে কৌশলগত পরিবেশ মূল্যায়ন করতে হবে

প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমতি দেয়ার আগে কৌশলগত পরিবেশ মূল্যায়ন করতে হবে জানিয়ে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটির (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। সংসদীয় কমিটির একটি সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ধরনের উদ্যোগের কথা জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে পরিবেশ, বন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাটি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, গত বছরের ২৯ নভেম্বর পরিবেশ, বন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কোন জায়গাকে অর্থনৈতিক জোন হিসেবে অনুমতি প্রদানের আগে স্ট্র্যাটেজিক এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসেসমেন্ট করে নেয়ার সুপারিশ করা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই সুপারিশটি বিবেচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়ে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। চিঠিটি গত ডিসেম্বরের শেষদিকে পাঠানো হয় বলে পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে।

জানা গেছে, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীতে হালদা নদীর পানি সরবরাহ বিষয়ে আলোচনা হয়। সেই আলোচনায় সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি মিরসরাই শিল্পনগরী তৈরির পরিকল্পনার সময় পরিবেশগত বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া হয়েছিল কিনা তা জানতে চান। এর জবাবে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক একেএম রফিক আহাম্মদ জানান, বেজার সামগ্রিকভাবে ইআইএ করার বাধ্যবাধকতা নেই। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আলাদাভাবে ইআইএ করতে হয়।

সূত্রমতে, পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বেজার ইআইএ করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্তির জন্য বলা হচ্ছে। ভবিষ্যতে ১০০টি ইকোনমিক জোন করার ক্ষেত্রে পরিবেশগত সমস্যা তৈরি হতে পারে। ইআইএতে বিকল্প প্রস্তাব দেখানোর জন্য বলা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সভাপতি জানান, আমরা চাই ইকোনমিক জোন হোক, কর্মসংস্থানের আরো সুযোগ হোক। আমরা চাই অর্থনীতি আরো এগিয়ে যাক। তবে কোনো জায়গাকে অর্থনৈতিক জোন হিসেবে অনুমতির আগে তারা যেন স্ট্র্যাটেজিক এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসেসমেন্ট করে নেয়।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন, ২০১০-এর ক্ষমতাবলে বেজা প্রতিষ্ঠা করে সরকার। ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বেজা। বেজা গভর্নিং বোর্ড এরই মধ্যে ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান নির্ধারণ জমির পরিমাণ অনুমোদন করেছে, এর মধ্যে সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল ৬৮টি এবং বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল ২৯টি। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে দুটি, জিটুজি অর্থনৈতিক অঞ্চল চারটি এবং ট্যুরিজম পার্ক রয়েছে তিনটি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর-মহেশখালী-শ্রীহট্ট-জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক পাঁচ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৭২ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে সর্বমোট হাজার ৩১৫ একর জমি ইজারা প্রদানে নির্বাচন করা হয়েছে। এসব জমিতে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২৩ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া প্রায় দশমিক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয়। ফলে সর্বমোট বিনিয়োগের প্রস্তাবের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক শূন্য বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রস্তাবিত বিনিয়োগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখ লোকের সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, বেজা যখন ইকোনমিক জোনের লোকেশন ঠিক করবে, তখন যেন স্ট্র্যাটেজিক এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসেসমেন্ট করে নেয়। এটি করা হলে অর্থনৈতিকভাবে টেকসই হবে। জোনের স্থায়িত্বও থাকবে। দূষণকে কমিয়ে একটি নির্ধারিত মাত্রায় আনার জন্যই ইকোনমিক জোন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিবেশগত সুরক্ষার বিষয়ে বেজা বলছে, তারা পরিকল্পিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা শিল্পায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। আইন অনুযায়ী অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে শহর এবং পৌর এলাকা ব্যতীত অন্যান্য এলাকায়। অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মূলত অনাবাদি এবং পতিত সরকারি খাস জমিকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব রোধে প্রতিটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিকল্পিত উপায়ে গ্রিন বেল্ট, সিইটিপি, এসটিপি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণাগার অন্যান্য কেন্দ্রীয় পরিবেশ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাপনা তৈরির উদ্যোগ রয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের আগে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক পরিবেশসংক্রান্ত ছাড়পত্র গ্রহণের বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। লক্ষ্যে বেজা অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে এবং পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক যথাযথভাবে অনুমোদন গ্রহণ করা হয়েছে। যত্রতত্র শিল্প-কারখানা স্থাপন নিরুৎসাহিতকরণ এবং পরিবেশ দূষণ রোধ করা বেজার মূল উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫